০৩:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

সূক্ষ্ম সুরে নির্মিত এক গায়িকা-গীতিকার

নেকো কেইসের নতুন অ্যালবাম: কাব্যিক গানের শক্তি

আমেরিকান গায়িকা-গীতিকার নেকো কেইস সম্প্রতি তাঁর অষ্টম একক অ্যালবাম ‘নিয়ন গ্রে মিডনাইট গ্রিন’ প্রকাশ করেছেন। এই অ্যালবামে তিনি তুলে ধরেছেন গভীর ব্যক্তিগত অনুভূতি ও তীক্ষ্ণ কাব্যিক গানের কথা। ৫৫ বছর বয়সে পৌঁছেও কেইস প্রমাণ করেছেন, জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে তিনি সৃজনশীলভাবে গানে রূপ দিতে পারেন। অনেক গীতিকার বয়স বাড়ার পর সৃষ্টিশীলতায় ভাটা পড়লেও কেইসের গান নতুন উদ্দীপনা ও গভীরতার পরিচয় বহন করে।

সঙ্গীত জীবনের শুরু থেকে বর্তমান যাত্রা

কেইস শুরু করেছিলেন ড্রাম বাজিয়ে। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি ভ্যাঙ্কুভারে যাওয়ার পর কয়েকটি ব্যান্ডে বাজিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘দ্য ভার্জিনিয়ান’ (১৯৯৭) অর্ধেকটাই ছিল কাভার গান। তবে সময়ের সঙ্গে তাঁর কণ্ঠস্বর যেমন শক্তিশালী হয়েছে, তেমনি গানের কথাও হয়েছে গভীর ও ব্যক্তিগত।

তিনি কানাডার ইন্ডি-রক ব্যান্ড দ্য নিউ পর্নোগ্রাফার্স–এর সঙ্গেও কাজ করেছেন। তাঁর লেখা গান ২০০৯ সালের ‘মিডল সাইক্লোন’ এবং ২০১৩ সালের ‘দ্য ওর্স থিংস গেট, দ্য হার্ডার আই ফাইট, দ্য হার্ডার আই ফাইট, দ্য মোর আই লাভ ইউ’ গ্র্যামি মনোনয়ন পেয়েছিল। তবে তাঁর সঙ্গীত সবসময়ই থেকে গেছে ভিন্নধর্মী ও ব্যক্তিগত—যা মূলধারার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

Honorary Vancouverite Neko Case announces new memoir “The Harder I Fight, The More I Love You” | Georgia Straight Vancouver's source for arts, culture, and events

নতুন অ্যালবামের বিষয়বস্তু ও আবহ

‘নিয়ন গ্রে মিডনাইট গ্রিন’ অ্যালবামে কেইস তুলে ধরেছেন বয়সের সঙ্গে আসা শোক ও হারানোর অনুভূতি। তাঁর মতে, বয়স বাড়ার সবচেয়ে কঠিন দিক হলো প্রিয়জনদের হারানো।

প্রথম গান ‘ডেস্টিনেশন’–এ তিনি এক সংগীতশিল্পীর জীবনকাহিনি বর্ণনা করেছেন, যেখানে তার নিজের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন খুঁজে পান। গানের কাব্যিক শব্দচিত্র—যেমন, “বারের আলোয় তোমার মুখ, হাতে চিবানো স্ট্রর মতো জিহ্বা”—সাধারণ দৃশ্যকেও করে তোলে জীবন্ত।

আরেকটি গান ‘উইঞ্চেস্টার ম্যানশন অব সাউন্ড’-এ ট্যাক পিয়ানোর সুরে উঠে এসেছে অন্য এক শিল্পীর প্রতিকৃতি। এখানে প্রেম নয়, বরং সঙ্গীতের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক যোগসূত্রকে প্রকাশ করেছেন কেইস।

আত্মজীবনী থেকে গানে প্রতিফলন

এ বছর কেইস নিজের স্মৃতিকথা প্রকাশ করেছেন। অ্যালবামের কিছু গান সেই আত্মজীবনীর সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, ‘ওহ, নেগলেক্ট…’ গানটিতে তিনি যৌবনের ভুলত্রুটি স্মরণ করে ভালোবাসা ও ক্ষমার সুরে গেয়েছেন।

Singer/songwriter Neko Case discusses her life in new memoir | WOSU Public Media

অন্যদিকে, পরীক্ষামূলক গান ‘টম্বয় গোল্ড’–এ তিনি শৈশবের স্মৃতি টেনে এনেছেন, যখন তাঁর বাবা গাড়ি মেরামতের সময় তাঁকে সময় মাপার যন্ত্র ধরতে দিতেন। এর সূক্ষ্ম বর্ণনা শ্রোতাকে যেন নিজেই মেশিন হাতে কাজ করার অভিজ্ঞতায় নিয়ে যায়।

