বিয়ের সংখ্যা হ্রাস
২০২৪ সালে সিঙ্গাপুরে নাগরিক বিয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২,৯৫৫ এ, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ কম। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৪,৩৫৫। নাগরিক বিয়ে বলতে অন্তত একজন সিঙ্গাপুরীয়কে অন্তর্ভুক্ত করা বিয়েকে বোঝায়। দীর্ঘমেয়াদে দেখা যাচ্ছে, বিয়ের হারও কমছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২৩,০০০ নাগরিক বিয়ে হয়েছে, যেখানে আগের পাঁচ বছরে এই সংখ্যা ছিল গড়ে ২৩,৬০০।
বিয়ের বয়স বাড়ছে
সিঙ্গাপুরীয়রা ক্রমেই দেরিতে বিয়ে করছেন। ২০২৪ সালে প্রথমবার বিয়ের সময় পুরুষদের গড় বয়স ছিল ৩০.৮ বছর, যা দশ বছর আগে ছিল ৩০.১। মহিলাদের ক্ষেত্রে গড় বয়স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯.১ বছরে, যেখানে ২০১৪ সালে ছিল ২৭.৯।
একাকীত্বের প্রবণতা
২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় সব বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে একাকীত্বের হার বেড়েছে। অর্থাৎ ক্রমেই অনেকেই অবিবাহিত থেকে যাচ্ছেন।
ছোট হচ্ছে পরিবার
দেরিতে বিয়ের পাশাপাশি পরিবারও ছোট হচ্ছে। ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী সিঙ্গাপুরীয় নারীদের মধ্যে যারা জীবনে কখনো না কখনো বিয়ে করেছেন, তাদের মধ্যে ২০০৪ সালে যেখানে মাত্র ১৫.৯ শতাংশের একটি সন্তান ছিল, ২০২৪ সালে সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২.৮ শতাংশে।
একই সময়ে তিন বা তার বেশি সন্তানের মা হওয়ার হার কমে ৩৪.৫ শতাংশ থেকে ২০.৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে সন্তানহীন নারীর হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে: ২০০৪ সালের ৬.৭ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৪.৪ শতাংশে।
কারণ বিশ্লেষণ
নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তান পোহ লিন বলেছেন, দেরিতে বিয়ে করা বা বিয়েই না করার প্রবণতার পেছনে রয়েছে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা ও সামাজিক প্রত্যাশা। ফলে অনেক সিঙ্গাপুরীয় শিক্ষা ও ক্যারিয়ারকে ডেটিং ও বিয়ের চেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
অভিবাসীদের ভূমিকা
ফিলিপাইনের ব্যবসা বিশ্লেষক জেনিফেরিদা কাপুল ২০০৪ সালে কাজের জন্য সিঙ্গাপুরে আসেন এবং এখানেই স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৪৯ বছর বয়সী এই নারী ও তার চার সন্তান ২০২৪ সালে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পান। নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য তিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে ১০ বার আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের দক্ষতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তাই তাকে থাকতে উৎসাহিত করেছে। বর্তমানে তার সন্তানরা, যাদের বয়স ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, সক্রিয়ভাবে সমাজসেবায় যুক্ত।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক শ্যানন অং সতর্ক করে বলেছেন, নিম্ন জন্মহার সিঙ্গাপুরের জন্য বড় প্রভাব ফেলবে। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর যত্ন নিতে এবং শ্রমশক্তিকে টিকিয়ে রাখতে দেশকে আরও বেশি বিদেশি কর্মীর ওপর নির্ভর করতে হবে।
তিনি বলেন, যদি এই প্রবণতা বদলানো না যায়, তবে অভিবাসনের ওপর নির্ভরতা বাড়বে। তবে অতিরিক্ত অভিবাসন দ্রুত ঘটলে সামাজিক টানাপোড়েন এবং অভিবাসন বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে, যেমনটা অন্যান্য দেশে দেখা যাচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















