জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসেনের মরদেহ ঢাকার আরমানিটোলা এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনাটি ঘটে, যা বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে।
মরদেহ উদ্ধারের সময় ও স্থান
রবিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আরমানিটোলার পানি পাম্প গলির একটি বাসা থেকে জুবায়েদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, ওই বাসাতেই তিনি প্রাইভেট পড়াতেন।
ব্যাংকশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলটি তার টিউশনের জায়গা ছিল। মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত নয়, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।”
নিহতের পরিচয় ও সংগঠনিক ভূমিকা
জুবায়েদ হোসেন কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বাসিন্দা। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এছাড়া তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের ভাষ্যে, তিনি সক্রিয়ভাবে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এবং সহপাঠীদের কাছে ছিলেন জনপ্রিয় ও সদালাপী একজন শিক্ষার্থী।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
পুলিশ ও সহপাঠীদের প্রাথমিক তথ্যমতে, রবিবার বিকেলে জুবায়েদ প্রাইভেট পড়াতে যাচ্ছিলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত দল (সিআইডি)ও পরে পৌঁছায় এবং প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রমাণ সংগ্রহ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তজাম্মুল হক বলেন,
“আমরা ঘটনাটি শুনেছি, তবে মৃত্যুর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দিয়েছি এবং নিজেও ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।”
প্রক্টর আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিহতের পরিবারকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে যাতে দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা যায়।
তদন্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশ জানিয়েছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে তারা হত্যার পেছনের কারণ ও জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছে।
সহপাঠীদের শোক
জুবায়েদের সহপাঠী ও সংগঠনের সদস্যরা তার অকাল মৃত্যুর ঘটনায় শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই তার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে পোস্ট দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনেকে বলেছেন, “একজন মেধাবী তরুণের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দ্রুত ন্যায়বিচার চাই।”
ঢাকার আরমানিটোলায় ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসেনের রহস্যজনক মৃত্যু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার কারণ উদঘাটন ও দায়ীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে। এই হত্যাকাণ্ড ছাত্রসমাজে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
#জগন্নাথ_বিশ্ববিদ্যালয়
#ছাত্রদল
#জুবায়েদ_হোসেন
#ঢাকা_খুন
#আরমানিটোলা
#বাংলাদেশ_অপরাধ
#সারাক্ষণ_রিপোর্ট