প্রকৃতি ও জীবনের সূক্ষ্ম বোধ

কেইস সবসময়ই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাকে গানে রূপ দিতে পারদর্শী। তাঁর গানগুলোতে প্রকৃতির বর্ণনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘লিটল গিয়ার্স’ গানে তিনি একটি মাকড়সার জাল বোনার দৃশ্যকে মহাজাগতিক তাৎপর্যে রূপ দিয়েছেন। কিন্তু পরদিন ফিরে এসে সেই জাল ও মাকড়সা উভয়কেই না দেখে তিনি গভীর বেদনার কথা বলেছেন।

কাব্যের মতো শক্তিশালী গানের কথা

Neko Case's memoir of fighting and loving with ferocity for over 50 years - Los Angeles Times

কেইসের গানের কথা এতটাই সমৃদ্ধ ও রূপকধর্মী যে এগুলো কবিতা, প্রবন্ধ বা বইয়ের অধ্যায় হিসেবেও দাঁড়াতে পারে। তবে তাঁর গানগুলির সুর সবসময় মনে রাখার মতো নয়। ‘নিয়ন গ্রে মিডনাইট গ্রিন’ মূলত শক্তিশালী গানের কথায় সমৃদ্ধ, যদিও সুরে কিছুটা ঘাটতি আছে।

শেষ গান ‘ম্যাচলিট’-এ তিনি দিয়াশলাই কাঠির খসখসে শব্দ থেকে শুরু করে আগুনের শিখার ক্ষণস্থায়ী শক্তিকে চিত্রিত করেছেন। এতে জীবনের ক্ষণিকের আনন্দ ও বেদনার প্রতিফলন ধরা পড়েছে।

নেকো কেইসের এই অ্যালবাম তাঁর গানের মতোই জীবন, ক্ষতি, আনন্দ ও বেদনার মিশ্রণে ভরপুর। সৃজনশীল রচনায় তিনি প্রমাণ করেছেন যে প্রতিটি ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতাই গভীর সঙ্গীতে রূপ নিতে পারে। তাঁর গানে ক্ষণস্থায়ী অথচ প্রবল শক্তি কাজ করে—যা জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।

জনপ্রিয় সংবাদ

সূক্ষ্ম সুরে নির্মিত এক গায়িকা-গীতিকার

১০:০০:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

নেকো কেইসের নতুন অ্যালবাম: কাব্যিক গানের শক্তি

আমেরিকান গায়িকা-গীতিকার নেকো কেইস সম্প্রতি তাঁর অষ্টম একক অ্যালবাম ‘নিয়ন গ্রে মিডনাইট গ্রিন’ প্রকাশ করেছেন। এই অ্যালবামে তিনি তুলে ধরেছেন গভীর ব্যক্তিগত অনুভূতি ও তীক্ষ্ণ কাব্যিক গানের কথা। ৫৫ বছর বয়সে পৌঁছেও কেইস প্রমাণ করেছেন, জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে তিনি সৃজনশীলভাবে গানে রূপ দিতে পারেন। অনেক গীতিকার বয়স বাড়ার পর সৃষ্টিশীলতায় ভাটা পড়লেও কেইসের গান নতুন উদ্দীপনা ও গভীরতার পরিচয় বহন করে।

সঙ্গীত জীবনের শুরু থেকে বর্তমান যাত্রা

কেইস শুরু করেছিলেন ড্রাম বাজিয়ে। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি ভ্যাঙ্কুভারে যাওয়ার পর কয়েকটি ব্যান্ডে বাজিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘দ্য ভার্জিনিয়ান’ (১৯৯৭) অর্ধেকটাই ছিল কাভার গান। তবে সময়ের সঙ্গে তাঁর কণ্ঠস্বর যেমন শক্তিশালী হয়েছে, তেমনি গানের কথাও হয়েছে গভীর ও ব্যক্তিগত।

তিনি কানাডার ইন্ডি-রক ব্যান্ড দ্য নিউ পর্নোগ্রাফার্স–এর সঙ্গেও কাজ করেছেন। তাঁর লেখা গান ২০০৯ সালের ‘মিডল সাইক্লোন’ এবং ২০১৩ সালের ‘দ্য ওর্স থিংস গেট, দ্য হার্ডার আই ফাইট, দ্য হার্ডার আই ফাইট, দ্য মোর আই লাভ ইউ’ গ্র্যামি মনোনয়ন পেয়েছিল। তবে তাঁর সঙ্গীত সবসময়ই থেকে গেছে ভিন্নধর্মী ও ব্যক্তিগত—যা মূলধারার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

