০২:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
চীনের সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্য ঘাটতি নতুন উচ্চতার পথে, সতর্ক করছেন বিশ্লেষকেরা প্রাকযুদ্ধের বিএমডব্লিউ ক্যাব্রিওলেট পেবল বিচে গৌরব, ইতিহাসের গাড়িতে মঞ্চ জয় বয়স্কদের ওষুধের অতিভার: একসঙ্গে আটটির বেশি ওষুধে বাড়ছে মাথাঘুরে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছুটিতে পরিবারের প্রযুক্তি ঝামেলা কমানোর সহজ কৌশল চীনের প্রযুক্তি উত্থান, অর্থনীতির ভেতরে গভীর ফাটল বাংলাদেশ ব্যাংকে অগ্নি নিরাপত্তা জোরদার, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবিগঞ্জের মাধবপুরে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ নতুন ড্রোন মডেলে নিষেধাজ্ঞা আরও কড়াকড়ি যুক্তরাষ্ট্রে, তালিকায় ডিজেআইসহ সব বিদেশি ড্রোন জবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন: নারী-বান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে জেসিডির ১৩ দফা ইশতেহার ক্রীড়াপ্রেমী প্রকৌশলী মাসুদ হাসান জামালীর ইন্তেকাল

কালো ডোরাকাটা সাপ: বাংলাদেশ সহ এশিয়ার এক বিষ্ময়কর সাপ

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার বনাঞ্চলে নানা প্রজাতির সাপের বসবাস। তাদের মধ্যে একটি বিশেষ দৃষ্টি কেড়ে নেয়—কালো ডোরাকাটা সাপ। নামের মতোই এই সাপের গায়ে সাদা বা হালকা রঙের উপর গাঢ় কালো ডোরা-ডোরা দাগ রয়েছে। অনেক সময় দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন কেউ শিল্পকর্ম এঁকে রেখেছে। সরীসৃপ জগতে এই সাপ শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বৈচিত্র্যময় জীবনধারা ও প্রকৃতিতে তার অবদানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।


বৈজ্ঞানিক পরিচিতি

কালো ডোরাকাটা সাপকে ইংরেজিতে বলা হয় Black Banded Snake। বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী এটি Colubridae পরিবারভুক্ত। তবে অঞ্চলভেদে এর ভিন্ন ভিন্ন উপপ্রজাতি পাওয়া যায়। দেহ সাধারণত মাঝারি আকারের—৫০ সেন্টিমিটার থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মাথা কিছুটা ত্রিভুজাকৃতি, গায়ের আঁশ মসৃণ এবং চকচকে।

রঙের ধরণই এদের মূল পরিচয়। দেহের পুরোটা জুড়ে গাঢ় কালো রঙের ডোরা এবং মাঝে সাদা, হলুদ বা ধূসর ব্যান্ড থাকে। প্রতিটি ব্যান্ড সমান দূরত্বে বিন্যস্ত থাকে বলে সহজেই চেনা যায়।

বিস্তার ও আবাসস্থল

এই সাপ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তার রয়েছে। বাংলাদেশে মূলত চট্টগ্রাম, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সুন্দরবনের কিছু অংশে এর দেখা মেলে।

আবাসস্থল হিসেবে এরা বেছে নেয় ঘন বন, পাহাড়ি ঝোপঝাড়, বাঁশঝাড়, নদী ও খালপাড়ের স্যাঁতসেঁতে অঞ্চল। গর্ত, ফাঁপা গাছ কিংবা বড় পাথরের নিচে আশ্রয় নেয়। নিশাচর হওয়ায় দিনে খুব একটা চোখে পড়ে না। রাতে শিকার খুঁজতে বের হয়।

শারীরিক গঠন ও অভিযোজন

কালো ডোরাকাটা সাপের শরীর নমনীয় ও পেশিবহুল। এর ফলে গাছে ওঠা, ঝোপঝাড়ে চলাচল করা কিংবা পানিতে সাঁতার কাটা খুব সহজ হয়। দাঁত ছোট কিন্তু তীক্ষ্ণ, যাতে শিকার আঁকড়ে ধরতে সুবিধা হয়।

চোখ তুলনামূলক ছোট হলেও আলো কম থাকলেও নড়াচড়া বুঝতে পারে। জিভ ব্যবহার করে চারপাশের গন্ধ শনাক্ত করে। গায়ের রঙের ডোরা শুধু সৌন্দর্য নয়, প্রকৃতিতে ছদ্মবেশ হিসেবেও কাজ করে। শিকারি প্রাণী সহজে চিনতে পারে না।


