বৈশ্বিক পর্যটনে অনন্য ভূমিকা
আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ কেন্দ্র ক্রমেই বিশ্বের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নিদর্শন হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। ইসলামি স্থাপত্যের নান্দনিকতা, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উপস্থাপন এবং দর্শনার্থীদের জন্য বহুমুখী সেবার সমন্বয়ে এই মসজিদ এক ভিন্নতর পর্যটন অভিজ্ঞতা প্রদান করছে। প্রতিবছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়, যেখানে টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কৃতির মধ্যে বোঝাপড়া বৃদ্ধিতে পর্যটনের ভূমিকা গুরুত্ব পায়। এই উপলক্ষে শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ আজ বিশ্বনেতা, কূটনীতিক ও সাধারণ পর্যটকদের মিলনস্থল হয়ে উঠেছে।
দর্শনার্থীর সংখ্যা ও আন্তর্জাতিক আগ্রহ
মসজিদটি প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ দর্শনার্থীকে স্বাগত জানায়, যার মধ্যে ৮২ শতাংশই আন্তর্জাতিক পর্যটক। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এখানে ৪৩ লাখেরও বেশি মানুষ এসেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। এর ফলে গড়ে দর্শনার্থীদের অবস্থানকাল দুই ঘণ্টা থেকে বেড়ে চার ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ কেন্দ্রের মহাপরিচালক ড. ইউসুফ আল ওবায়দলি বলেন, কেন্দ্রটি ইসলামি স্থাপত্যের সৌন্দর্য ও সংস্কৃতিকে আধুনিক উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই অভিজ্ঞতা পরিবেশ, সমাজ ও সংস্কৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে টেকসই পর্যটনের আদর্শ উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে।
নতুন সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক অভিজ্ঞতা
দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতাকে বৈচিত্র্যময় করতে কেন্দ্রটি নানা ধরনের আয়োজন করছে।
- ‘সুরা অভিজ্ঞতা’: ২৪ ঘণ্টার গাইডেড ট্যুর, যা বিশেষ করে ট্রানজিট যাত্রী বা অনিয়মিত সময়ে আগত দর্শকদের জন্য চালু করা হয়েছে।
- ‘গাইড ডিভাইস’: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৪টি ভাষায় ট্যুরের সুযোগ, যেখানে দৃষ্টি ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে।
- ‘হিডেন জেমস অব দ্য মসজিদ’: বৈদ্যুতিক যানবাহনের মাধ্যমে মসজিদের বিশেষ স্থাপত্য ও সংস্কৃতির নিদর্শন প্রদর্শন।
প্রতি বছর এখানে ৫,৪০০-র বেশি সাংস্কৃতিক ভ্রমণ আয়োজন করা হয়, যা আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, চীনা, কোরিয়ান, স্প্যানিশসহ নানা ভাষায় পরিচালিত হয়। সংকেত ভাষায় ভ্রমণের জন্যও প্রশিক্ষিত এমিরাতি গাইডরা দায়িত্ব পালন করেন।
‘শান্তির গম্বুজ’ ও নূর ও সালাম জাদুঘর
মসজিদ কেন্দ্র বিশ্বসংলাপের মঞ্চ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে ‘পিস ডোম’ বা শান্তির গম্বুজের মাধ্যমে। এর ভেতরে রয়েছে বিশেষ জাদুঘর ‘নূর ও সালাম’, যেখানে তিনটি পবিত্র মসজিদের পরিবেশের অনুকরণে ইন্টার্যাক্টিভ প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে। এখানে কাবার বেল্ট, ব্লু কুরআন এবং আন্দালুসীয় জ্যোতির্বিদ্যা যন্ত্রের মতো বিরল নিদর্শন প্রদর্শিত হয়।
শিশু, গবেষক, শিল্প ও বিজ্ঞানপ্রেমী, সব শ্রেণির দর্শনার্থীর জন্য আলাদা বিভাগ রাখা হয়েছে। এছাড়া ‘দিয়া ইন্টার্যাক্টিভ এক্সপেরিয়েন্স’-এর মাধ্যমে আলো, শব্দ, বাতাস ও প্রকৃতির উপাদানকে ৩৬০ ডিগ্রি প্রজেকশনে উপস্থাপন করা হয়, যা ভ্রমণকে এক নতুন মাত্রা দেয়।

অতিরিক্ত সাংস্কৃতিক সুবিধা
‘শান্তির গম্বুজ’-এ আরও রয়েছে বিশেষায়িত গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক থিয়েটার, স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রদর্শনী, রেস্তোরাঁ ও দোকান সমন্বিত বাজার, এবং ‘মসজিদ লেটারস’ নামের দেয়ালচিত্র।
বৈশ্বিক স্বীকৃতি
ট্রিপঅ্যাডভাইজরের ২০২৫ সালের তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ নিদর্শনের মধ্যে মসজিদটির স্থান অষ্টম। গত বছরের তুলনায় এ বছর এটি দুই ধাপ এগিয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম স্থানে অবস্থান বজায় রেখেছে।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সেতুবন্ধন তৈরি করে বৈশ্বিক পর্যটনে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















