শবনম ফারিয়া বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তিনি ২১ জানুয়ারি ১৯৯০ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তার মধ্যে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি গভীর আকর্ষণ ছিল। ছোটবেলায় নাচ ও আবৃত্তির প্রতি বিশেষ ঝোঁক থাকলেও পরবর্তীতে অভিনয়ই হয়ে ওঠে তার জীবনের মূল পরিচয়। পরিবারের কাছ থেকে প্রাপ্ত সমর্থন ও উৎসাহ তাকে ধীরে ধীরে সাংস্কৃতিক জগতে যুক্ত করে।
শিক্ষা জীবন
শবনম ফারিয়া ঢাকা শহরের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর তিনি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নাচ, আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও নাট্যচর্চার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। এই অভিজ্ঞতাগুলো পরবর্তীতে তার অভিনয় ক্যারিয়ারকে মজবুত ভিত্তি দেয়।
মিডিয়ায় অভিষেক ও ক্যারিয়ারের শুরু
শবনম ফারিয়া প্রথমে বিজ্ঞাপনচিত্রের মাধ্যমে মিডিয়ায় প্রবেশ করেন। তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও স্বাভাবিক অভিনয় দ্রুতই দর্শক-সমালোচকদের নজর কাড়ে। এরপর ২০১৩ সালে তিনি টেলিভিশন নাটক অপুর গল্প–এ অভিনয় করেন, যা তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এই নাটকের পর তিনি একের পর এক টেলিভিশন নাটক, টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিকে অভিনয় করতে থাকেন।
জনপ্রিয় নাটকসমূহ
শবনম ফারিয়া অভিনয় করেছেন অসংখ্য সফল নাটকে। এর মধ্যে কয়েকটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—
- • অপুর গল্প:এই নাটক দিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। একটি সাধারণ মেয়ের স্বপ্ন ও সংগ্রামের গল্পে তার অভিনয় দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
- • তুমি আসবে বলে:প্রেম, প্রতীক্ষা ও মানসিক টানাপোড়েনকে ঘিরে নির্মিত এই নাটকে তার আবেগঘন অভিনয় ছিল উল্লেখযোগ্য।
- • ছুটির দিনে:কৌতুকধর্মী কাহিনির এই নাটকে তিনি প্রাণবন্ত চরিত্র ফুটিয়ে তুলেন।
- • একদিন হঠাৎ:পারিবারিক সংকট ও অপ্রত্যাশিত ঘটনার আবহে তিনি পরিণত অভিনয়ের প্রমাণ দেন।
- • ভালোবাসার গল্প:প্রেমে পড়া এক তরুণীর সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হওয়ার কাহিনিতে তার অভিনয় ছিল দর্শকপ্রিয়।
চলচ্চিত্রে অভিষেক ও সাফল্য
২০১৮ সালে শবনম ফারিয়া বড় পর্দায় অভিষেক করেন রেদওয়ান রনির পরিচালিত চলচ্চিত্র দেবী–তে। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে তিনি নীলু চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চরিত্রে তার স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় এবং তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে সম্মানিত হন।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
শবনম ফারিয়া ইতিমধ্যে একাধিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
- • জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার(২০১৮, দেবী)
- • মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন
- • অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অভিনয় জীবনের স্বীকৃতি
এসব পুরস্কার প্রমাণ করে, তিনি শুধু টেলিভিশন নাটকেই নয়, চলচ্চিত্রেও দক্ষতার ছাপ রেখেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
শবনম ফারিয়ার ব্যক্তিগত জীবনও বেশ আলোচিত। ২০১৮ সালে তিনি ব্যবসায়ী হারুনুর রশীদ অপুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে কয়েক বছর পর তাদের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ঢাকার মাদানী অ্যাভিনিউয়ের আল মুস্তফা মসজিদে সরল ও ঘনিষ্ঠ একটি নিকাহ অনুষ্ঠানে তিনি তানজিম তায়েবকে বিয়ে করেন। তায়েব রাজশাহী থেকে আসা একজন শিক্ষিত পেশাজীবী, যিনি অস্ট্রেলিয়ার University of South Wales থেকে Financial Engineering–এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং বর্তমানে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকে Assistant Vice President হিসেবে কর্মরত। ফারিয়া বিয়ে নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানান, এটি তার জীবনের নতুন অধ্যায় এবং ভবিষ্যতে একটি রিসেপশন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও জনপ্রিয়তা
শবনম ফারিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক জনপ্রিয়। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তিনি সক্রিয় থাকেন, নিয়মিত নিজের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ ও অভিনয়জীবনের আপডেট শেয়ার করেন। তার ফ্যাশন সেন্স ও খোলামেলা ব্যক্তিত্ব তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে ধরা হয়।
সামাজিক কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গি
অভিনয়ের বাইরে শবনম ফারিয়া সমাজ সচেতন কর্মকাণ্ডেও জড়িত। নারী অধিকার, স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং সামাজিক সংস্কারমূলক কাজে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তার খোলামেলা মতামত, আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি ও দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগায়।
শবনম ফারিয়া একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রী, যিনি নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন—সব ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েও তিনি নিজের ক্যারিয়ার ধরে রেখেছেন দৃঢ়ভাবে। তার কাজ, ব্যক্তিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করে যে, তিনি কেবল একজন অভিনেত্রীই নন, বরং তরুণ সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণামূলক চরিত্র।