০৭:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
ওয়াটসঅ্যাপ অ্যাপল এর প্রাচীর ভেঙে ফেলছে সৌদি আরবের চোখ ইসরায়েলের এফ-৩৫ সফলতা ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পরিকল্পনা: ইউক্রেন যুদ্ধে সমাপ্তি আনার চেষ্টা নাইজেরিয়ান ফটোগ্রাফার জে.ডি. ওজেইকিরে-এর অদেখা ছবি প্রকাশ বড় জয়, অস্বস্তিকর মুহূর্ত আর আবেগ—২০২৫ ARIA Awards ছিল টালমাটাল কিন্তু জীবন্ত  কমছে মার্কিনদের ছুটির কেনাকাটা, চাপের মুখে খুচরা বিক্রেতারা  অতিরিক্ত ক্ষমতা ও প্রযুক্তি বদলে বড় ধাক্কার মুখে ভারতের সোলার মডিউল শিল্প  জাপানের PAC-3 ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি, নিরাপত্তা নীতিতে নতুন ধাপ পুলিশের মনোবল ভাঙলে আবার নিজেকে নিজেই পাহারা দিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার ঢাকার আদালতে ভারতের সখিনা বেগম, জামিন হয়নি শুনে অঝোরে কাঁদলেন মেয়ে

অধ্যক্ষকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে, কী ঘটেছিল গৌরীপুরে?

  • Sarakhon Report
  • ০৬:৫২:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 32

বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুলটিকে ঘিরে এলাকায় দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে কয়েকজন ব্যক্তি ধাক্কাতে ধাক্কাতে একজনকে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার নাম গোলাম মোহাম্মদ ও তিনি ওই প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ ছিলেন। বিভিন্ন অভিযোগে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তাকে হেনস্তার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের ব্যানারে মানববন্ধনও হয়েছে।

ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলছেন, গোলাম মোহাম্মদকে অধ্যক্ষ পদে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী চাইছে না বলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

যদিও হেনস্তার শিকার গোলাম মোহাম্মদ বলছেন, স্কুলের ভেতরের একটি ‘চক্র’ পুরো ঘটনার জন্য দায়ী এবং তিনি ঘটনাটি নিয়ে থানায় অভিযোগও করেছেন।

এদিকে ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম জানিয়েছেন, গোলাম মোহাম্মদের অভিযোগ তারা নিয়মানুযায়ী আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং আদালতের নির্দেশনা এলে পরে তারা সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের গেট
ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণেই ঘটনাটি ঘটে

ভাইরাল ভিডিওতে যা আছে

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বাইরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এ সময় পাশের ভবনের সিঁড়ির কাছে কয়েকজন নারী (তারা স্কুলেরই শিক্ষিকা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন) এবং কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিস্মিত ভঙ্গীতে তা দেখতে দেখা যায় ওই ভিডিওতে।

ভিডিওতে যাকে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দেখা গেছে তিনি সেখানকারই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলেছেন, তাকে ওই প্রতিষ্ঠানেরই কয়েকজন শিক্ষক মারধরের পর ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করেছে।

লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে স্কুল মাঠে যাওয়ার পর থেকেই তাকে গালিগালাজ শুরু করে কয়েকজন (পরে থানায় তিনি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তারা)।

“আমি তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে বিবাদীরা এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারে, আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম করে। আমার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে বিবাদীরা তাদের স্কুলের ভেতরে যেতে নিষেধ করে,” থানায় দেওয়া অভিযোগে বলেছেন তিনি।

গোলাম মোহাম্মদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাকে প্রথমে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে এবং এরপর ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়া হয়েছে।

ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাজেদুল ইসলাম ইসলাম বলছেন, অপ্রীতিকর এমন পরিস্থিতির জন্য গোলাম মোহাম্মদ নিজেই অনেকাংশে দায়ী।

“তাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে। তিনি সেগুলোর নিষ্পত্তি করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসলেই এই সংকট হতো না,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন। তিনি।

গোলাম মোহাম্মদ অবশ্য বলছেন, তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি নানা অভিযোগ তুলছিলো এবং সেগুলো আবার তদন্তের পর খারিজও হয়ে গেছে।

শুক্রবার মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন এলাকার কিছু মানুষ
শুক্রবার মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন এলাকার কিছু মানুষ

ঘটনার নেপথ্যে কী

গোলাম মোহাম্মদ বলছেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে গত বছর ৫ই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে থেকেই কয়েকজন শিক্ষকের সাথে তার বিরোধ চলছিলো।

“নির্বাচনে দুই পক্ষের ভোট সমান হয়ে যায়, ফলে কমিটি আর গঠন হয়নি। কিন্তু তারা এজন্য আমাকে দোষ দিচ্ছিলো। এ বিষয়ে আমার তো কিছু করার ছিল না,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

