০১:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
“খাঁচায় বন্দি বানর” — প্রতীক না প্রতিবাদ? “আরব-মুসলিম বিশ্ব ও ইসরায়েলের জন্য মহান দিন”— চমকহীন কাহিনি ও কৃত্রিম বৈচিত্র্য—‘ট্রন: অ্যারিস’ কি সত্যিই রক্ষা করতে পারবে ক্লাসিক সিরিজকে? ইউরোপে নতুন যুগের সূচনা — পাসপোর্টে সিল নয়, এবার বায়োমেট্রিক চেকেই প্রবেশ ও প্রস্থান ছেলেদের বেড়ে ওঠা ও মায়ের উপলব্ধি — এক শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা বিপন্ন ইল মাছ রক্ষায় বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান: কানাডাসহ ১৮৫ দেশের করণীয় ডলার আস্থাহীনতার মাঝে রেকর্ড দামে স্বর্ণ ও বিটকয়েন নিলামে কেনা ডলার—বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে অর্থনীতির ভারসাম্য না অস্থিরতা? ১১ হাজার বছর আগের টরন্টোর হরিণের বরফযুগের রহস্যভেদ: বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার ‘টিট-ফর-ট্যাট’ প্রতিক্রিয়া? কেন চীন নতুন নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ময়দান ছুড়ে দিল

ঘেরাও–ফাঁদের জাল থেকে ভারত কীভাবে বেরোতে পারে

চীনের সঙ্গে তিয়ানজিনে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণযদিও প্রতীকীসম্পর্করিসেটের দিকে পা বাড়িয়েছে। কিন্তু কঠিন প্রশ্নগুলোর জবাব এখনো মেলেনি।

ভারত কি চারদিক থেকে ঘিরে ধরা হচ্ছেচারপাশে যা দেখছিতাতে মনে হচ্ছেইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক।

প্রথমতযুক্তরাষ্ট্র এখনো নিশ্চিত নয় যে তাদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের জায়গা কোথায়। ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক পরীক্ষার পর ভারতের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সময়কার ধাক্কাকে ছাড়িয়েসাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ভারতমার্কিন সম্পর্ককে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে যা শুধু ভালো বাণিজ্য চুক্তি করো” ধরনের চাপের বাইরে। আশাবাদীরা বলছেনদ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বহু গুরুত্বপূর্ণ দিক ভালোভাবে এগোচ্ছে। আবার অনেকে বলছেনযুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব নেমে গেছেরাশিয়া থেকে তেল কেনার জেরে ভারতের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক চাপানোযা আমাদের জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করেসেটিই তার প্রতীক। সত্যটি সম্ভবত মাঝামাঝি কোথাও।

তবে বড় ভূরাজনৈতিক ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত গুরুত্ব হারিয়েছেএ কথা তাড়াহুড়ো করে বলা যাবে না। ভারতীয় রপ্তানিকারককর্মসংস্থানশিক্ষার্থী এবং এইচ১বি ভিসার ওপর অবিরাম মার্কিন চাপ সত্ত্বেওএকটি ভারতমার্কিন বাণিজ্য চুক্তিদুই দেশের জন্যইএক ধরনের ইউরেকা” মুহূর্ত হতে পারে। কিন্তু যদি একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রচীন একটি চুক্তিতে পৌঁছে এশিয়ায় তাদের পারস্পরিক সমীকরণ পুনর্গঠন করেতবে ভারতের উদ্বেগ বাস্তব। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে হয়তো মোনরো ডকট্রিন”–জাতীয় কোনো মুহূর্ত আসবে নাযেখানে উভয় পক্ষ নিজ নিজ প্রভাববলয়ের রেখা টেনে দেয়তবু বিরল মৃত্তিকা খনিজের মতো বাণিজ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চীনের প্রভাব বিবেচনায়ইন্দোপ্যাসিফিক নিয়ে বেইজিং কোনো স্পষ্ট বোঝাপড়া চাইবেই। উপরন্তুইন্দোপ্যাসিফিকে জাপানদক্ষিণ কোরিয়াঅস্ট্রেলিয়া এমনকি তাইওয়াননিজেদের মিত্রদেরওআলতো করে সামলানোর মেজাজে ট্রাম্প প্রশাসন নেইএমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রচীন সমীকরণে ভারতের স্থান কতটা উঁচু হবেকোয়াড হয়তো শীতনিদ্রায় যেতে পারে।

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে'

