মঞ্চে আবেগময় তিন ঘণ্টা
মালয়েশিয়ার গায়িকা নরিন আজিজ সম্প্রতি কুয়ালালামপুরের ডিবিকেএল অডিটরিয়ামে এক দুর্দান্ত সঙ্গীতানুষ্ঠান উপহার দিলেন। ৪৮ বছর বয়সী এই শিল্পী টানা তিন ঘণ্টায় ২৬টি গান পরিবেশন করেন। প্রতিটি গানেই ছিল আবেগ, শক্তি ও মুগ্ধতা। শ্রোতারা তার সঙ্গে গেয়েছেন, হাততালি দিয়েছেন, নেচেছেন এবং তাকে ঘিরে আনন্দে ভেসেছেন।
ভালোবাসা ও জীবনের গল্প
এটি কেবল একটি কনসার্ট নয়, বরং ছিল ভালোবাসা, জীবনের শিক্ষা, ঐতিহ্য এবং তার ব্যক্তিগত ভ্রমণের গল্প। কালো-সোনালি পোশাকে মঞ্চে ওঠার পর থেকেই সবার দৃষ্টি ছিল তার ওপর। গান শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই তার কণ্ঠ ভরিয়ে দেয় পুরো হলঘর। জনপ্রিয় গান ‘চেরিতা চিন্তা’, ‘আলাম মায়া’, ‘মেক ইট অন মাই ওন’ ও ‘কেমবালিকান’ শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
জ্যাজ সুরের জাদু
নরিন পরে চলে যান তার প্রিয় জ্যাজ ধারায়। বললেন, “এবার আমি তোমাদের শুনাবো সত্যিকারের নরিন আজিজকে।” এরপর তিনি ব্যান্ড ও ব্যাকআপ সঙ্গীতশিল্পীদের প্রশংসা করতে অনুরোধ করেন দর্শকদের। গাইলেন ‘অটাম লিভস’ এবং নিজের গান ‘কেরতাস’, যা টিভি সিরিজ খুনসার জন্য তৈরি হয়েছিল।
গেগার ভাগাঞ্জা স্মৃতি
এরপর তিনি দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন ২০১৮ সালে, যখন তিনি গেগার ভাগাঞ্জা সিজন ৫-এ অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। বললেন, “আমি তখন বড় মঞ্চে ফেরার জন্য অংশ নিই, কারণ গান আমার ভালোবাসা।” তিনি সেই যাত্রার পাঁচটি স্মরণীয় গান গাইলেন—‘ফানতাসি রিয়ালিতি’, ‘ত্রাউমা’, ‘আখিরন্যা কিনি পাস্তি’, ‘হোয়ার ইজ দ্য লাভ’ এবং ‘আই’ম এভরি উওম্যান’। এর মধ্যে কিছু গান গাইতে তিনি দর্শকদের মধ্যে হেঁটে যান, হাত নেড়ে সবার সঙ্গে মিশে যান।
ডুয়েটের আনন্দ
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক দিনা নাদজির সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেন নরিন। তারা একসঙ্গে পরিবেশন করেন চাক খানের জনপ্রিয় গান ‘আই’ম এভরি উওম্যান’। এ অংশটি ছিল পুরো অনুষ্ঠানের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।
নতুন গান ও আবেগঘন মুহূর্ত
১৫ মিনিট বিরতির পর নতুন পোশাকে ফিরে আসেন নরিন। গাইলেন প্রাণবন্ত ‘হুরে হুরে’। মঞ্চ থেকে নামার সময় সামান্য পিছলে গেলেও তিনি হেসে সামলে নেন এবং গান চালিয়ে যান। দর্শকরা তুমুল করতালিতে তার দৃঢ়তাকে অভিনন্দন জানান।
এরপর উন্মোচন করেন নতুন গান ‘সুরগা সেম্পুর্না’, যা তিনি রমজান মাসে স্বামীর জন্য লিখেছিলেন। তিনি বলেন, “আজ এটি আমি গাজায় থাকা ভাই-বোনদের উৎসর্গ করতে চাই। এটি ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও মানবতার প্রতীক।”
তিনি আরও গাইলেন নতুন গান ‘জাঙ্গান বুকান বুকান’, যা মজার কথার মাধ্যমে এক দম্পতির ঝগড়া–ভালোবাসার সম্পর্ককে তুলে ধরে।
শেষ পর্বে রঙিন মেলবন্ধন
অন্য এক কালো পোশাকে ফিরে এসে পরিবেশন করলেন আর অ্যান্ড বি ধাঁচের গান, যেমন ‘সুপারউওম্যান’। এরপর শোনালেন নিজের জনপ্রিয় গান—‘মিমপি সেদিহ’, ‘মেরিসিক কাবার’, ‘জাহ দিসুদুত হাতি’ এবং হুইটনি হিউস্টনের ‘ওয়ান মোমেন্ট ইন টাইম’।
রাতের সমাপ্তি হয় এক বিশেষ মেডলির মাধ্যমে, যেখানে ছিল ‘ব্যাক টু লাইফ’, ‘বিন অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’, ‘আই লাভ ইয়োর স্মাইল’, ‘সেপ্টেম্বর’ এবং ‘আই উইল সারভাইভ’।
সহশিল্পীদের সমর্থন
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত গায়ক আনুয়ার জাইন, জিয়ানা জাইন, জ্যাকলিন ভিক্টর, সুকি লো, সুরকার অ্যামিলিয়া, ক্রুর নরম্যান এবং তিয়ারা জ্যাকুলিনা।
দর্শকের ভালোবাসা
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নরিন আজিজ ছিলেন দর্শকদের নিয়ন্ত্রণে। তারা উঠে দাঁড়িয়েছেন, নেচেছেন, একসঙ্গে গেয়েছেন এবং রাতটিকে রূপান্তরিত করেছেন এক উৎসবে।