মেডিকেল রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা নেই
খাগড়াছড়িতে এক আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার মেডিকেল রিপোর্টে যৌন হয়রানির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রবিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মূল কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ
উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিবাদী চক্রের সহযোগীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করেছিল ওই কিশোরীর ধর্ষণের গুজব ছড়িয়ে।
একইসঙ্গে দুর্গাপূজার মণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টাও করা হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশে যখন দুর্গাপূজার প্রতিমা নির্মাণ হচ্ছিল, তখন দেখা যায় আমাদের প্রধান উপদেষ্টাকে অবমাননাকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সেই ঘটনাতেও একই ষড়যন্ত্রের যোগসূত্র পাওয়া গেছে, যেখানে অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর বিষয়টি দেখা গেছে।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা
উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি জানান, এসব সংস্থা পূজা উদ্যাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সতর্কভাবে কাজ করেছে।
ঘটনার পটভূমি
২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অভিযোগ অনুযায়ী তিন যুবকের হাতে ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এরপরের দিন ভুক্তভোগীর বাবা তিন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে (শায়ন শীল) গ্রেপ্তার করে, যিনি বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রয়েছেন।
বিক্ষোভ ও সহিংসতা
ঘটনার পর ‘জুম্মা ছাত্র জনতা’ নামে সংগঠনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় প্রশাসন খাগড়াছড়ি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে।
পরদিন, ২৮ সেপ্টেম্বর, গুইমারা উপজেলার রামেশু বাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত ও কয়েকজন আহত হন।
তদন্ত ও মামলা
ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
১ অক্টোবর পুলিশ খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় সহিংসতার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও হত্যার অভিযোগে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করে।
এই মামলাগুলোতে মোট এক হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
প্রশাসনের নির্দেশে টানা আট দিন পর খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে উপদেষ্টা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।