০১:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৭৬ শতাংশে নেমে আসছে — আইএমএফের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনীতির ধীরগতি ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকির ইঙ্গিত শিয়ালবাড়ি অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মরদেহ শনাক্তে প্রয়োজন হতে পারে ডিএনএ পরীক্ষা কানাডা-ভারত —সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে দুই দেশ বলিউডের পর্দায় বৃষ্টিতে ভেজা প্রেম—বলিউডের চিরন্তন রোমান্সের প্রতীক অপরাধচক্রের কবলে কম্বোডিয়া—কোরিয়ান নাগরিক অপহরণে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ কে-বিউটির বিশ্বজোড়া উন্মাদনা—বিনোদনের নতুন রূপে কোরিয়ার সৌন্দর্য শিল্প মালয়েশিয়ার উকায় পেরদানায় ‘বাঘের গর্জন’ রহস্য—বন্যপ্রাণি বিভাগ বলছে শূকর ও কুকুরের পদচিহ্ন শিশুদের মধ্যে ই-সিগারেট আসক্তি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ আলট্রা-প্রসেসড খাবারই বাড়াচ্ছে ওজন ও আসক্তি—গবেষকদের নতুন বিশ্লেষণ ইসরায়েলে ট্রাম্পকে নায়কের মর্যাদা গাজার যুদ্ধবিরতিতে ঐতিহাসিক মোড়—

যখন নারীরা ‘না’ বলল

তারা দুপুরে ছোট্ট বিরতি নিচ্ছিলেন, এমন সময় কয়েকজন পুরুষ ঢুকে পড়ল। তাদের নেতা ছিলেন রাষ্ট্রীয় হিন্দু শক্তি সংগঠনের সভাপতি রঘবেন্দ্র ভাটনগর; সঙ্গে ছিলেন ক্যামেরাম্যানও। বার্তাটি ছিল খুবই সরল—পরের দিন ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য মিস ঋষিকেশ প্রতিযোগিতার জন্য রিহার্সাল করছিলেন যে ২০ জন তরুণী, তাদের বলা হলো: বাড়ি ফিরে যাও।

“তিনি বললেন, ‘ড্রেস রিহার্সাল শেষ। সবাই বাড়ি যেতে পারেন’,” বলেন প্রতিযোগী মুসকান শর্মা; তিনিই পরে প্রতিযোগিতায় জয়ী হন। আকস্মিক এই অনধিকার প্রবেশের অভিজ্ঞতা এভাবেই মনে করলেন তিনি।

একটি ভিডিও অল্প সময়ের জন্য ভাইরাল হয়েছিল—সেখানে দেখা যায়, ক্ষুব্ধ ওই ব্যক্তি মেয়েদের ধমকাচ্ছেন। “এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়,” তিনি বলেন। কিন্তু তারা দমে যাওয়ার পাত্র নন। মুসকান জিজ্ঞেস করেন, “যে দোকানে এই পোশাক বিক্রি হয় সেগুলো বন্ধ করেন না কেন?”

“আমাকে কী করতে হবে সেটা তুমি বলবে না,” বলেন সেই ব্যক্তি—যিনি নিজেই তাদের কী করতে হবে সেটাই বলতে এসেছেন।

দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা

মুসকান থামেন না। “সামনেই সিগারেট আর মদের দোকান আছে—ওগুলো বন্ধ করেন না কেন?” এ সময় অন্য প্রতিযোগী এবং কিছু আয়োজককে মুসকানের সঙ্গে তর্কে যোগ দিতে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি চলেই—এবং একমাত্র যিনি বাড়ি ফিরে যান, তিনি ভাটনগর; লক্ষ্য পূরণ হয় না তার।

মুকুটের গৌরব

এমন এক দেশে, যেখানে নারীদের দৃশ্যমানতা সংসদে (১৪%), উচ্চতর বিচারব্যবস্থায় (৬ শতাংশেরও কম) কিংবা এমনকি খেলার মাঠ ও পার্কেও অপ্রতুল, সেখানে এক ছোট শহরের তরুণীদের এই প্রতিরোধ সত্যিই লক্ষণীয়।

When Miss World contest faced violent protests in India

সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাকে নারীর শরীরকে পণ্যায়ন ও সৌন্দর্যের একমাত্র মানদণ্ড তৈরি করার কারণে সমালোচনা করা হয়েছে। তবু এটাও স্বীকৃত—অংশগ্রহণ করা বা না করা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়।

