ইউএনবি
বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে স্থিতিশীল, নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ পরিবেশ গড়ে তুলতে দেশটি যৌথভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে তারা স্পষ্ট করেছে যে কোনো বহিরাগত বা অভ্যন্তরীণ শক্তিকে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও কল্যাণকে চ্যালেঞ্জ করতে দেওয়া হবে না।
নয়াদিল্লিতে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের ৭ম বৈঠকে বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খালিলুর রহমান বলেন, “আমরা কোনো বহিরাগত বা অভ্যন্তরীণ শক্তিকে আমাদের কমিউনিটি বা এর কোনো অংশের নিরাপত্তা ও কল্যাণে হুমকি হওয়ার সুযোগ দিই না।”
তিনি বলেন, আস্থা ও উন্মুক্ততার ভিত্তিতে সাধারণ সমস্যার যৌথ সমাধানে বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে যৌথ উদ্যোগ
ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মরিশাস এবং বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে একত্রিত হন। সেশেলস পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে এবং মালয়েশিয়া অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে বৈঠকে অংশ নেয়। বৈঠকের আয়োজন করে ভারত।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল প্রধান ড. রহমান বলেন, বাংলাদেশ আশা করে সিএসসি একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিকশিত হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, কনক্লেভের পাঁচটি অগ্রাধিকার খাত—সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, সংঘবদ্ধ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা, সাইবার নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষা, এবং মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা—এই অঞ্চলে যৌথ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সন্ত্রাসবাদ, সাইবার হুমকি ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য
ড. রহমান বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জলদস্যুতা ও সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্যসহনশীল নীতি অনুসরণ করে। আমরা বারবার বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধ সব দেশে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। “বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা এখন অত্যন্ত উচ্চ অগ্রাধিকার।”
সাম্প্রতিক সময়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও ভুল তথ্য ছড়ানোর ধারাবাহিক প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তাঁর ভাষায়, “শুধু জাতীয় উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। আমাদের যৌথভাবে সাইবার নিরাপত্তা, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও ভুল তথ্য প্রতিহত করতে হবে।”
আস্থার ভিত্তিতে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ড. রহমান বলেন, “আঞ্চলিক নিরাপত্তার জটিলতা মোকাবিলায় পারস্পরিক আস্থা, সম্মান এবং পারস্পরিক সুবিধা ভাগাভাগির নীতিতে আমাদের অটল থাকা প্রয়োজন।”

তিনি ভারতকে ধন্যবাদ জানান বৈঠকের আয়োজন ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদানের জন্য।
বাংলাদেশ সিএসসি মহাসচিবের প্রতিবেদনকেও ইতিবাচক বলে মন্তব্য করে।
সদস্যপদ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা
বাংলাদেশ সিএসসি-এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে এবং সংগঠনের সনদে উল্লেখিত সার্বভৌমত্ব, সমতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মূলনীতির ভিত্তিতে ভবিষ্যতেও অংশ নেবে বলে জানান ড. রহমান।
৭ম বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলো ২০২৬ সালের কর্মপরিকল্পনা এবং পাঁচটি সহযোগিতা খাতের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে।
এর আগে, বুধবার ড. রহমান নয়াদিল্লিতে তাঁর ভারতীয় সমকক্ষ অজিত দোভালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সেখানে সিএসসি-র কার্যক্রম এবং দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ড. রহমান দোভালকে তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ সিএসসি-এর পঞ্চম সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়। বর্তমানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস ও মালদ্বীপ সদস্য এবং সেশেলস পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র।
Sarakhon Report 


