খাদ্যাভ্যাস

এদের খাদ্যাভ্যাস বৈচিত্র্যময়। মূলত ব্যাঙ, গিরগিটি, ছোট মাছ, পাখির ছানা এবং ইঁদুর খায়। কখনো ছোট আকারের সাপও শিকার করে। শিকার করার কৌশল হলো হঠাৎ আক্রমণ—শিকারকে কামড় দিয়ে অচল করে ফেলা এবং ধীরে ধীরে গিলে ফেলা।

প্রকৃতিতে এরা ক্ষতিকর ইঁদুর ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এজন্য কৃষিজীবী অঞ্চলের পরিবেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।


প্রজনন ও জীবনচক্র

কালো ডোরাকাটা সাপ ডিম পেড়ে বংশবিস্তার করে। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে প্রজননকাল। স্ত্রী সাপ একবারে ৬ থেকে ১২টি ডিম পাড়ে। ডিমের খোলস পাতলা চামড়ার মতো।

ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ দিন। সদ্যজাত বাচ্চার গায়েও কালো ডোরা স্পষ্ট দেখা যায়। বাচ্চারা জন্মের পর থেকেই স্বনির্ভর এবং নিজের শিকার নিজেরাই খুঁজে নেয়।

বিষের প্রকৃতি ও মানুষের উপর প্রভাব

কালো ডোরাকাটা সাপ বিষধর হলেও সাধারণত মানুষের জন্য মারাত্মক নয়। এদের বিষ ছোট প্রাণীদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত করার মতো কার্যকর। মানুষের শরীরে কামড় দিলে ব্যথা, ফোলা, মাথা ঘোরা বা জ্বর হতে পারে। তবে প্রাণঘাতী ঘটনা বিরল।

গ্রামীণ এলাকায় প্রায়ই ভয় বা অজ্ঞতার কারণে মানুষ এদের মেরে ফেলে। অথচ প্রকৃত সত্য হলো—এরা খুব কম ক্ষেত্রেই মানুষের উপর আক্রমণ চালায়। সাধারণত আত্মরক্ষার জন্যই কামড়ায়।


পরিবেশগত ভূমিকা

প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খলে কালো ডোরাকাটা সাপের ভূমিকা অপরিসীম। এটি ক্ষতিকর ইঁদুর ও উভচর প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে। একই সঙ্গে এরা বড় আকারের শিকারি পাখি বা স্তন্যপায়ী প্রাণীর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

যদি এদের সংখ্যা কমে যায়, তাহলে ইঁদুর বা ব্যাঙের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।


মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও জনশ্রুতি

গ্রামীণ সমাজে সাপ নিয়ে বহু কুসংস্কার রয়েছে। কালো ডোরাকাটা সাপ দেখলেই অনেকে ধরে নেয় এটি মারাত্মক বিষধর এবং অবলীলায় মেরে ফেলে। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করে, বাড়ির আশেপাশে এ সাপ দেখা মানে অশুভ।

অন্যদিকে কিছু অঞ্চলে বিশ্বাস রয়েছে যে এ সাপ বাড়িতে থাকলে ইঁদুর কমে যায়, ফলে ধান বা শস্য সুরক্ষিত থাকে। তাই একে মেরে ফেলা উচিত নয়।

সংরক্ষণ পরিস্থিতি

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কালো ডোরাকাটা সাপ এখনো বিপন্ন তালিকায় নেই। তবে বনভূমি ধ্বংস, নদী ও জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়া, এবং নির্বিচারে হত্যার কারণে এদের সংখ্যা ক্রমে কমছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে এদের আবাসস্থল ঝুঁকির মুখে।

সাপকে নিয়ে অযথা ভয় ও কুসংস্কার দূর করা, প্রকৃতি সংরক্ষণ করা এবং মানুষকে সচেতন করা জরুরি। নাহলে ভবিষ্যতে এ প্রজাতি বিরল হয়ে পড়তে পারে।


গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ সাপের বিষে এমন কিছু উপাদান আছে যা ভবিষ্যতে ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগতে পারে। বিশেষ করে স্নায়ুজনিত রোগের চিকিৎসায় এর বিষ থেকে উপাদান ব্যবহার করা সম্ভব। ইতোমধ্যেই কিছু প্রাথমিক গবেষণা চলছে।

এছাড়া এদের প্রজনন, আচরণ ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে গবেষণা জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে।