তবু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি পদক্ষেপকে ভারতের বিরুদ্ধে বলে ধরা ফলপ্রসূ নয়। নিজের দেশের জনমত সন্তুষ্ট রেখেই ভারতীয় উদ্বেগ কমাতে যুক্তরাষ্ট্র আরও অনেক কিছু করতে পারে। শাস্তিমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা ভালো শুরুবিশেষত এ বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি ৬০% বেড়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমার কথা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সর্বোচ্চ হলে নীরবআর সর্বনিম্নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে নামছেযেমন রুশ প্রতিষ্ঠান রসনেফট যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু অংশীদারসেই নয়ারা এনার্জির বিরুদ্ধে। ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অসম বাণিজ্য চুক্তিতে গিয়েছেতাদের সামনে ছিলএকদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট ও তথাকথিত উদারনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখাআর অন্যদিকে নিজেদের অবস্থানে অটল থেকে আমেরিকান সমর্থন হারানো ও একা চীনের মুখোমুখি দাঁড়ানো। তাদের বিশ্বব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখেএবার প্রথমবারের মতো সেই চ্যালেঞ্জ এসেছে ভেতর থেকেঅর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। এমন পরিস্থিতিতেযুক্তরাজ্যের মতো ভারতইইউ বাণিজ্য চুক্তি পাকাপোক্ত করে উপস্থিতি জোরদার করার বদলেইইউ যেন ভুলপথে তৈরি করা নানা বিধিনিষেধ দিয়ে ভারতকে ঘিরে ধরতে চাইছে।

ঘরের কাছেইচীনের সঙ্গে তিয়ানজিনে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রতীকী রিসেটের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু গালওয়ানে অমীমাংসিত উত্তেজনানিয়ন্ত্রণ (ডিএসকেলেশন), “আয়রন ব্রাদার” পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দিয়ে ভারতকে ঘিরে ধরাবাংলাদেশে প্রভাব বাড়ানোনেপাল ও মালদ্বীপে প্রভাববলয় শক্তিশালী করাএসব কঠিন প্রশ্নের জবাব এখনো বাকি। উপরন্তুবিপুল বাণিজ্য ঘাটতিগুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানি আটকে দেওয়াভারতীয় কোম্পানিগুলো থেকে তাদের নাগরিকদের প্রত্যাহারআর ব্রহ্মপুত্রের তাদের দিকের সীমান্তঘেঁষা অংশে সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণএসবই ইঙ্গিত দেয়ভারতকে চারদিক থেকে চেপে ধরাই তাদের উদ্দেশ্য।

বিচিত্রভাবেপশ্চিমের ভুলপথে যাওয়া অর্থনৈতিক নীতির মোকাবিলার একটি কার্যকর রাস্তা চীনের মধ্য দিয়েই মেলে। চীনের সঙ্গে পুরোনো নিরাপত্তাটেমপ্লেট ভেঙে যাওয়ায়এখন সময় এসেছে এমন এক পারস্পরিক সুফলমুখী সম্পৃক্ততারযেখানে নিরাপত্তাবহির্ভূত খাতে চীনা বিনিয়োগ ভারতে প্রবাহিত হবেবিনিময়ে ভারতীয় বিনিয়োগের জন্য চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার মিলবে। ভারতচীনকে একসঙ্গে ব্যবসা করতে দেখার চেয়ে পশ্চিমের ওপর চাপ বাড়ায় এমন দৃশ্য আর কিছু নেই!

সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে মুখ খুলল ভারত

পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিএকজনের ওপর আগ্রাসন মানে দুজনের ওপরই আগ্রাসন। কেউ কেউ বলছেনএটি ভারতের বিরুদ্ধে নয়ইসরায়েলের দিকে লক্ষ্য করেআবার অনেকে মনে করেনএমন বোঝাপড়া আগেও অনানুষ্ঠানিকভাবে ছিলতাই খুব প্রভাব ফেলবে না। তবু নীরব সমঝোতা যখন লিখিত চুক্তিতে পরিণত হয়তার তাৎপর্য থাকেএটিকে হালকাভাবে নেওয়া ভুল হবে। উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে সর্বোত্তম অবস্থায়এটি সরকারের অন্যতম অর্জনতবু এই চুক্তি আঞ্চলিক বৃহত্তর সমীকরণকে জটিল করে তুলবেবিশেষ করে যদি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যরা এতে যুক্ত হয়। তদুপরি, “অপারেশন সিন্ধূর”–এর পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একবার নয়দুবার সাক্ষাৎ করেছেনযা পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক পুনর্বাসনে নতুন গতি জুগিয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে আকাশথেকেআকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করছে। এমন সময়েইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতসহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভারতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞার ছাড় যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করেছেফলে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় ভারতের প্রবেশের ভূরাজনৈতিক দরজাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছেযা পাকিস্তান ও চীনেরই মন ভরাবে।