অনেকের কাছে এ ধরনের প্রতিযোগিতা সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে। ১৯৭০ সালে মিস এশিয়া প্যাসিফিক ছিলেন জিনাত আমান। আর উদারীকরণের পরের ভারতে ১৯৯৪ সালে সুষমিতা সেন ও ঐশ্বর্য রায়ের যুগপৎ জয় কেবল তাদের সফল চলচ্চিত্রজীবনেরই সূচনা করেনি; ছোট শহর ও মফস্‌সলে মুসকানের মতো অসংখ্য তরুণীর মধ্যেও চলচ্চিত্র ও মডেলিং-ক্যারিয়ারের স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছে।

প্রতিঘাত

ভাটনগরের মতো অনেক পুরুষের দৃষ্টিতে নারীর একমাত্র স্থান হলো বাড়ি। অথচ বাস্তবতা হলো—জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা–৫ অনুযায়ী, পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রতি তিনজন নারীর একজন কোনো না কোনো সময় গৃহসহিংসতার শিকার হন।

পোশাক নিয়ে আপত্তি আসলে পাতলা আড়াল। যেমন ধরুন, বারেলি ও ঋষিকেশের মতো জায়গায় প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক পোশাক সাধারণত শাড়ি বা লেহেঙ্গা। কিন্তু অনুশীলনের সময়, মুসকান ব্যাখ্যা করেন, ভঙ্গি ঠিক করার সুবিধার্থে মেয়েরা ফিটিং পোশাক পরেন।

অন্যদিকে ‘মিস্টার ঋষিকেশ’ প্রতিযোগিতায় অতি স্বল্পবসনা অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে কারও আপত্তি নেই।

তাহলে সমস্যা পোশাক নয়, সমস্যা স্বাধীনতা ও আকাঙ্ক্ষা। কীভাবে এই তরুণীরা এমন মঞ্চে দাঁড়ায়, যেখান থেকে বৃহত্তর বিশ্বে পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়? কীভাবে তারা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের আরোপিত সম্মান–লজ্জার রেখা অতিক্রম করে? কীভাবে তারা কর্তৃত্ব ও পছন্দের অধিকার প্রয়োগ করে? কীভাবে তারা আরও বেশি চায়?

মজার বিষয়, কিছু নারী ও আয়োজককে ক্রুদ্ধ ব্যক্তিটিকে প্রশমিত করতে বলতে দেখা যায় যে, তারা ‘অভিভাবকের সম্মতি’ নিয়েছেন। এটি অপ্রয়োজনীয় শর্ত। কিন্তু এক রকম ‘ন্যানি স্টেট’-এর প্রেক্ষিতে—যেখানে ধর্মান্তর–বিরোধী আইন কার্যত আন্তধর্ম বিয়ে ঠেকায় এবং প্রাপ্তবয়স্ক সহবাসী যুগলদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পর্ক নিবন্ধন করতে হয়—‘অভিভাবকের সম্মতি’ শব্দবন্ধটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

Miss India competition under fire for photo of fair-skinned contestants

যখন নারীরা গাছ জড়িয়ে ধরেছিল

যারা নিজেদের ‘সংস্কৃতির অভিভাবক’ দাবি করেন, তাদের উচিত আগে নিজেদের ইতিহাস জানা। উত্তরাখণ্ডের নারীরা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ১৯৭০-এর দশকে বাণিজ্যিক কাঠ কাটা বন্ধের দাবিতে ‘চিপকো আন্দোলন’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গৌরা দেবীসহ আরও অনেকে। ইচ্ছাগিরি মাই নামে এক নারী স্থানীয়ভাবে তৈরি মদ বিক্রির দোকান পুড়িয়ে দিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন—তার এই পদক্ষেপ আজও স্মরণীয়। আলমোরায় অবৈধ খনন ঠেকাতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে সংগঠিত হয়েছিলেন নারীরাই; ১৯৮২ সালে তারা সরকারকে খনির লাইসেন্স প্রত্যাহারে বাধ্য করেন। আর বাচেন্দ্রী পাল—যদিও তিনি কর্মী নন—ছিলেন এক বাস্তব করণীয়ের নাম; প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে তিনি আরোহণ করেছিলেন মাউন্ট এভারেস্ট।