কালো ডোরাকাটা সাপ প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। এটি শুধু সৌন্দর্য নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মানুষের ভয় ও অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় এরা অকারণে মারা পড়ে। অথচ প্রকৃতি রক্ষায় এদের অস্তিত্ব অপরিহার্য।

তাই আমাদের উচিত সাপ নিয়ে ভয় না ছড়িয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা করা এবং গবেষণায় মনোযোগী হওয়া। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও কালো ডোরাকাটা সাপকে প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ হিসেবে দেখতে পাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্য ঘাটতি নতুন উচ্চতার পথে, সতর্ক করছেন বিশ্লেষকেরা

কালো ডোরাকাটা সাপ: বাংলাদেশ সহ এশিয়ার এক বিষ্ময়কর সাপ

১০:০০:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার বনাঞ্চলে নানা প্রজাতির সাপের বসবাস। তাদের মধ্যে একটি বিশেষ দৃষ্টি কেড়ে নেয়—কালো ডোরাকাটা সাপ। নামের মতোই এই সাপের গায়ে সাদা বা হালকা রঙের উপর গাঢ় কালো ডোরা-ডোরা দাগ রয়েছে। অনেক সময় দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন কেউ শিল্পকর্ম এঁকে রেখেছে। সরীসৃপ জগতে এই সাপ শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বৈচিত্র্যময় জীবনধারা ও প্রকৃতিতে তার অবদানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।


বৈজ্ঞানিক পরিচিতি

কালো ডোরাকাটা সাপকে ইংরেজিতে বলা হয় Black Banded Snake। বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী এটি Colubridae পরিবারভুক্ত। তবে অঞ্চলভেদে এর ভিন্ন ভিন্ন উপপ্রজাতি পাওয়া যায়। দেহ সাধারণত মাঝারি আকারের—৫০ সেন্টিমিটার থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মাথা কিছুটা ত্রিভুজাকৃতি, গায়ের আঁশ মসৃণ এবং চকচকে।

রঙের ধরণই এদের মূল পরিচয়। দেহের পুরোটা জুড়ে গাঢ় কালো রঙের ডোরা এবং মাঝে সাদা, হলুদ বা ধূসর ব্যান্ড থাকে। প্রতিটি ব্যান্ড সমান দূরত্বে বিন্যস্ত থাকে বলে সহজেই চেনা যায়।

বিস্তার ও আবাসস্থল

এই সাপ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তার রয়েছে। বাংলাদেশে মূলত চট্টগ্রাম, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সুন্দরবনের কিছু অংশে এর দেখা মেলে।

আবাসস্থল হিসেবে এরা বেছে নেয় ঘন বন, পাহাড়ি ঝোপঝাড়, বাঁশঝাড়, নদী ও খালপাড়ের স্যাঁতসেঁতে অঞ্চল। গর্ত, ফাঁপা গাছ কিংবা বড় পাথরের নিচে আশ্রয় নেয়। নিশাচর হওয়ায় দিনে খুব একটা চোখে পড়ে না। রাতে শিকার খুঁজতে বের হয়।

শারীরিক গঠন ও অভিযোজন

কালো ডোরাকাটা সাপের শরীর নমনীয় ও পেশিবহুল। এর ফলে গাছে ওঠা, ঝোপঝাড়ে চলাচল করা কিংবা পানিতে সাঁতার কাটা খুব সহজ হয়। দাঁত ছোট কিন্তু তীক্ষ্ণ, যাতে শিকার আঁকড়ে ধরতে সুবিধা হয়।

চোখ তুলনামূলক ছোট হলেও আলো কম থাকলেও নড়াচড়া বুঝতে পারে। জিভ ব্যবহার করে চারপাশের গন্ধ শনাক্ত করে। গায়ের রঙের ডোরা শুধু সৌন্দর্য নয়, প্রকৃতিতে ছদ্মবেশ হিসেবেও কাজ করে। শিকারি প্রাণী সহজে চিনতে পারে না।


খাদ্যাভ্যাস

এদের খাদ্যাভ্যাস বৈচিত্র্যময়। মূলত ব্যাঙ, গিরগিটি, ছোট মাছ, পাখির ছানা এবং ইঁদুর খায়। কখনো ছোট আকারের সাপও শিকার করে। শিকার করার কৌশল হলো হঠাৎ আক্রমণ—শিকারকে কামড় দিয়ে অচল করে ফেলা এবং ধীরে ধীরে গিলে ফেলা।

