সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভায় এক হাজারেরও বেশি শিশু স্কুলে বিতরণ করা বিনামূল্যে দুপুরের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এই ঘটনা প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্
ঘটনাটি এক সপ্তাহ আগে পশ্চিম জাভা ও মধ্য সুলাওয়েসি প্রদেশে একই ধরনের খাবার বিষক্রিয়ার পর ঘটল। সেখানে অন্তত ৮০০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছিল।
এনজিওদের সতর্কবার্তা ও স্থগিতের দাবি
২৫ সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক গভর্নর দেদি মুলিয়াদি জানান, পশ্চিম জাভার অন্তত চারটি এলাকায় এ বিষক্রিয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
কর্মসূচির ব্যাপকতা ও বাজেট
প্রেসিডেন্ট প্রাবোও’র স্বাক্ষরিত এই কর্মসূচি ইতিমধ্যেই ২ কোটি মানুষকে পৌঁছেছে। লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৮ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা। এর জন্য ১৭১ ট্রিলিয়ন রুপিয়াহ (প্রায় ১৩ বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার) বরাদ্দ করা হয়েছে, যা ২০২৬ সালে দ্বিগুণ হবে।
অসুস্থতার বিস্তার
২২ সেপ্টেম্বর পশ্চিম বানডুংয়ে ৪৭০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় এবং সুকাবুমি অঞ্চলে আরও অন্তত ৫৮০ জন শিশু খাবার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
গভর্নর মুলিয়াদি বলেন, “আমাদের এই কর্মসূচি পরিচালনার পদ্ধতি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে যে আঘাত পাচ্ছে, তা সামলানোও জরুরি।” তিনি আরও জানান, ছোট ছোট হাসপাতালগুলো শিক্ষার্থীদের ভিড়ে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ
জাতীয় পুষ্টি সংস্থার প্রধান ডঃ দাদান হিন্দায়ানা জানান, যেসব রান্নাঘর থেকে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের বাইরের দৃশ্য
স্থানীয় টিভি চ্যানেল কমপাস টিভি দেখিয়েছে যে ক্রীড়া হলকে অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সেখানে ভাঁজ করা খাটে অসংখ্য শিশু শুয়ে আছে; অনেকে মেঝেতে কষ্টে কাতরাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালের বাইরে এবং অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেও চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা
লিসা বিলা জাহারা নামের ১৫ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর স্কুলে পরিবেশিত মুরগি ও সয়া সসে রান্না করা তোফু খাওয়ার পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “প্রায় আধঘণ্টা পর মাথাব্যথা ও বমিভাব শুরু হয়।”
পূর্বের রেকর্ড
একটি গবেষণা সংস্থা ‘নেটওয়ার্ক ফর এডুকেশন ওয়াচ’ এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই সপ্তাহ পর্যন্ত অন্তত ৬ হাজার ৪৫২ শিশু এ কর্মসূচির খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়েছে।
সমস্যার কারণ
গভর্নর মুলিয়াদি জানান, রান্নাঘরগুলোতে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীর খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছিল। অনেক রান্নাঘর স্কুল থেকে দূরে থাকায় রান্না ভোরে বা আগের রাতে শুরু করতে হয়েছে। ফলে গরম খাবার ঢেকে রাখায় তা দ্রুত নষ্ট হয়ে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
রান্নাঘরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বক্তব্য
একটি রান্নাঘরের প্রধান ইকবাল মৌলানা বলেন, “আমরা মানসম্মত প্রক্রিয়া মেনে রান্না করি।” তবে এ ঘটনার পর পশ্চিম বানডুং অঞ্চলে স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার। ফলে প্রাদেশিক সরকার বাজেট বরাদ্দ করে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবেলার উদ্যোগ নিতে পারছে।
এই ধারাবাহিক খাদ্যবিষক্রিয়ার ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার বৃহৎ এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে আরও কড়া নজরদারি ও মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন।