অ্যালবাম প্রকাশ ও বিশ্বব্যাপী প্রচারণা
টেইলর সুইফটের দ্বাদশ স্টুডিও অ্যালবাম দ্য লাইফ অব এ শোগার্ল প্রকাশিত হয়েছে এক অনন্য আয়োজনের মাধ্যমে। প্রচারণার অংশ হিসেবে ছিল টার্গেট স্টোরে মধ্যরাতের বিক্রি, বিশ্বজুড়ে সিনেমা হলে মুক্তি উদযাপন পার্টি এবং নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসে বিশেষ পপ-আপ ইভেন্ট।
এর আগে প্রকাশিত অ্যালবাম দ্য টর্চার্ড পোয়েটস ডিপার্টমেন্ট বিলবোর্ড ২০০ চার্টে এক নম্বরে উঠেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৮ মিলিয়নের বেশি বিক্রির রেকর্ড করেছিল। নতুন অ্যালবাম প্রকাশের পর মাত্র ১১ ঘণ্টার মধ্যেই এটি স্পটিফাইতে বছরের সবচেয়ে বেশি স্ট্রিম হওয়া অ্যালবামে পরিণত হয়।
টেইলরের বক্তব্য: জীবনের প্রতিচ্ছবি
প্রচারাভিযান শুরু করতে ব্রিটেনের একটি রেডিও শো-তে সুইফট বলেন, “আমি এখন ঠিক সেখানেই আছি, যেখান থেকে এই অ্যালবাম তৈরি হয়েছিল। তাই এটি আমার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঠিক প্রতিফলন।”
অ্যালবামটিতে আবারও সুইডিশ প্রযোজক ম্যাক্স মার্টিন ও শেলব্যাক কাজ করেছেন, যারা আগেও ১৯৮৯ এবং রেপুটেশন-এর মতো সফল অ্যালবামে যুক্ত ছিলেন। মোট ১২টি গানের এই অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাকে রয়েছেন সাবরিনা কার্পেন্টার।
সমালোচক ও শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া
সমালোচকদের কাছ থেকে অ্যালবামটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। রোলিং স্টোন একে পাঁচ তারকা দিয়ে জানিয়েছে যে, সুইফট নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছেন। অন্যদিকে ব্রিটিশ বিবিসি এটিকে “পপ সঙ্গীতের বিজয় মিছিল” হিসেবে অভিহিত করেছে।
কিন্তু ফিনান্সিয়াল টাইমস ও দ্য গার্ডিয়ান তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের মতে, অ্যালবামটিতে আকর্ষণীয়তা থাকলেও ঝলক কম, এমনকি কিছুটা ক্লান্তির ছাপ রয়েছে।
তবুও লন্ডনের ভক্তরা অ্যালবাম কিনতে ভিড় জমিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল থেকে আসা ৬২ বছর বয়সী ড্যান পোলিয়্যাক বলেন, “এটি তার জন্য কিছুটা নতুন ধারা, তবে গানগুলো দুর্দান্ত এবং মজার।”
আগাম উত্তেজনা ও কেলসির সঙ্গে উপস্থিতি
অ্যালবামের ঘোষণার পর থেকেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। আগস্টে তিনি ওয়েবসাইটে কাউন্টডাউন চালু করেন এবং অল্প সময় পরেই তার বাগদত্তা, এনএফএল খেলোয়াড় ট্র্যাভিস কেলসি ও তার ভাইয়ের পডকাস্টে হাজির হন। সেখানেই তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী রেকর্ডভঙ্গকারী ইরাস ট্যুর চলাকালীন যে আনন্দ অনুভব করেছিলেন, সেটিই নতুন অ্যালবামের অনুপ্রেরণা। সেই পডকাস্টের ভিডিও ২৩ মিলিয়নেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
অনন্য অবস্থান ও রেকর্ড
সংগীত গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিডিয়া রিসার্চের মতে, সুইফট বর্তমানে এমন এক বিরল অবস্থানে রয়েছেন যেখানে ভক্তদের বিপুল সমর্থন তাকে সবসময় শীর্ষে পৌঁছে দেয়। খুব কম শিল্পী এত দ্রুত এত মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম।
অ্যালবাম মুক্তির আগেই যুক্তরাষ্ট্রে তিনি প্রথম ও একমাত্র নারী শিল্পী হিসেবে ১০ কোটি অ্যালবাম বিক্রির রেকর্ড গড়েছেন। মুক্তির পর গুগলে নতুন গানগুলোর লিরিক্স নিয়ে অনুসন্ধানের ঢেউ দেখা দেয়।
অর্থনৈতিক প্রভাব: ‘সুইফটোনমিক্স’
তার ইরাস ট্যুর সর্বকালের সর্বাধিক আয়ের ট্যুরে পরিণত হয়েছে, যেখানে টিকিট বিক্রি ছাড়িয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে হোটেল, এয়ারবিএনবি, রেস্টুরেন্ট এবং পণ্য বিক্রি যুক্ত হয়ে বিশাল অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলেছে।
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সাংস্কৃতিক প্রভাবের দিক থেকে সুইফটকে এলভিস বা মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ব্যবসায়ীরা একে বলছেন “সুইফটোনমিক্স।”
সিনেমা ও বাজারজাতকরণ
এএমসি থিয়েটারস ঘোষণা করেছে, তারা দ্য অফিসিয়াল রিলিজ পার্টি অব আ শোগার্ল নামে ৮৯ মিনিটের একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবে। এতে অ্যালবামের প্রথম মিউজিক ভিডিও, পর্দার আড়ালের দৃশ্য এবং সুইফটের মন্তব্য থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, মাত্র তিন দিনের মুক্তিতেই এই চলচ্চিত্র ৩০-৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করবে।
টার্গেট স্টোরে বিশেষ সংস্করণের ভিনাইল ও সিডি বিক্রি হচ্ছে, যার ডিজাইন ও পোস্টার আলাদা। স্পটিফাই নিউইয়র্কে তিন দিনের পপ-আপ আয়োজন করেছে। এছাড়া টিকটক লস অ্যাঞ্জেলেসে বিশেষ ইনস্টলেশন চালু করেছে।
টক শো ও প্রচার
অ্যালবাম প্রচারণার অংশ হিসেবে সুইফট গ্রাহাম নর্টন শো, দ্য টুনাইট শো স্টারিং জিমি ফ্যালন এবং লেট নাইট উইথ সেথ মেয়ার্স-এ অংশ নিচ্ছেন। এসব উপস্থিতি তার নতুন অ্যালবামকে ঘিরে বৈশ্বিক আলোচনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে।