১১:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
দ্য হান্টিং ওয়াইভস’ নিয়ে এসএনএলের ব্যঙ্গ—অব্রি প্লাজার চমক জিওইঞ্জিনিয়ারিং আলোচনায় কেন্দ্রস্থ—কীভাবে গবেষণা, কতটা শাসন ১৮৪ দিনের ওসাকা এক্সপো শেষ—২৮ মিলিয়ন দর্শনার্থীর পর স্থায়ী উত্তরাধিকার কী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৫) একজন অভিনেতা, কবি ও মানুষ: শৈশব থেকে শিল্পের শীর্ষে শাহেদ শরীফ খানের জীবনগাথা চিড়িয়াখানার মৃত্যু উপত্যকা—অবহেলা, দুর্নীতি ও প্রাণহীন প্রশাসন -তৃতীয় পর্ব নারায়ণগঞ্জে কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ৭ শ্রমিক স্বচ্ছ জল, নীল আকাশ, পাহাড়ের কোলে বয়ে চলা এক জাদুকরী স্বর্গনদী—জাদুকাটা নদী স্বর্গের ছায়া নেমে এসেছে সুনামগঞ্জে সাভারে মানবপাচার চক্রের আট সদস্য গ্রেপ্তার ইউরোপে বিমানবন্দর–গ্রিডের ওপর ড্রোন অনুপ্রবেশ—প্রতিরোধে সেন্সর, জ্যামিং, নতুন বিধি

বৈশ্বিক গাড়িনির্মাতাদের চীনে থাকা দরকার—তবেই চীনের বাইরে টিকে লড়াই করা যাবে

আন্তর্জাতিক গাড়িনির্মাতাদের জন্য চীনে বিনিয়োগ একসময় ছিল প্রায় নিঃসন্দেহ’ সিদ্ধান্ত। ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রইউরোপজাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাতারা দলে দলে ওই দেশে গিয়েছিলযখন চীন ধীরে ধীরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অটোবাজারে পরিণত হচ্ছিল। সরকার নির্ধারিত নিয়মে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে স্থানীয় অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে বেঁধে রাখা হলেওতারা তবু বাজারশেয়ার কুড়িয়ে নিত এবং লাভ করত।

বর্তমান বাস্তবতা: চীনে ধনী হওয়া আর সহজ নয়

এখনঅন্তত বিদেশি নির্মাতাদের জন্যচীনে অর্থ উপার্জন সহজ কথা নয়। মাত্র পাঁচ বছরে বিদেশি গাড়িনির্মাতাদের ভাগ্য আমূল পাল্টে গেছে। ২০২০ সালেও চীনের লাইট ভেহিকল বিক্রির ৬০%-এর বেশি ছিল আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দখলে। গত বছর তাদের অংশ নেমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫%-এ। বাকি অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। ফলে বৈশ্বিক নির্মাতাদের সামনে প্রশ্নতারা থাকবেনাকি চলে যাবে?

নীতিগত বাধা ও প্রারম্ভিক শর্ত

শুরুর দিন থেকেই বেইজিংয়ের আরোপিত নীতিমালায় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো ছিল সীমাবদ্ধ। ১৫% শুল্ক তাদের নিজ নিজ দেশে তৈরি গাড়ি চীনে আমদানির সক্ষমতাকে সীমিত করেছে। আবার ২০২২ সাল পর্যন্ত চীনে কারখানা বসাতে হলে স্থানীয় নির্মাতাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যেতে হতোযাদের অনেকে ছিল রাষ্ট্রানুগ সহায়তার ওপর দাঁড়ানো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানতারা সচরাচর তৎপর উদ্ভাবকের চেয়ে স্থানীয় কর্মসংস্থানের গ্যারান্টর’-এর মতো আচরণ করত। এরই ফাঁকে বেসরকারি নবীন খেলোয়াড়চেরিজিলিদ্রুত এগিয়ে যায়। পরে একেবারে কাটা-ছেঁড়া-নতুন ইভি স্টার্টআপএক্সপেংনিওবিওয়াইডিলি অটোচীনের বাইরে খুব একটা পরিচিত না হয়েও বিক্রির তালিকায় উঠে আসে এবং বৈশ্বিক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

Glory days for automakers like Ford, General Motors in China are over | CNN  Business