Honorary Vancouverite Neko Case announces new memoir “The Harder I Fight, The More I Love You” | Georgia Straight Vancouver's source for arts, culture, and events

নতুন অ্যালবামের বিষয়বস্তু ও আবহ

‘নিয়ন গ্রে মিডনাইট গ্রিন’ অ্যালবামে কেইস তুলে ধরেছেন বয়সের সঙ্গে আসা শোক ও হারানোর অনুভূতি। তাঁর মতে, বয়স বাড়ার সবচেয়ে কঠিন দিক হলো প্রিয়জনদের হারানো।

প্রথম গান ‘ডেস্টিনেশন’–এ তিনি এক সংগীতশিল্পীর জীবনকাহিনি বর্ণনা করেছেন, যেখানে তার নিজের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন খুঁজে পান। গানের কাব্যিক শব্দচিত্র—যেমন, “বারের আলোয় তোমার মুখ, হাতে চিবানো স্ট্রর মতো জিহ্বা”—সাধারণ দৃশ্যকেও করে তোলে জীবন্ত।

আরেকটি গান ‘উইঞ্চেস্টার ম্যানশন অব সাউন্ড’-এ ট্যাক পিয়ানোর সুরে উঠে এসেছে অন্য এক শিল্পীর প্রতিকৃতি। এখানে প্রেম নয়, বরং সঙ্গীতের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক যোগসূত্রকে প্রকাশ করেছেন কেইস।

আত্মজীবনী থেকে গানে প্রতিফলন

এ বছর কেইস নিজের স্মৃতিকথা প্রকাশ করেছেন। অ্যালবামের কিছু গান সেই আত্মজীবনীর সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, ‘ওহ, নেগলেক্ট…’ গানটিতে তিনি যৌবনের ভুলত্রুটি স্মরণ করে ভালোবাসা ও ক্ষমার সুরে গেয়েছেন।

Singer/songwriter Neko Case discusses her life in new memoir | WOSU Public Media

অন্যদিকে, পরীক্ষামূলক গান ‘টম্বয় গোল্ড’–এ তিনি শৈশবের স্মৃতি টেনে এনেছেন, যখন তাঁর বাবা গাড়ি মেরামতের সময় তাঁকে সময় মাপার যন্ত্র ধরতে দিতেন। এর সূক্ষ্ম বর্ণনা শ্রোতাকে যেন নিজেই মেশিন হাতে কাজ করার অভিজ্ঞতায় নিয়ে যায়।

প্রকৃতি ও জীবনের সূক্ষ্ম বোধ

কেইস সবসময়ই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাকে গানে রূপ দিতে পারদর্শী। তাঁর গানগুলোতে প্রকৃতির বর্ণনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘লিটল গিয়ার্স’ গানে তিনি একটি মাকড়সার জাল বোনার দৃশ্যকে মহাজাগতিক তাৎপর্যে রূপ দিয়েছেন। কিন্তু পরদিন ফিরে এসে সেই জাল ও মাকড়সা উভয়কেই না দেখে তিনি গভীর বেদনার কথা বলেছেন।

কাব্যের মতো শক্তিশালী গানের কথা

Neko Case's memoir of fighting and loving with ferocity for over 50 years - Los Angeles Times

কেইসের গানের কথা এতটাই সমৃদ্ধ ও রূপকধর্মী যে এগুলো কবিতা, প্রবন্ধ বা বইয়ের অধ্যায় হিসেবেও দাঁড়াতে পারে। তবে তাঁর গানগুলির সুর সবসময় মনে রাখার মতো নয়। ‘নিয়ন গ্রে মিডনাইট গ্রিন’ মূলত শক্তিশালী গানের কথায় সমৃদ্ধ, যদিও সুরে কিছুটা ঘাটতি আছে।

শেষ গান ‘ম্যাচলিট’-এ তিনি দিয়াশলাই কাঠির খসখসে শব্দ থেকে শুরু করে আগুনের শিখার ক্ষণস্থায়ী শক্তিকে চিত্রিত করেছেন। এতে জীবনের ক্ষণিকের আনন্দ ও বেদনার প্রতিফলন ধরা পড়েছে।

নেকো কেইসের এই অ্যালবাম তাঁর গানের মতোই জীবন, ক্ষতি, আনন্দ ও বেদনার মিশ্রণে ভরপুর। সৃজনশীল রচনায় তিনি প্রমাণ করেছেন যে প্রতিটি ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতাই গভীর সঙ্গীতে রূপ নিতে পারে। তাঁর গানে ক্ষণস্থায়ী অথচ প্রবল শক্তি কাজ করে—যা জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।