ড্যানিয়েল গাওয়ার্ডের অভিজ্ঞতা
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার উইলিয়ামস লেকের বাসিন্দা ড্যানিয়েল গাওয়ার্ড কয়েক মাস আগে জানতে পারেন, তার যমজ কন্যাশিশুর জন্ম স্থানীয় হাসপাতালে সম্ভব হবে না। চিকিৎসকরা জানান, তার ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার জন্য উন্নত সেবা প্রয়োজন। তিনি ও তার স্বামী ধরে নিয়েছিলেন, প্রয়োজনে কামলুপস বা ভ্যাঙ্কুভারে যেতে হবে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। মাত্র ১২ দিনে গাওয়ার্ডকে উইলিয়ামস লেক, কেলোনা, প্রিন্স জর্জ ও কামলুপস—চারটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তিনবার উড়োজাহাজে ভ্রমণ করতে হয় তাকে। প্রথমবারের মা হওয়া গাওয়ার্ড একে অভিহিত করেছেন “ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা” হিসেবে।
চিকিৎসক সংকটে ভোগান্তি
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় প্রসূতিবিদ (OB/GYN) ও মাতৃত্বসেবা প্রদানকারী চিকিৎসকের ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অনেক রোগীকে সন্তান জন্মদানের জন্য শত শত কিলোমিটার দূরে যেতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা অতিরিক্ত শিফটে কাজ করছেন, কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।
বিশেষত উত্তর ও অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে সংকট তীব্র। প্রিন্স জর্জের ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল অফ নর্দার্ন বি.সি.-তে জুলাই মাসে সংকট চরমে ওঠে। তখন বাইরে থেকে আনা চিকিৎসকরা শূন্যতা পূরণ করেন। একেকজনকে ২৪ ঘণ্টার শিফটে ন্যূনতম ৪,২৫০ ডলার সম্মানী দেওয়া হয়, সঙ্গে ফ্লাইট ও হোটেল খরচ। কামলুপসের রয়্যাল ইনল্যান্ড হাসপাতালেও সংকট তৈরি হলে বাইরের চিকিৎসকের সহায়তায় সাময়িক সমাধান হয়।
প্রভাবিত সেবাসমূহ
এই সংকটের কারণে অন্যান্য বিভাগেও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কেলোনা জেনারেল হাসপাতালের ইনপেশেন্ট শিশু বিভাগ মে মাসে ছয় সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখা হয়। ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি শিশু সেবা ক্লিনিক সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে বন্ধ রয়েছে।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে থম্পসন রিজিওনের ফ্যামিলি অবস্টেট্রিক্স গ্রুপ নতুন রোগী নেওয়া বন্ধ করে দেয়, কারণ চিকিৎসকদের ডেলিভারির দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়।
রোগী ও পরিবারের অনিশ্চয়তা
বি.সি. সোসাইটি অব অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজির সহ-সভাপতি চেলসি এলউড বলেন, “গর্ভাবস্থার মতো সংবেদনশীল সময়ে এই অনিশ্চয়তা রোগীদের জন্য প্রচণ্ড চাপ তৈরি করছে। মানসিক উদ্বেগ তো আছেই, সঙ্গে আছে অর্থনৈতিক চাপও।”
কেবল ব্রিটিশ কলাম্বিয়া নয়, কানাডার অন্যান্য প্রদেশেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। অন্টারিওর কাপুসকাসিং এলাকার একমাত্র হাসপাতাল সেনসেনব্রেনারে মাত্র দুইজন প্রসূতি চিকিৎসক রয়েছেন। আলবার্টার লেথব্রিজে ২০২২–২৩ সালে মাতৃত্বসেবা প্রায় ভেঙে পড়েছিল।
সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩৩ সাল পর্যন্ত কানাডা জুড়েই কর্মী সংকটের ঝুঁকি প্রবল থাকবে।
গাওয়ার্ডের যাত্রাপথ
২০ মে ড্যানিয়েল গাওয়ার্ড আগাম প্রসব বেদনায় আক্রান্ত হলে তাকে প্রথমে উইলিয়ামস লেক থেকে কেলোনায় পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানকার ব্যস্ততা ও সংকটের কারণে দুই দিন পর আবার প্রিন্স জর্জে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি সিজারিয়ান অপারেশনে তার যমজ সন্তানের জন্ম হয়। ৩২ সপ্তাহে জন্ম নেওয়া শিশুরা নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি হয়।
কয়েক দিন পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থান সংকুলান না হওয়ায় তাকে কামলুপসে পাঠায়। গাওয়ার্ড বলেন, ওষুধের প্রভাবে তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং বারবার স্থানান্তর তাকে ভেঙে দেয়। স্বামী চান্স টোবিন আলাদাভাবে গাড়ি চালিয়ে প্রতিটি হাসপাতালে যাতায়াত করেন, যেন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বহন করা যায়।
চিকিৎসক সংকটের কারণ
চিকিৎসকেরা বলছেন, অনবরত ডিউটি, অনিশ্চিত সময়সূচি, উচ্চ ঝুঁকি ও ভারী বীমা খরচ এই সংকটের মূল কারণ। এছাড়া বাড়তি জটিলতাও বেড়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বি.সি.-তে এক-তৃতীয়াংশ প্রসব ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারীর, আর ৩৫ শতাংশ মায়েদের ওজন বেশি। ফলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া ও দীর্ঘায়িত প্রসবের ঝুঁকি বেড়েছে।
২০২৩–২৪ সালে প্রদেশে ৪১,০৮৮ প্রসবের মধ্যে ৫৭ শতাংশ প্রসব প্রসূতিবিদদের দায়িত্বে ছিল, ২৬ শতাংশ ফ্যামিলি ডাক্তার এবং ১৬ শতাংশ ধাত্রী সম্পন্ন করেন। তবে অঞ্চলভেদে চিকিৎসকের সংখ্যা খুব অসম। যেমন, ভ্যাঙ্কুভারে প্রতি এক লাখে ১৫.৯ জন OB/GYN থাকলেও উত্তর-পূর্বে সংখ্যা মাত্র ২.৮৭।
আর্থিক কাঠামোর সীমাবদ্ধতা
বর্তমান ফি-ভিত্তিক মডেলও সংকট বাড়াচ্ছে। প্রসব পরিচালনার জন্য ধাত্রী পূর্ণ অর্থ পান, কিন্তু সহায়তাকারী প্রসূতিবিদ তুলনামূলক কম অর্থ পান। এছাড়া নারী চিকিৎসকেরা গড়ে পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে কম আয় করেন। ফলে এই পেশায় আগ্রহ কমছে।
সরকারি পদক্ষেপ
বি.সি. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে যে সংকট গুরুতর। তারা ‘হেলথ হিউম্যান রিসোর্সেস স্ট্রাটেজি’ গ্রহণ করেছে। এর আওতায় পরিবার চিকিৎসকদের জন্য সময় ও জটিলতার ভিত্তিতে নতুন পেমেন্ট মডেল চালু হয়েছে। ধাত্রীদেরও বিকল্প মডেল প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে OB/GYNদের জন্য বিকল্প সীমিত।
পরিবারগুলোর বোঝা
গাওয়ার্ড বলেন, স্বামীর চাকরির কারণে তাদের যাতায়াতের খরচ সামলানো সম্ভব হয়েছে। এছাড়া তার মা পরামর্শ দিয়েছিলেন ফার্স্ট নেশনস হেলথ অথরিটির সহায়তা নিতে, যেখান থেকে কিছু খরচ ফেরত পাওয়া গেছে।
তিনি যোগ করেন, “সব পরিবারের কাছে এই সহায়তা থাকে না। ফলে তাদের জন্য চাপ আরও বেশি।”
“এটা ছিল আমাদের প্রথম গর্ভাবস্থা। সবকিছু ছিল নতুন, ভীতিকর আর অনিশ্চিত। পুরো অভিজ্ঞতা ছিল অবিশ্বাস্য রকম কঠিন।”