দেশীয় ইকোসিস্টেমের জোর

দেশীয় দলের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশাল ইকোসিস্টেমবিশ্বের সবচেয়ে বড় ইভি ব্যাটারি নির্মাতা সিএটিএল এবং বাইডু-শাওমির মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট। স্বয়ংক্রিয় চালনাকানেক্টিভিটিবিদ্যুতায়ন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এরা স্থানীয় গাড়িশিল্পের সঙ্গে ক্রস-ফার্টিলাইজেশন’ করে গেছে। দেশপ্রেমের আবেগ কিছুটা থাকলেওমূলত স্থানীয় রুচি ও প্রয়োজনের সঙ্গে ভালোভাবে মিল খাওয়ায় ভোক্তারা দেশীয় ব্র্যান্ডকে দ্রুত গ্রহণ করেছে। এই আক্রমণের মুখে টেসলার মতো বিদেশি প্রিয় নামও বাজারশেয়ার হারাচ্ছে।

সরে যাওয়াকাটছাঁট ও রপ্তানিমুখী কৌশল

সুজুকিমিৎসুবিশিরেনোজিপফিয়াটকেউ কেউ চীন বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে বা ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। নিসান ও হোন্ডা চীনে উৎপাদন কমানোর কথা ভাবছে। জেনারেল মোটরস তাদের চীনা কারখানার অব্যবহৃত সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানিমুখী করছে।

চীন ছাড়ার বড় ঝুঁকি: বৈশ্বিক বাজারে সুনামি

তবে চীন থেকে সরে দাঁড়ানোর মধ্যে বড় ঝুঁকি আছে। যখন চীনা ব্র্যান্ডগুলো বৈশ্বিক বাজারে ঢল নামাবেতখন তাদের মোকাবিলা আরও কঠিন হবে। আর সন্দেহ নেইতারা আসছেই। ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্তচীনা নামগুলো ইতোমধ্যেই এগোচ্ছে এবং বাজারশেয়ার বাড়াচ্ছে। বিওয়াইডির মতো উচ্চাভিলাষী নির্মাতা জাপান ও ভারতকেও লক্ষ্য করছে। শেষ পর্যন্ত তারা যুক্তরাষ্ট্রেও ঢুকতে পারেযদিও আপাতত বাজারটি তাদের জন্য প্রায় দেয়ালতুল্য সুরক্ষিত।

To Survive in China, Global Automakers Tap Local Tech Giants - WSJ

বিশেষজ্ঞের সতর্কবাণী

দীর্ঘদিনের চীন-বিশ্লেষক এবং ডান ইনসাইটসের সিইও মাইকেল ডান সেপ্টেম্বর মাসে ডেট্রয়েটে অটোমোটিভ নিউজ কংগ্রেস’-এ সরাসরি বলেন, “চীনকে ভাবুন এক বিশাল ভূমিকম্পযার পর আসে ধ্বংসাত্মক সুনামি।” তার মতেএখনো তুলনামূলক বিচ্ছিন্ন ও সুরক্ষিত নিজস্ব বাজারে কাজ করা প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলো চীনের কম-খরচের প্রতিযোগিতার পূর্ণ অভিঘাত অনুভবই করেনি। ঢেউ যখন সত্যিই আঘাত করবেতখন কি তারা প্রস্তুত থাকবে?

চীনে থেকে শেখা হার্ড-নক’ শিক্ষা

চীনে থেকে যারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেতারাই হয়তো সবচেয়ে প্রস্তুত থাকবেকারণ তারা কঠিন বাস্তবতা থেকে শিখছে। নিসান ও জিএম প্রথমে এমন ইভি চীনে বিক্রি করতে চেয়েছিলযেগুলো বিদেশে বিদেশি ক্রেতার জন্য প্রকৌশলীকৃত ছিল। স্থানীয় প্রতিযোগীদের সঙ্গে সেগুলো পাল্লা দিতে পারেনি। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা কৌশল বদলে ফেলে।

স্থানীয়করণের নতুন কৌশল ও ফল

এখন নিসান ও জিএম তাদের স্থানীয় অংশীদারদের ওপর ভর করে এমন ইভি আনছেযেগুলো চীনেই চীনা প্রকৌশলীরা চীনা গ্রাহকদের জন্য ডিজাইন করছে। এই কৌশল ইতিমধ্যে আশাব্যঞ্জক। ২০১৮ সালের পর থেকে চীনে নিসানের বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমেছিলএ বছর স্থানীয়ভাবে তৈরি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক সেডান আনার পর প্রায় অলৌকিকভাবে’ সেই নিম্নমুখী প্রবণতা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জিএম বুইক ইলেক্ট্রা সাব-ব্র্যান্ডের জন্য চীনে প্রকৌশলীকৃত নতুন ইভি প্ল্যাটফর্মে একই পথ ধরেছে। টয়োটা চীনা-উন্নীত বৈদ্যুতিক কমপ্যাক্ট ক্রসওভারে সাফল্য পেয়েছে। অডিরেনোফক্সভাগেনফোর্ডঅনেকেই এখন এই খেলায় নেমেছে।