ভূরাজনীতি ও দ্বিপাক্ষিক সমীকরণ বদলাচ্ছেএই প্রেক্ষাপটে ভারতকে নিজের প্রভাব ও দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে হবেবৈশ্বিক সংঘাত ও চ্যালেঞ্জ সমাধানের প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নয়কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বিস্তৃত করেতা ত্যাগ করে নয়এবং গভীরতর সংস্কার শুরু করে। তবেই আমরা ঘিরে ধরার প্রচেষ্টা মোকাবিলা করে তা অতিক্রম করতে পারব।

লেখক: টি এস তিরুমূর্তি জাতিসংঘে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি (নিউ ইয়র্ক)।

জনপ্রিয় সংবাদ

“খাঁচায় বন্দি বানর” — প্রতীক না প্রতিবাদ?

ঘেরাও–ফাঁদের জাল থেকে ভারত কীভাবে বেরোতে পারে

০৮:০০:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

চীনের সঙ্গে তিয়ানজিনে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণযদিও প্রতীকীসম্পর্করিসেটের দিকে পা বাড়িয়েছে। কিন্তু কঠিন প্রশ্নগুলোর জবাব এখনো মেলেনি।

ভারত কি চারদিক থেকে ঘিরে ধরা হচ্ছেচারপাশে যা দেখছিতাতে মনে হচ্ছেইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক।

প্রথমতযুক্তরাষ্ট্র এখনো নিশ্চিত নয় যে তাদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের জায়গা কোথায়। ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক পরীক্ষার পর ভারতের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সময়কার ধাক্কাকে ছাড়িয়েসাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ভারতমার্কিন সম্পর্ককে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে যা শুধু ভালো বাণিজ্য চুক্তি করো” ধরনের চাপের বাইরে। আশাবাদীরা বলছেনদ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বহু গুরুত্বপূর্ণ দিক ভালোভাবে এগোচ্ছে। আবার অনেকে বলছেনযুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব নেমে গেছেরাশিয়া থেকে তেল কেনার জেরে ভারতের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক চাপানোযা আমাদের জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করেসেটিই তার প্রতীক। সত্যটি সম্ভবত মাঝামাঝি কোথাও।

তবে বড় ভূরাজনৈতিক ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত গুরুত্ব হারিয়েছেএ কথা তাড়াহুড়ো করে বলা যাবে না। ভারতীয় রপ্তানিকারককর্মসংস্থানশিক্ষার্থী এবং এইচ১বি ভিসার ওপর অবিরাম মার্কিন চাপ সত্ত্বেওএকটি ভারতমার্কিন বাণিজ্য চুক্তিদুই দেশের জন্যইএক ধরনের ইউরেকা” মুহূর্ত হতে পারে। কিন্তু যদি একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রচীন একটি চুক্তিতে পৌঁছে এশিয়ায় তাদের পারস্পরিক সমীকরণ পুনর্গঠন করেতবে ভারতের উদ্বেগ বাস্তব। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে হয়তো মোনরো ডকট্রিন”–জাতীয় কোনো মুহূর্ত আসবে নাযেখানে উভয় পক্ষ নিজ নিজ প্রভাববলয়ের রেখা টেনে দেয়তবু বিরল মৃত্তিকা খনিজের মতো বাণিজ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চীনের প্রভাব বিবেচনায়ইন্দোপ্যাসিফিক নিয়ে বেইজিং কোনো স্পষ্ট বোঝাপড়া চাইবেই। উপরন্তুইন্দোপ্যাসিফিকে জাপানদক্ষিণ কোরিয়াঅস্ট্রেলিয়া এমনকি তাইওয়াননিজেদের মিত্রদেরওআলতো করে সামলানোর মেজাজে ট্রাম্প প্রশাসন নেইএমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রচীন সমীকরণে ভারতের স্থান কতটা উঁচু হবেকোয়াড হয়তো শীতনিদ্রায় যেতে পারে।

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে'

তবু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি পদক্ষেপকে ভারতের বিরুদ্ধে বলে ধরা ফলপ্রসূ নয়। নিজের দেশের জনমত সন্তুষ্ট রেখেই ভারতীয় উদ্বেগ কমাতে যুক্তরাষ্ট্র আরও অনেক কিছু করতে পারে। শাস্তিমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা ভালো শুরুবিশেষত এ বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি ৬০% বেড়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমার কথা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সর্বোচ্চ হলে নীরবআর সর্বনিম্নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে নামছেযেমন রুশ প্রতিষ্ঠান রসনেফট যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু অংশীদারসেই নয়ারা এনার্জির বিরুদ্ধে। ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অসম বাণিজ্য চুক্তিতে গিয়েছেতাদের সামনে ছিলএকদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট ও তথাকথিত উদারনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখাআর অন্যদিকে নিজেদের অবস্থানে অটল থেকে আমেরিকান সমর্থন হারানো ও একা চীনের মুখোমুখি দাঁড়ানো। তাদের বিশ্বব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখেএবার প্রথমবারের মতো সেই চ্যালেঞ্জ এসেছে ভেতর থেকেঅর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। এমন পরিস্থিতিতেযুক্তরাজ্যের মতো ভারতইইউ বাণিজ্য চুক্তি পাকাপোক্ত করে উপস্থিতি জোরদার করার বদলেইইউ যেন ভুলপথে তৈরি করা নানা বিধিনিষেধ দিয়ে ভারতকে ঘিরে ধরতে চাইছে।