মূলত এই কমিটি গঠনের জের ধরে ৫ই অগাস্টের পর শিক্ষকদের একাংশ ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করেন।

তারা শিক্ষা প্রশাসনের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে গোলাম মোহাম্মদকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন।

এক পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে দুই পক্ষ বসে তাকে সরিয়ে স্কুলের শিক্ষক সাজেদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়। এরপর বেতনও পাচ্ছিলেন না তিনি। তবে তিনি নিয়মিত স্কুলে আসা যাওয়া করতেন।

সম্প্রতি স্কুলে কয়েকজন নতুন শিক্ষক যোগদানের পর এ নিয়ে বিরোধ আরও জোরদার হয়।

মি. ইসলাম বলছেন, গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর তদন্ত চলছে।

“উনি সবসময় একরোখা আচরণ করেন। ওনার কাগজপত্রের বৈধতা নেই। আমরা স্কুলে আসার আগে তাকে নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম। সেটি না করে আমি তাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করছিলাম। এখন এলাকাবাসী ও ছাত্ররাই তাকে মানছে না,” বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন তিনি।

স্কুলটির শহীদ মিনার
স্কুলটির শহীদ মিনারের পাশ দিয়েই বের করে দিতে দেখা যায় গোলাম মোহাম্মদকে

গোলাম মোহাম্মদ বলছেন, তার বিরুদ্ধে বলা এসব কিছুই সত্যি নয়।

বরং তিনি বলছেন, “এরা দিনরাত এগুলো নিয়েই এলাকায় ব্যস্ত থাকে। পদাধিকার বলেই এখনো আমিই অধ্যক্ষ। কিন্তু তারা জোর করে চেয়ার দখল করে রেখেছে। এখন আমাকেই সেখানে যেতে দিচ্ছে না। এগুলো কর্তৃপক্ষও জানে।”

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আঞ্জুমান আরা বেগম, “হেনস্তার ঘটনা সত্য। এটা সবাই দেখেছে। কিন্তু বাকি বিষয়গুলো এবং এটি কেন হলো, কারা দায়ী সব কিছুই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।

এদিকে অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেই এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের ব্যানারে মানববন্ধন ও ভূটিয়ারকোনা বাজারে বিক্ষোভ-মিছিল হয়েছে শুক্রবার।

এসব কর্মসূচি থেকে গোলাম মোহাম্মদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করা হয়েছে।

যদিও প্রশাসন ও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে আগে থেকে থাকা অভিযোগের সূত্র ধরে ৫ই অগাস্টের পর স্থানীয় একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের দুই পক্ষ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।

এক পক্ষ গোলাম মোহাম্মদ এবং অন্য পক্ষ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এর জের ধরেই বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষের ওপর হামলা ও তাকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে।

“স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে পরিস্থিতি খানিকটা জটিল হয়েছে। তবে হামলার বিষয়ে আমরা আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছি। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে,” বলছিলেন গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

বিবিসি বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

ওয়াটসঅ্যাপ অ্যাপল এর প্রাচীর ভেঙে ফেলছে

অধ্যক্ষকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে, কী ঘটেছিল গৌরীপুরে?

০৬:৫২:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুলটিকে ঘিরে এলাকায় দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে কয়েকজন ব্যক্তি ধাক্কাতে ধাক্কাতে একজনকে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার নাম গোলাম মোহাম্মদ ও তিনি ওই প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ ছিলেন। বিভিন্ন অভিযোগে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তাকে হেনস্তার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের ব্যানারে মানববন্ধনও হয়েছে।

ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলছেন, গোলাম মোহাম্মদকে অধ্যক্ষ পদে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী চাইছে না বলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

যদিও হেনস্তার শিকার গোলাম মোহাম্মদ বলছেন, স্কুলের ভেতরের একটি ‘চক্র’ পুরো ঘটনার জন্য দায়ী এবং তিনি ঘটনাটি নিয়ে থানায় অভিযোগও করেছেন।

এদিকে ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম জানিয়েছেন, গোলাম মোহাম্মদের অভিযোগ তারা নিয়মানুযায়ী আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং আদালতের নির্দেশনা এলে পরে তারা সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের গেট
ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণেই ঘটনাটি ঘটে

ভাইরাল ভিডিওতে যা আছে

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বাইরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এ সময় পাশের ভবনের সিঁড়ির কাছে কয়েকজন নারী (তারা স্কুলেরই শিক্ষিকা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন) এবং কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিস্মিত ভঙ্গীতে তা দেখতে দেখা যায় ওই ভিডিওতে।

ভিডিওতে যাকে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দেখা গেছে তিনি সেখানকারই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলেছেন, তাকে ওই প্রতিষ্ঠানেরই কয়েকজন শিক্ষক মারধরের পর ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করেছে।

লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে স্কুল মাঠে যাওয়ার পর থেকেই তাকে গালিগালাজ শুরু করে কয়েকজন (পরে থানায় তিনি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তারা)।

“আমি তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে বিবাদীরা এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারে, আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম করে। আমার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে বিবাদীরা তাদের স্কুলের ভেতরে যেতে নিষেধ করে,” থানায় দেওয়া অভিযোগে বলেছেন তিনি।

গোলাম মোহাম্মদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাকে প্রথমে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে এবং এরপর ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়া হয়েছে।

ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাজেদুল ইসলাম ইসলাম বলছেন, অপ্রীতিকর এমন পরিস্থিতির জন্য গোলাম মোহাম্মদ নিজেই অনেকাংশে দায়ী।

“তাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে। তিনি সেগুলোর নিষ্পত্তি করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসলেই এই সংকট হতো না,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন। তিনি।

গোলাম মোহাম্মদ অবশ্য বলছেন, তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি নানা অভিযোগ তুলছিলো এবং সেগুলো আবার তদন্তের পর খারিজও হয়ে গেছে।

শুক্রবার মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন এলাকার কিছু মানুষ
শুক্রবার মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন এলাকার কিছু মানুষ

ঘটনার নেপথ্যে কী

গোলাম মোহাম্মদ বলছেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে গত বছর ৫ই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে থেকেই কয়েকজন শিক্ষকের সাথে তার বিরোধ চলছিলো।

“নির্বাচনে দুই পক্ষের ভোট সমান হয়ে যায়, ফলে কমিটি আর গঠন হয়নি। কিন্তু তারা এজন্য আমাকে দোষ দিচ্ছিলো। এ বিষয়ে আমার তো কিছু করার ছিল না,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

মূলত এই কমিটি গঠনের জের ধরে ৫ই অগাস্টের পর শিক্ষকদের একাংশ ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করেন।

তারা শিক্ষা প্রশাসনের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে গোলাম মোহাম্মদকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন।

এক পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে দুই পক্ষ বসে তাকে সরিয়ে স্কুলের শিক্ষক সাজেদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়। এরপর বেতনও পাচ্ছিলেন না তিনি। তবে তিনি নিয়মিত স্কুলে আসা যাওয়া করতেন।

সম্প্রতি স্কুলে কয়েকজন নতুন শিক্ষক যোগদানের পর এ নিয়ে বিরোধ আরও জোরদার হয়।

মি. ইসলাম বলছেন, গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর তদন্ত চলছে।

“উনি সবসময় একরোখা আচরণ করেন। ওনার কাগজপত্রের বৈধতা নেই। আমরা স্কুলে আসার আগে তাকে নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম। সেটি না করে আমি তাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করছিলাম। এখন এলাকাবাসী ও ছাত্ররাই তাকে মানছে না,” বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন তিনি।

স্কুলটির শহীদ মিনার
স্কুলটির শহীদ মিনারের পাশ দিয়েই বের করে দিতে দেখা যায় গোলাম মোহাম্মদকে

গোলাম মোহাম্মদ বলছেন, তার বিরুদ্ধে বলা এসব কিছুই সত্যি নয়।

বরং তিনি বলছেন, “এরা দিনরাত এগুলো নিয়েই এলাকায় ব্যস্ত থাকে। পদাধিকার বলেই এখনো আমিই অধ্যক্ষ। কিন্তু তারা জোর করে চেয়ার দখল করে রেখেছে। এখন আমাকেই সেখানে যেতে দিচ্ছে না। এগুলো কর্তৃপক্ষও জানে।”

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আঞ্জুমান আরা বেগম, “হেনস্তার ঘটনা সত্য। এটা সবাই দেখেছে। কিন্তু বাকি বিষয়গুলো এবং এটি কেন হলো, কারা দায়ী সব কিছুই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।

এদিকে অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেই এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের ব্যানারে মানববন্ধন ও ভূটিয়ারকোনা বাজারে বিক্ষোভ-মিছিল হয়েছে শুক্রবার।

এসব কর্মসূচি থেকে গোলাম মোহাম্মদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করা হয়েছে।

যদিও প্রশাসন ও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে আগে থেকে থাকা অভিযোগের সূত্র ধরে ৫ই অগাস্টের পর স্থানীয় একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের দুই পক্ষ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।

এক পক্ষ গোলাম মোহাম্মদ এবং অন্য পক্ষ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এর জের ধরেই বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষের ওপর হামলা ও তাকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে।

“স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে পরিস্থিতি খানিকটা জটিল হয়েছে। তবে হামলার বিষয়ে আমরা আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছি। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে,” বলছিলেন গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

বিবিসি বাংলা