সারাবছরই সচেতনতা জরুরি
অক্টোবর মাস স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসেবে পরিচিত। এ সময় গোলাপি ফিতা ও নানা প্রচারাভিযান চোখে পড়ে বেশি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, শুধুমাত্র অক্টোবর নয়—সারাবছরই নিয়মিত পরীক্ষা ও স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক যত্ন নেওয়া জরুরি।
মায়ো ক্লিনিকের উচ্চ ঝুঁকির স্তন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. গ্রাহাম কিং মানুষের মনে সবচেয়ে বেশি ওঠা ১০টি প্রশ্নের সহজ উত্তর দিয়েছেন।
১. আমি যদি পরিবারের ইতিহাস না পাই, তবু কেন চিন্তা করব?
অনেকেই মনে করেন, পরিবারের কারও স্তন ক্যানসার না থাকলে তাঁদের ঝুঁকি নেই। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ২০ শতাংশ স্তন ক্যানসার পারিবারিক বা জিনগত কারণে হয়।
প্রথম শ্রেণির আত্মীয়—যেমন মা বা বোন—স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই নিয়মিত ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা জরুরি।
২. কীভাবে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়?
প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
ধূমপান না করা, অ্যালকোহল সেবন সীমিত রাখা, এবং সুষম খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে সঠিক ওজন বজায় রাখা জরুরি।
মোট ঝুঁকির বড় অংশই আসে নারী হওয়া, স্তন থাকা এবং বয়স বৃদ্ধির কারণে।
৩. নিজের ঝুঁকি সম্পর্কে জানব কীভাবে?
দুইভাবে জানা যায়:
১. পরিবারের চিকিৎসা ইতিহাস সম্পর্কে জানা।
২. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত স্ক্রিনিং ও প্রয়োজন হলে ম্যামোগ্রাম করানো।
৪. নিজে নিজে পরীক্ষা করা কি দরকার?
হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন—নিজে নিজে নিয়মিত পরীক্ষা করলে নিজের স্তনের পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়।
যদিও সব চিকিৎসক বার্ষিক ক্লিনিকাল স্তন পরীক্ষা করেন না, তবু প্রতি মাসে বা তিন মাসে একবার নিজে পরীক্ষা করা ভালো।
যাঁদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের জন্য চিকিৎসক দ্বারা বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ঘন স্তন টিস্যু (ঘন স্তন) বলতে কী বোঝায়?
প্রায় ৩০ শতাংশ নারীর স্তন মাঝারি ঘন, আর ১০ শতাংশের খুব ঘন টিস্যু থাকে।
এতে ম্যামোগ্রামে ক্যানসার শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন হয়, তবুও ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি বছর ম্যামোগ্রাম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৬. জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি কি স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়?
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজনন বয়সে স্বাভাবিকভাবে বড়ি গ্রহণে ঝুঁকি বাড়ে না।
তবে ৬০ বছরের পর দীর্ঘ সময় ধরে হরমোন থেরাপি চালালে স্তন ও জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৭. গর্ভধারণ ও স্তন্যদান কি ঝুঁকি কমায়?
হ্যাঁ, গর্ভধারণ ও দীর্ঘ সময় স্তন্যদান স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়।
গর্ভাবস্থার সংখ্যা ও স্তন্যদানের সময় যত বেশি, ঝুঁকিও তত কম।
৮. পরিবেশগত দূষণ ও রেডিয়েশন কতটা প্রভাব ফেলে?
যাঁরা পূর্বে রেডিয়েশন থেরাপি নিয়েছেন, বিষাক্ত রাসায়নিকের পরিবেশে কাজ করেন বা অতিরিক্ত বিকিরণে থাকেন, তাঁদের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এসব কারণ শুধু স্তন নয়, নানা ধরনের ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
৯. জিনগত পরীক্ষা কি সবার প্রয়োজন?
সবাই নয়।
যাঁদের পরিবারের কারও স্তন ক্যানসার ছিল বা চিকিৎসক উচ্চ ঝুঁকি চিহ্নিত করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জিনগত পরীক্ষা উপকারী হতে পারে।
পরীক্ষার আগে একজন জেনেটিক পরামর্শকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
১০. জাতি বা বর্ণ কি ঝুঁকিতে প্রভাব ফেলে?
হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) অনুযায়ী আফ্রিকান-আমেরিকান, আমেরিকান ইন্ডিয়ান, প্যাসিফিক আইল্যান্ডার ও আলাস্কার আদিবাসীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার এবং মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি।
তবে এই বৈষম্যের পেছনে সামাজিক ও চিকিৎসা-সুবিধা সম্পর্কিত নানা জটিল কারণ রয়েছে, যা গবেষণা ও নীতিনির্ধারণের পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
যাঁদের উচ্চ ঝুঁকি চিহ্নিত হয়েছে, তাঁদের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও স্ক্রিনিং অপরিহার্য।
প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং জীবনযাত্রায় সচেতনতা রক্ষা করলে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা—দুটোই সহজ হয়ে ওঠে।