এমন নারীদের ছাপেই বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম আর ‘সংস্কৃতি রক্ষা’র অজুহাতে আলাদা করে দেখানো ও অপমানিত হওয়া মানতে নারাজ। শিক্ষায় সজ্জিত তরুণীরা ঘর–সংসারের সীমা ছাড়িয়ে জীবনের বড় আকাঙ্ক্ষা বেছে নিতে চায়।

যদি ‘অভিভাবকরা’ এখনো বার্তাটি না পেয়ে থাকেন—ঋষিকেশের ঘটনায় দৃষ্টি দিন। এটি হয়তো এমন এক বৃহত্তর আন্দোলনের প্রারম্ভ, যেখানে নারীরা তাদের প্রাপ্য অর্ধেক আকাশ ফিরে পেতে এগিয়ে যাচ্ছে।

কিক অফ

এই নিউজলেটারটি সপ্তাহজুড়ে ফুটবলবিশ্বের সারসংক্ষেপ—কখনো–সখনো সামনে কী অপেক্ষা করছে তারও আভাস দেয়, আমাদের প্রিয় খেলায়।
ধিমান সরকার

পরিসংখ্যানে

২১,০০০ কোটি টাকা—বিহারের মুখ্যমন্ত্রী যে পরিমাণ অর্থ ২১ লাখ নারী উপকারভোগীর মধ্যে বণ্টন করেছেন আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে। বর্তমানে ১১টি রাজ্যে ১১.৩ কোটি নারী রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনো না কোনো নগদ সহায়তা পান।
উৎস: সংবাদ প্রতিবেদন ও প্রভা কোটিস্বরণের প্রবন্ধ, Valuing Care, Recognising Rights.

From housewives to hijab-clad students, women take center stage in Indian protests - The Japan Times

অন্যান্য খবরে

আফগানিস্তানের তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি ভারত সফরে আছেন—এবং নারীদের বিষয়ে তালেবানের পশ্চাৎমুখী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে (মেয়েদের কাজ করা, অভিভাবক ছাড়া ভ্রমণ, মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা—সবই নিষিদ্ধ) কাবুলস্থ আফগান দূতাবাসে আয়োজিত এক সরকারি সংবাদ সম্মেলনে নারীদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। নয়াদিল্লি দ্রুত জানায়, ওই সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে ভারতের কোনো সম্পর্ক নেই; তবুও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে মুতাক্কির বৈঠকের সরকারি ছবিগুলোতে কোনো নারী নেই—এ দৃশ্য হতাশাজনক।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনি যেটির জন্য প্রকাশ্যে লবিং করেছিলেন—নোবেল শান্তি পুরস্কার—তা পাননি। সেটি গেছে ভেনিজুয়েলার রাজনীতিক মারিয়া কোরিনা মাচাদোর হাতে—৫৮ বছর বয়সী এই রক্ষণশীল নেত্রী ২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলাস মাদুরোর জয়ের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন। এক ব্যঙ্গাত্মক মোড়কে মাচাদো এক্স–এ ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন—“আমাদের আন্দোলনে আপনার দৃঢ় সমর্থনের জন্য।” আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, মাচাদো তাকে ফোন করে বলেছেন, “আমি এটা আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি, কারণ সত্যিকারের আপনিই এর যোগ্য ছিলেন।” বিবিসির সংক্ষিপ্ত খবরটি সেখানে রয়েছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্কুলশিক্ষার্থীদের অল্প বয়সেই যৌনতা–বিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও আলোক আরাধে এ পর্যবেক্ষণ দেন এক মামলায় জামিন নিশ্চিত করতে গিয়ে—যেখানে এক ১৫ বছর বয়সী কিশোরের বিরুদ্ধে এক নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ ছিল। আদালত বলেন, শিশুদের উচিত বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সে–সংক্রান্ত “সতর্কতা ও সাবধানতা” সম্পর্কে জানা।

ফ্রান্সে গিজেল পেলিকোকে অজ্ঞান অবস্থায় রেখে তাঁর স্বামী ডমিনিক পেলিকো বহু পুরুষকে ডেকেছিলেন—এ ঘটনায় ৫০ জন পুরুষ ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে কেবল একজন—৪৪ বছর বয়সী হুসামেত্তিন দোগান—তাঁর নয় বছরের সাজা চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেন, নিজেকে নির্দোষ দাবি করে; যদিও আদালতে প্রদর্শিত স্পষ্ট ভিডিও প্রমাণ সন্দেহের অবকাশ রাখেনি। একে ঈশ্বরের বিচার বলুন—আপিল আদালত শুধু তাঁর আবেদনই খারিজ করেনি, সাজাও এক বছর বাড়িয়েছে। বিস্তারিত ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ।

এই সপ্তাহে এতটুকুই। namita.bhandare@gmail.com

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৭৬ শতাংশে নেমে আসছে — আইএমএফের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনীতির ধীরগতি ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকির ইঙ্গিত

যখন নারীরা ‘না’ বলল

০৮:০৮:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

তারা দুপুরে ছোট্ট বিরতি নিচ্ছিলেন, এমন সময় কয়েকজন পুরুষ ঢুকে পড়ল। তাদের নেতা ছিলেন রাষ্ট্রীয় হিন্দু শক্তি সংগঠনের সভাপতি রঘবেন্দ্র ভাটনগর; সঙ্গে ছিলেন ক্যামেরাম্যানও। বার্তাটি ছিল খুবই সরল—পরের দিন ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য মিস ঋষিকেশ প্রতিযোগিতার জন্য রিহার্সাল করছিলেন যে ২০ জন তরুণী, তাদের বলা হলো: বাড়ি ফিরে যাও।

“তিনি বললেন, ‘ড্রেস রিহার্সাল শেষ। সবাই বাড়ি যেতে পারেন’,” বলেন প্রতিযোগী মুসকান শর্মা; তিনিই পরে প্রতিযোগিতায় জয়ী হন। আকস্মিক এই অনধিকার প্রবেশের অভিজ্ঞতা এভাবেই মনে করলেন তিনি।

একটি ভিডিও অল্প সময়ের জন্য ভাইরাল হয়েছিল—সেখানে দেখা যায়, ক্ষুব্ধ ওই ব্যক্তি মেয়েদের ধমকাচ্ছেন। “এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়,” তিনি বলেন। কিন্তু তারা দমে যাওয়ার পাত্র নন। মুসকান জিজ্ঞেস করেন, “যে দোকানে এই পোশাক বিক্রি হয় সেগুলো বন্ধ করেন না কেন?”

“আমাকে কী করতে হবে সেটা তুমি বলবে না,” বলেন সেই ব্যক্তি—যিনি নিজেই তাদের কী করতে হবে সেটাই বলতে এসেছেন।

দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা

মুসকান থামেন না। “সামনেই সিগারেট আর মদের দোকান আছে—ওগুলো বন্ধ করেন না কেন?” এ সময় অন্য প্রতিযোগী এবং কিছু আয়োজককে মুসকানের সঙ্গে তর্কে যোগ দিতে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি চলেই—এবং একমাত্র যিনি বাড়ি ফিরে যান, তিনি ভাটনগর; লক্ষ্য পূরণ হয় না তার।

মুকুটের গৌরব

এমন এক দেশে, যেখানে নারীদের দৃশ্যমানতা সংসদে (১৪%), উচ্চতর বিচারব্যবস্থায় (৬ শতাংশেরও কম) কিংবা এমনকি খেলার মাঠ ও পার্কেও অপ্রতুল, সেখানে এক ছোট শহরের তরুণীদের এই প্রতিরোধ সত্যিই লক্ষণীয়।

When Miss World contest faced violent protests in India

সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাকে নারীর শরীরকে পণ্যায়ন ও সৌন্দর্যের একমাত্র মানদণ্ড তৈরি করার কারণে সমালোচনা করা হয়েছে। তবু এটাও স্বীকৃত—অংশগ্রহণ করা বা না করা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়।

অনেকের কাছে এ ধরনের প্রতিযোগিতা সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে। ১৯৭০ সালে মিস এশিয়া প্যাসিফিক ছিলেন জিনাত আমান। আর উদারীকরণের পরের ভারতে ১৯৯৪ সালে সুষমিতা সেন ও ঐশ্বর্য রায়ের যুগপৎ জয় কেবল তাদের সফল চলচ্চিত্রজীবনেরই সূচনা করেনি; ছোট শহর ও মফস্‌সলে মুসকানের মতো অসংখ্য তরুণীর মধ্যেও চলচ্চিত্র ও মডেলিং-ক্যারিয়ারের স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছে।