Four Pillars in Global Carmakers' China Survival Plans - Bloomberg

দ্রুতসাশ্রয়ী ও উচ্চপ্রযুক্তি: ইন চায়না ফর চায়না’ থেকে ইন চায়না ফর দ্য ওয়ার্ল্ড

স্থানীয় দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নতুন পণ্যগুলো একই সঙ্গে কম-খরচে ও উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন হচ্ছেএবং বাজারে আসছে অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। কিছু বিদেশি নির্মাতা এখন ২০ মাসেরও কম সময়ে নতুন পণ্য নামাচ্ছেযেখানে আগে লাগত কয়েক বছর। কেউ কেউ আবার এসব চীন-অনুপ্রাণিত’ স্থাপত্যে বৈশ্বিক পণ্য গড়ার পরিকল্পনাও করছে। শুরুতে যাকে বলা হয়েছিল ইন চায়না ফর চায়না’, তা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠতে পারে ইন চায়না ফর দ্য ওয়ার্ল্ড

শিক্ষক-ছাত্রের উল্টোচিত্র

চীনে প্রথম ঢোকার সময় বিদেশি নির্মাতারাই ছিল শিক্ষকপ্রযুক্তিগত জ্ঞান ও সাপ্লাই-চেইন দক্ষতা তারা নবীন চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের শিখিয়ে দিত। এখন ছাত্ররাই গুরু’ হয়ে গেছেপুরোনো ধাতু-কেন্দ্রিক নির্মাণ কায়দাকে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দিচ্ছে। উল্টোমুখী এই প্রযুক্তি-হস্তান্তর দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি নির্মাতাদের জন্য সর্বসমাধান হবে কি নাএখনই বলা যায় না। তবু সম্ভাবনা আছেচীনে প্রতিযোগিতা তাদের জন্য খাড়া চড়াই হয়েই থাকবে।

কেন চীনে থাকা দরকার

বুদ্ধিমান ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ডগুলো চীনে থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পথই বেছে নেবে। কারণযদি তারা চীনে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে সফলভাবে টিকতে পারেতবে পৃথিবীর যেকোনো বাজারেই তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব হবে। চীনে থাকা মানে কেবল বর্তমান বাজার রক্ষা নয়আসন্ন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য সবচেয়ে কঠিনতবু সবচেয়ে কার্যকর প্রশিক্ষণ নেওয়া।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্য হান্টিং ওয়াইভস’ নিয়ে এসএনএলের ব্যঙ্গ—অব্রি প্লাজার চমক

বৈশ্বিক গাড়িনির্মাতাদের চীনে থাকা দরকার—তবেই চীনের বাইরে টিকে লড়াই করা যাবে

০৫:৫৭:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

আন্তর্জাতিক গাড়িনির্মাতাদের জন্য চীনে বিনিয়োগ একসময় ছিল প্রায় নিঃসন্দেহ’ সিদ্ধান্ত। ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রইউরোপজাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাতারা দলে দলে ওই দেশে গিয়েছিলযখন চীন ধীরে ধীরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অটোবাজারে পরিণত হচ্ছিল। সরকার নির্ধারিত নিয়মে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে স্থানীয় অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে বেঁধে রাখা হলেওতারা তবু বাজারশেয়ার কুড়িয়ে নিত এবং লাভ করত।

বর্তমান বাস্তবতা: চীনে ধনী হওয়া আর সহজ নয়

এখনঅন্তত বিদেশি নির্মাতাদের জন্যচীনে অর্থ উপার্জন সহজ কথা নয়। মাত্র পাঁচ বছরে বিদেশি গাড়িনির্মাতাদের ভাগ্য আমূল পাল্টে গেছে। ২০২০ সালেও চীনের লাইট ভেহিকল বিক্রির ৬০%-এর বেশি ছিল আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দখলে। গত বছর তাদের অংশ নেমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫%-এ। বাকি অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। ফলে বৈশ্বিক নির্মাতাদের সামনে প্রশ্নতারা থাকবেনাকি চলে যাবে?