ঘরের কাছেইচীনের সঙ্গে তিয়ানজিনে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রতীকী রিসেটের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু গালওয়ানে অমীমাংসিত উত্তেজনানিয়ন্ত্রণ (ডিএসকেলেশন), “আয়রন ব্রাদার” পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দিয়ে ভারতকে ঘিরে ধরাবাংলাদেশে প্রভাব বাড়ানোনেপাল ও মালদ্বীপে প্রভাববলয় শক্তিশালী করাএসব কঠিন প্রশ্নের জবাব এখনো বাকি। উপরন্তুবিপুল বাণিজ্য ঘাটতিগুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানি আটকে দেওয়াভারতীয় কোম্পানিগুলো থেকে তাদের নাগরিকদের প্রত্যাহারআর ব্রহ্মপুত্রের তাদের দিকের সীমান্তঘেঁষা অংশে সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণএসবই ইঙ্গিত দেয়ভারতকে চারদিক থেকে চেপে ধরাই তাদের উদ্দেশ্য।

বিচিত্রভাবেপশ্চিমের ভুলপথে যাওয়া অর্থনৈতিক নীতির মোকাবিলার একটি কার্যকর রাস্তা চীনের মধ্য দিয়েই মেলে। চীনের সঙ্গে পুরোনো নিরাপত্তাটেমপ্লেট ভেঙে যাওয়ায়এখন সময় এসেছে এমন এক পারস্পরিক সুফলমুখী সম্পৃক্ততারযেখানে নিরাপত্তাবহির্ভূত খাতে চীনা বিনিয়োগ ভারতে প্রবাহিত হবেবিনিময়ে ভারতীয় বিনিয়োগের জন্য চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার মিলবে। ভারতচীনকে একসঙ্গে ব্যবসা করতে দেখার চেয়ে পশ্চিমের ওপর চাপ বাড়ায় এমন দৃশ্য আর কিছু নেই!

সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে মুখ খুলল ভারত

পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিএকজনের ওপর আগ্রাসন মানে দুজনের ওপরই আগ্রাসন। কেউ কেউ বলছেনএটি ভারতের বিরুদ্ধে নয়ইসরায়েলের দিকে লক্ষ্য করেআবার অনেকে মনে করেনএমন বোঝাপড়া আগেও অনানুষ্ঠানিকভাবে ছিলতাই খুব প্রভাব ফেলবে না। তবু নীরব সমঝোতা যখন লিখিত চুক্তিতে পরিণত হয়তার তাৎপর্য থাকেএটিকে হালকাভাবে নেওয়া ভুল হবে। উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বর্তমানে সর্বোত্তম অবস্থায়এটি সরকারের অন্যতম অর্জনতবু এই চুক্তি আঞ্চলিক বৃহত্তর সমীকরণকে জটিল করে তুলবেবিশেষ করে যদি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যরা এতে যুক্ত হয়। তদুপরি, “অপারেশন সিন্ধূর”–এর পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একবার নয়দুবার সাক্ষাৎ করেছেনযা পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক পুনর্বাসনে নতুন গতি জুগিয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে আকাশথেকেআকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করছে। এমন সময়েইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতসহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভারতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞার ছাড় যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করেছেফলে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় ভারতের প্রবেশের ভূরাজনৈতিক দরজাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছেযা পাকিস্তান ও চীনেরই মন ভরাবে।

ভূরাজনীতি ও দ্বিপাক্ষিক সমীকরণ বদলাচ্ছেএই প্রেক্ষাপটে ভারতকে নিজের প্রভাব ও দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে হবেবৈশ্বিক সংঘাত ও চ্যালেঞ্জ সমাধানের প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নয়কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বিস্তৃত করেতা ত্যাগ করে নয়এবং গভীরতর সংস্কার শুরু করে। তবেই আমরা ঘিরে ধরার প্রচেষ্টা মোকাবিলা করে তা অতিক্রম করতে পারব।

লেখক: টি এস তিরুমূর্তি জাতিসংঘে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি (নিউ ইয়র্ক)।