প্রতিঘাত

ভাটনগরের মতো অনেক পুরুষের দৃষ্টিতে নারীর একমাত্র স্থান হলো বাড়ি। অথচ বাস্তবতা হলো—জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা–৫ অনুযায়ী, পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রতি তিনজন নারীর একজন কোনো না কোনো সময় গৃহসহিংসতার শিকার হন।

পোশাক নিয়ে আপত্তি আসলে পাতলা আড়াল। যেমন ধরুন, বারেলি ও ঋষিকেশের মতো জায়গায় প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক পোশাক সাধারণত শাড়ি বা লেহেঙ্গা। কিন্তু অনুশীলনের সময়, মুসকান ব্যাখ্যা করেন, ভঙ্গি ঠিক করার সুবিধার্থে মেয়েরা ফিটিং পোশাক পরেন।

অন্যদিকে ‘মিস্টার ঋষিকেশ’ প্রতিযোগিতায় অতি স্বল্পবসনা অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে কারও আপত্তি নেই।

তাহলে সমস্যা পোশাক নয়, সমস্যা স্বাধীনতা ও আকাঙ্ক্ষা। কীভাবে এই তরুণীরা এমন মঞ্চে দাঁড়ায়, যেখান থেকে বৃহত্তর বিশ্বে পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়? কীভাবে তারা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের আরোপিত সম্মান–লজ্জার রেখা অতিক্রম করে? কীভাবে তারা কর্তৃত্ব ও পছন্দের অধিকার প্রয়োগ করে? কীভাবে তারা আরও বেশি চায়?

মজার বিষয়, কিছু নারী ও আয়োজককে ক্রুদ্ধ ব্যক্তিটিকে প্রশমিত করতে বলতে দেখা যায় যে, তারা ‘অভিভাবকের সম্মতি’ নিয়েছেন। এটি অপ্রয়োজনীয় শর্ত। কিন্তু এক রকম ‘ন্যানি স্টেট’-এর প্রেক্ষিতে—যেখানে ধর্মান্তর–বিরোধী আইন কার্যত আন্তধর্ম বিয়ে ঠেকায় এবং প্রাপ্তবয়স্ক সহবাসী যুগলদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পর্ক নিবন্ধন করতে হয়—‘অভিভাবকের সম্মতি’ শব্দবন্ধটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

Miss India competition under fire for photo of fair-skinned contestants

যখন নারীরা গাছ জড়িয়ে ধরেছিল

যারা নিজেদের ‘সংস্কৃতির অভিভাবক’ দাবি করেন, তাদের উচিত আগে নিজেদের ইতিহাস জানা। উত্তরাখণ্ডের নারীরা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ১৯৭০-এর দশকে বাণিজ্যিক কাঠ কাটা বন্ধের দাবিতে ‘চিপকো আন্দোলন’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গৌরা দেবীসহ আরও অনেকে। ইচ্ছাগিরি মাই নামে এক নারী স্থানীয়ভাবে তৈরি মদ বিক্রির দোকান পুড়িয়ে দিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন—তার এই পদক্ষেপ আজও স্মরণীয়। আলমোরায় অবৈধ খনন ঠেকাতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে সংগঠিত হয়েছিলেন নারীরাই; ১৯৮২ সালে তারা সরকারকে খনির লাইসেন্স প্রত্যাহারে বাধ্য করেন। আর বাচেন্দ্রী পাল—যদিও তিনি কর্মী নন—ছিলেন এক বাস্তব করণীয়ের নাম; প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে তিনি আরোহণ করেছিলেন মাউন্ট এভারেস্ট।

এমন নারীদের ছাপেই বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম আর ‘সংস্কৃতি রক্ষা’র অজুহাতে আলাদা করে দেখানো ও অপমানিত হওয়া মানতে নারাজ। শিক্ষায় সজ্জিত তরুণীরা ঘর–সংসারের সীমা ছাড়িয়ে জীবনের বড় আকাঙ্ক্ষা বেছে নিতে চায়।

যদি ‘অভিভাবকরা’ এখনো বার্তাটি না পেয়ে থাকেন—ঋষিকেশের ঘটনায় দৃষ্টি দিন। এটি হয়তো এমন এক বৃহত্তর আন্দোলনের প্রারম্ভ, যেখানে নারীরা তাদের প্রাপ্য অর্ধেক আকাশ ফিরে পেতে এগিয়ে যাচ্ছে।

কিক অফ

এই নিউজলেটারটি সপ্তাহজুড়ে ফুটবলবিশ্বের সারসংক্ষেপ—কখনো–সখনো সামনে কী অপেক্ষা করছে তারও আভাস দেয়, আমাদের প্রিয় খেলায়।
ধিমান সরকার

পরিসংখ্যানে

২১,০০০ কোটি টাকা—বিহারের মুখ্যমন্ত্রী যে পরিমাণ অর্থ ২১ লাখ নারী উপকারভোগীর মধ্যে বণ্টন করেছেন আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে। বর্তমানে ১১টি রাজ্যে ১১.৩ কোটি নারী রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনো না কোনো নগদ সহায়তা পান।
উৎস: সংবাদ প্রতিবেদন ও প্রভা কোটিস্বরণের প্রবন্ধ, Valuing Care, Recognising Rights.

From housewives to hijab-clad students, women take center stage in Indian protests - The Japan Times

অন্যান্য খবরে

আফগানিস্তানের তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি ভারত সফরে আছেন—এবং নারীদের বিষয়ে তালেবানের পশ্চাৎমুখী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে (মেয়েদের কাজ করা, অভিভাবক ছাড়া ভ্রমণ, মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা—সবই নিষিদ্ধ) কাবুলস্থ আফগান দূতাবাসে আয়োজিত এক সরকারি সংবাদ সম্মেলনে নারীদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। নয়াদিল্লি দ্রুত জানায়, ওই সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে ভারতের কোনো সম্পর্ক নেই; তবুও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে মুতাক্কির বৈঠকের সরকারি ছবিগুলোতে কোনো নারী নেই—এ দৃশ্য হতাশাজনক।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনি যেটির জন্য প্রকাশ্যে লবিং করেছিলেন—নোবেল শান্তি পুরস্কার—তা পাননি। সেটি গেছে ভেনিজুয়েলার রাজনীতিক মারিয়া কোরিনা মাচাদোর হাতে—৫৮ বছর বয়সী এই রক্ষণশীল নেত্রী ২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলাস মাদুরোর জয়ের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন। এক ব্যঙ্গাত্মক মোড়কে মাচাদো এক্স–এ ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন—“আমাদের আন্দোলনে আপনার দৃঢ় সমর্থনের জন্য।” আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, মাচাদো তাকে ফোন করে বলেছেন, “আমি এটা আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি, কারণ সত্যিকারের আপনিই এর যোগ্য ছিলেন।” বিবিসির সংক্ষিপ্ত খবরটি সেখানে রয়েছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্কুলশিক্ষার্থীদের অল্প বয়সেই যৌনতা–বিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও আলোক আরাধে এ পর্যবেক্ষণ দেন এক মামলায় জামিন নিশ্চিত করতে গিয়ে—যেখানে এক ১৫ বছর বয়সী কিশোরের বিরুদ্ধে এক নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ ছিল। আদালত বলেন, শিশুদের উচিত বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সে–সংক্রান্ত “সতর্কতা ও সাবধানতা” সম্পর্কে জানা।

ফ্রান্সে গিজেল পেলিকোকে অজ্ঞান অবস্থায় রেখে তাঁর স্বামী ডমিনিক পেলিকো বহু পুরুষকে ডেকেছিলেন—এ ঘটনায় ৫০ জন পুরুষ ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে কেবল একজন—৪৪ বছর বয়সী হুসামেত্তিন দোগান—তাঁর নয় বছরের সাজা চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেন, নিজেকে নির্দোষ দাবি করে; যদিও আদালতে প্রদর্শিত স্পষ্ট ভিডিও প্রমাণ সন্দেহের অবকাশ রাখেনি। একে ঈশ্বরের বিচার বলুন—আপিল আদালত শুধু তাঁর আবেদনই খারিজ করেনি, সাজাও এক বছর বাড়িয়েছে। বিস্তারিত ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ।

এই সপ্তাহে এতটুকুই। namita.bhandare@gmail.com