প্রকৃতিতে এরা ক্ষতিকর ইঁদুর ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এজন্য কৃষিজীবী অঞ্চলের পরিবেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।


প্রজনন ও জীবনচক্র

কালো ডোরাকাটা সাপ ডিম পেড়ে বংশবিস্তার করে। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে প্রজননকাল। স্ত্রী সাপ একবারে ৬ থেকে ১২টি ডিম পাড়ে। ডিমের খোলস পাতলা চামড়ার মতো।

ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ দিন। সদ্যজাত বাচ্চার গায়েও কালো ডোরা স্পষ্ট দেখা যায়। বাচ্চারা জন্মের পর থেকেই স্বনির্ভর এবং নিজের শিকার নিজেরাই খুঁজে নেয়।

বিষের প্রকৃতি ও মানুষের উপর প্রভাব

কালো ডোরাকাটা সাপ বিষধর হলেও সাধারণত মানুষের জন্য মারাত্মক নয়। এদের বিষ ছোট প্রাণীদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত করার মতো কার্যকর। মানুষের শরীরে কামড় দিলে ব্যথা, ফোলা, মাথা ঘোরা বা জ্বর হতে পারে। তবে প্রাণঘাতী ঘটনা বিরল।

গ্রামীণ এলাকায় প্রায়ই ভয় বা অজ্ঞতার কারণে মানুষ এদের মেরে ফেলে। অথচ প্রকৃত সত্য হলো—এরা খুব কম ক্ষেত্রেই মানুষের উপর আক্রমণ চালায়। সাধারণত আত্মরক্ষার জন্যই কামড়ায়।


পরিবেশগত ভূমিকা

প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খলে কালো ডোরাকাটা সাপের ভূমিকা অপরিসীম। এটি ক্ষতিকর ইঁদুর ও উভচর প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে। একই সঙ্গে এরা বড় আকারের শিকারি পাখি বা স্তন্যপায়ী প্রাণীর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

যদি এদের সংখ্যা কমে যায়, তাহলে ইঁদুর বা ব্যাঙের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।


মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও জনশ্রুতি

গ্রামীণ সমাজে সাপ নিয়ে বহু কুসংস্কার রয়েছে। কালো ডোরাকাটা সাপ দেখলেই অনেকে ধরে নেয় এটি মারাত্মক বিষধর এবং অবলীলায় মেরে ফেলে। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করে, বাড়ির আশেপাশে এ সাপ দেখা মানে অশুভ।

অন্যদিকে কিছু অঞ্চলে বিশ্বাস রয়েছে যে এ সাপ বাড়িতে থাকলে ইঁদুর কমে যায়, ফলে ধান বা শস্য সুরক্ষিত থাকে। তাই একে মেরে ফেলা উচিত নয়।

সংরক্ষণ পরিস্থিতি

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কালো ডোরাকাটা সাপ এখনো বিপন্ন তালিকায় নেই। তবে বনভূমি ধ্বংস, নদী ও জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়া, এবং নির্বিচারে হত্যার কারণে এদের সংখ্যা ক্রমে কমছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে এদের আবাসস্থল ঝুঁকির মুখে।

সাপকে নিয়ে অযথা ভয় ও কুসংস্কার দূর করা, প্রকৃতি সংরক্ষণ করা এবং মানুষকে সচেতন করা জরুরি। নাহলে ভবিষ্যতে এ প্রজাতি বিরল হয়ে পড়তে পারে।


গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ সাপের বিষে এমন কিছু উপাদান আছে যা ভবিষ্যতে ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগতে পারে। বিশেষ করে স্নায়ুজনিত রোগের চিকিৎসায় এর বিষ থেকে উপাদান ব্যবহার করা সম্ভব। ইতোমধ্যেই কিছু প্রাথমিক গবেষণা চলছে।

এছাড়া এদের প্রজনন, আচরণ ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে গবেষণা জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে।

কালো ডোরাকাটা সাপ প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। এটি শুধু সৌন্দর্য নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মানুষের ভয় ও অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় এরা অকারণে মারা পড়ে। অথচ প্রকৃতি রক্ষায় এদের অস্তিত্ব অপরিহার্য।

তাই আমাদের উচিত সাপ নিয়ে ভয় না ছড়িয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা করা এবং গবেষণায় মনোযোগী হওয়া। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও কালো ডোরাকাটা সাপকে প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ হিসেবে দেখতে পাবে।