লেহ কমিটির সিদ্ধান্ত ও কারগিলের অবস্থান
লাদাখে ষষ্ঠ তফসিল ও রাজ্যের মর্যাদা দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আলোচনার উদ্যোগ ভেঙে পড়েছে। অ্যালেক্স বডি, লেহ (ABL) মঙ্গলবার কেন্দ্রের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেছে। আগামী ৬ অক্টোবর নির্ধারিত কাঠামোবদ্ধ আলোচনাতেও তারা যোগ দেবে না বলে জানিয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, লাদাখের বর্তমান পরিস্থিতি ও আন্দোলনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা।
কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (KDA)–এর নেতা সাজ্জাদ কারগিলি জানিয়েছেন, তাদের অবস্থানও একই।
কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়া
ABL–এর ঘোষণার পর কেন্দ্র জানিয়েছে, তারা যেকোনো সময় আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। উচ্চপর্যায়ের কমিটি বা অন্য যে কোনো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই আলোচনার সুযোগ খোলা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, লাদাখের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

চাকরির সংকট ও সরকারের পদক্ষেপ
লাদাখে আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারণ কর্মসংস্থানের অভাব। কেন্দ্র বলছে, স্থানীয়দের জন্য সরকারি চাকরিতে ৮৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা আগের ১০ শতাংশ EWS কোটার সঙ্গে মিলে কার্যত পুরো জনসংখ্যাকেই আচ্ছাদিত করে। ২০১৯ সালের পর থেকে প্রায় ৮ হাজার চাকরি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দৈনিক মজুরিভিত্তিক ৪ হাজার পদ, লাদাখ স্কাউটসে আরও ৫ হাজার চাকরি দেওয়া হয়েছে। পর্যটন, কৃষি ও হোমস্টে খাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা
২৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কেন্দ্রের ব্যাখ্যা, আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উসকানি ছিল এবং সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাধ্য হয়। তাদের দাবি, যদি সেদিন গুলি না চালানো হতো, তাহলে লাদাখ জুড়ে ভয়াবহ অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ত।
উন্নয়ন ও বাজেট বৃদ্ধি
সরকার বলছে, লাদাখের বাজেট পূর্বের ২৫০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এখন ৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। পাহাড়ি অঞ্চল হলেও অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাপকভাবে হয়েছে। শিক্ষাখাতে প্রতিটি স্কুলে আধুনিক শ্রেণিকক্ষ তৈরি হয়েছে, প্রতি সাতজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। স্বাস্থ্যখাতে হাসপাতাল উন্নয়ন চলছে, খেলাধুলার জন্য স্টেডিয়াম নির্মাণে ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ও অভিযোগ
সিভিল সোসাইটির অভিযোগ, লাদাখের দুটি হিল কাউন্সিল কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং সব ক্ষমতা ইউটি প্রশাসনের হাতে। তবে কেন্দ্রের দাবি, হিল কাউন্সিল এখনো ভূমি ও অর্থ বরাদ্দের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ধরে রেখেছে। প্রতিটি কাউন্সিলের বাজেট এখন ৩০০ কোটি টাকা।
জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের আশঙ্কা
আরেকটি বড় উদ্বেগ হলো, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর লাদাখে বহিরাগতদের আগমন বাড়বে এবং জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হবে। কেন্দ্র জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরে ১৫ বছরের আবাসিক শর্তে ডোমিসাইল সুবিধা দেওয়া হলেও লাদাখে এই নীতি কার্যকর হবে ২০৩৪ সাল থেকে।
পরিবেশগত উদ্বেগ
লাদাখের সমাজকর্মীরা সতর্ক করেছেন যে বৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প ও অন্যান্য শিল্প প্রকল্প পরিবেশ ও পানিসংকট তৈরি করতে পারে। তবে কেন্দ্রের বক্তব্য, তাদের শিল্পনীতি পরিবেশবান্ধব এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।

বিকল্প কর্মসংস্থান উদ্যোগ
সরকার দাবি করছে, শুধু সরকারি চাকরির বাইরে আরও সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। দূরবর্তী গ্রামে হোমস্টে চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে মানুষ গ্রাম ছাড়তে না হয়। মুদ্রা যোজনার আওতায় স্বনির্ভরতার জন্য ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গ্রিনহাউস দিয়ে উদ্যানচাষ উৎসাহিত করা হচ্ছে। হোটেল ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে, ফলে অনেকে বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় করছেন।
সরকারের বার্তা
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা বলছেন, তারা লাদাখের মানুষের সঙ্গে বসে খোলা মনে সব সমস্যা আলোচনা করতে প্রস্তুত। যুবকদের উদ্বেগ শোনার জন্য বৈঠক করা হবে। লক্ষ্য হলো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও পরিবেশগত ভারসাম্যের মধ্যে সঠিক সমাধান খুঁজে বের করা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