নীতিগত বাধা ও প্রারম্ভিক শর্ত

শুরুর দিন থেকেই বেইজিংয়ের আরোপিত নীতিমালায় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো ছিল সীমাবদ্ধ। ১৫% শুল্ক তাদের নিজ নিজ দেশে তৈরি গাড়ি চীনে আমদানির সক্ষমতাকে সীমিত করেছে। আবার ২০২২ সাল পর্যন্ত চীনে কারখানা বসাতে হলে স্থানীয় নির্মাতাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যেতে হতোযাদের অনেকে ছিল রাষ্ট্রানুগ সহায়তার ওপর দাঁড়ানো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানতারা সচরাচর তৎপর উদ্ভাবকের চেয়ে স্থানীয় কর্মসংস্থানের গ্যারান্টর’-এর মতো আচরণ করত। এরই ফাঁকে বেসরকারি নবীন খেলোয়াড়চেরিজিলিদ্রুত এগিয়ে যায়। পরে একেবারে কাটা-ছেঁড়া-নতুন ইভি স্টার্টআপএক্সপেংনিওবিওয়াইডিলি অটোচীনের বাইরে খুব একটা পরিচিত না হয়েও বিক্রির তালিকায় উঠে আসে এবং বৈশ্বিক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

Glory days for automakers like Ford, General Motors in China are over | CNN  Business

দেশীয় ইকোসিস্টেমের জোর

দেশীয় দলের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশাল ইকোসিস্টেমবিশ্বের সবচেয়ে বড় ইভি ব্যাটারি নির্মাতা সিএটিএল এবং বাইডু-শাওমির মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট। স্বয়ংক্রিয় চালনাকানেক্টিভিটিবিদ্যুতায়ন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এরা স্থানীয় গাড়িশিল্পের সঙ্গে ক্রস-ফার্টিলাইজেশন’ করে গেছে। দেশপ্রেমের আবেগ কিছুটা থাকলেওমূলত স্থানীয় রুচি ও প্রয়োজনের সঙ্গে ভালোভাবে মিল খাওয়ায় ভোক্তারা দেশীয় ব্র্যান্ডকে দ্রুত গ্রহণ করেছে। এই আক্রমণের মুখে টেসলার মতো বিদেশি প্রিয় নামও বাজারশেয়ার হারাচ্ছে।

সরে যাওয়াকাটছাঁট ও রপ্তানিমুখী কৌশল

সুজুকিমিৎসুবিশিরেনোজিপফিয়াটকেউ কেউ চীন বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে বা ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। নিসান ও হোন্ডা চীনে উৎপাদন কমানোর কথা ভাবছে। জেনারেল মোটরস তাদের চীনা কারখানার অব্যবহৃত সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানিমুখী করছে।

চীন ছাড়ার বড় ঝুঁকি: বৈশ্বিক বাজারে সুনামি

তবে চীন থেকে সরে দাঁড়ানোর মধ্যে বড় ঝুঁকি আছে। যখন চীনা ব্র্যান্ডগুলো বৈশ্বিক বাজারে ঢল নামাবেতখন তাদের মোকাবিলা আরও কঠিন হবে। আর সন্দেহ নেইতারা আসছেই। ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্তচীনা নামগুলো ইতোমধ্যেই এগোচ্ছে এবং বাজারশেয়ার বাড়াচ্ছে। বিওয়াইডির মতো উচ্চাভিলাষী নির্মাতা জাপান ও ভারতকেও লক্ষ্য করছে। শেষ পর্যন্ত তারা যুক্তরাষ্ট্রেও ঢুকতে পারেযদিও আপাতত বাজারটি তাদের জন্য প্রায় দেয়ালতুল্য সুরক্ষিত।

To Survive in China, Global Automakers Tap Local Tech Giants - WSJ

বিশেষজ্ঞের সতর্কবাণী

দীর্ঘদিনের চীন-বিশ্লেষক এবং ডান ইনসাইটসের সিইও মাইকেল ডান সেপ্টেম্বর মাসে ডেট্রয়েটে অটোমোটিভ নিউজ কংগ্রেস’-এ সরাসরি বলেন, “চীনকে ভাবুন এক বিশাল ভূমিকম্পযার পর আসে ধ্বংসাত্মক সুনামি।” তার মতেএখনো তুলনামূলক বিচ্ছিন্ন ও সুরক্ষিত নিজস্ব বাজারে কাজ করা প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলো চীনের কম-খরচের প্রতিযোগিতার পূর্ণ অভিঘাত অনুভবই করেনি। ঢেউ যখন সত্যিই আঘাত করবেতখন কি তারা প্রস্তুত থাকবে?

চীনে থেকে শেখা হার্ড-নক’ শিক্ষা

চীনে থেকে যারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেতারাই হয়তো সবচেয়ে প্রস্তুত থাকবেকারণ তারা কঠিন বাস্তবতা থেকে শিখছে। নিসান ও জিএম প্রথমে এমন ইভি চীনে বিক্রি করতে চেয়েছিলযেগুলো বিদেশে বিদেশি ক্রেতার জন্য প্রকৌশলীকৃত ছিল। স্থানীয় প্রতিযোগীদের সঙ্গে সেগুলো পাল্লা দিতে পারেনি। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা কৌশল বদলে ফেলে।

স্থানীয়করণের নতুন কৌশল ও ফল

এখন নিসান ও জিএম তাদের স্থানীয় অংশীদারদের ওপর ভর করে এমন ইভি আনছেযেগুলো চীনেই চীনা প্রকৌশলীরা চীনা গ্রাহকদের জন্য ডিজাইন করছে। এই কৌশল ইতিমধ্যে আশাব্যঞ্জক। ২০১৮ সালের পর থেকে চীনে নিসানের বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমেছিলএ বছর স্থানীয়ভাবে তৈরি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক সেডান আনার পর প্রায় অলৌকিকভাবে’ সেই নিম্নমুখী প্রবণতা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জিএম বুইক ইলেক্ট্রা সাব-ব্র্যান্ডের জন্য চীনে প্রকৌশলীকৃত নতুন ইভি প্ল্যাটফর্মে একই পথ ধরেছে। টয়োটা চীনা-উন্নীত বৈদ্যুতিক কমপ্যাক্ট ক্রসওভারে সাফল্য পেয়েছে। অডিরেনোফক্সভাগেনফোর্ডঅনেকেই এখন এই খেলায় নেমেছে।

Four Pillars in Global Carmakers' China Survival Plans - Bloomberg

দ্রুতসাশ্রয়ী ও উচ্চপ্রযুক্তি: ইন চায়না ফর চায়না’ থেকে ইন চায়না ফর দ্য ওয়ার্ল্ড

স্থানীয় দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নতুন পণ্যগুলো একই সঙ্গে কম-খরচে ও উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন হচ্ছেএবং বাজারে আসছে অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। কিছু বিদেশি নির্মাতা এখন ২০ মাসেরও কম সময়ে নতুন পণ্য নামাচ্ছেযেখানে আগে লাগত কয়েক বছর। কেউ কেউ আবার এসব চীন-অনুপ্রাণিত’ স্থাপত্যে বৈশ্বিক পণ্য গড়ার পরিকল্পনাও করছে। শুরুতে যাকে বলা হয়েছিল ইন চায়না ফর চায়না’, তা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠতে পারে ইন চায়না ফর দ্য ওয়ার্ল্ড

শিক্ষক-ছাত্রের উল্টোচিত্র

চীনে প্রথম ঢোকার সময় বিদেশি নির্মাতারাই ছিল শিক্ষকপ্রযুক্তিগত জ্ঞান ও সাপ্লাই-চেইন দক্ষতা তারা নবীন চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের শিখিয়ে দিত। এখন ছাত্ররাই গুরু’ হয়ে গেছেপুরোনো ধাতু-কেন্দ্রিক নির্মাণ কায়দাকে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দিচ্ছে। উল্টোমুখী এই প্রযুক্তি-হস্তান্তর দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি নির্মাতাদের জন্য সর্বসমাধান হবে কি নাএখনই বলা যায় না। তবু সম্ভাবনা আছেচীনে প্রতিযোগিতা তাদের জন্য খাড়া চড়াই হয়েই থাকবে।

কেন চীনে থাকা দরকার

বুদ্ধিমান ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ডগুলো চীনে থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পথই বেছে নেবে। কারণযদি তারা চীনে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে সফলভাবে টিকতে পারেতবে পৃথিবীর যেকোনো বাজারেই তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব হবে। চীনে থাকা মানে কেবল বর্তমান বাজার রক্ষা নয়আসন্ন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য সবচেয়ে কঠিনতবু সবচেয়ে কার্যকর প্রশিক্ষণ নেওয়া।