শীতের মৌসুমে সবজির দাম কমার কথা, অথচ ঢাকার বাজারে চলছে উল্টো দৃশ্য। মৌলিক খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনযুদ্ধকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
ঢাকার নিম্ন-আয়ের পরিবারে তাজা পণ্যের বাড়তি দাম: প্রভাব ও বাস্তবতা
বাজারের বর্তমান চিত্র
সবজি ও প্রোটিনের দামের হঠাৎ ও তীব্র উর্ধ্বগতি শুধু সংখ্যার হিসাব নয়—এটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গভীর সংকট। প্রয়োজন আর সামর্থ্যের ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
একজন নিরাপত্তাকর্মী মো. দুলাল বলেন,
“হাঁসের মাংস কেজি ৫০০ টাকা। বাচ্চারা খেতে চাইছিল, কিন্তু আর সামর্থ্যের মধ্যে নেই। এখন এটা আমাদের কাছে বিলাসিতা।”
মাছের বাজারেও একই চাপ। মাছ বিক্রেতা মো. মাইনুদ্দিন বলেন,
“এক কেজি ইলিশ ২,৮০০ টাকা। বড় রূপচাঁদা কেজি ১,২০০ টাকা। সাধারণ ক্রেতার জন্য এগুলো এখন অসম্ভব হয়ে গেছে, যদিও কিছু মাছ তুলনামূলক কম।”

সবজির বাজারে সবচেয়ে বেশি চাপ
কর্মজীবী মো. আল আমিন জানান,
“শীত শুরু হলেও সবজির দাম কমছে না। এতে আমাদের ব্যয় আরও বেড়ে যাচ্ছে।”
বাজারদর—
- • ফুলকপি (প্রতি পিস): ৬০ টাকা
- • বাঁধাকপি (প্রতি পিস): ৫০ টাকা
- • শালগম (কেজি): ৮০ টাকা
- • শিম (কেজি): ৭০–১৪০ টাকা
- • পেঁয়াজ (কেজি): ১১০–১20 টাকা
তিনি বলেন, “এই দামে সংসার চালানো সত্যিই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”

ডিএনসিআরপির ভূমিকা বনাম বাজার বাস্তবতা
সবজি বিক্রেতা মো. সানি বলেন,
“আগামী সপ্তাহে বা ডিসেম্বরের শুরুতে শীতের সবজি বেশি এলে দাম কমতে পারে।”
ক্রেতারাও সেই আশায় আছেন।
কিন্তু সরকার নির্ধারিত ন্যায্য মূল্যের সঙ্গে বাজারদরের পার্থক্য এতটাই বেশি যে তা অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। পেঁয়াজের কেজি ১১০–১২০ টাকা—যা নীতিমালার মূল্যের তুলনায় বহু বেশি।
ডিএনসিআরপি মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও ভোক্তাদের অভিযোগ, সমস্যা কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী নয়; পুরো সরবরাহ ব্যবস্থায়।
ফার্ম থেকে বাজারে (ফার্মহাউস থেকে খুচরা দোকান পর্যন্ত) একাধিক মধ্যস্বত্বভোগী ও অগোছালো লজিস্টিক খরচ দামকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে—যা কয়েকটি অভিযান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়।
ভোক্তা জাকির হোসেন বলেন,
“সবজির বাজার আগুন। এক পিস ফুলকপি ৬০ টাকা। শিম সপ্তাহখানেক আগে ৬০ টাকা ছিল, এখন ১৩০ টাকা।”
ফার্মহাউস থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত দামের বৈষম্য কমাতে টেকসই বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধুনিক সরবরাহ শৃঙ্খলা ও কার্যকর নজরদারি জরুরি। নাহলে ঢাকার সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের জন্য বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ বয়ে বেড়াতে থাকবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















