গ্রীষ্ম শেষে পাতা ঝরে যাচ্ছে, পরিবেশ একটু ফিকে হয়ে আসছে—এখনই সময় পরবর্তী ছুটি পরিকল্পনায় নামার। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক তাদের ২০২৬ সালের ‘Best of the World’ তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে ২৫টি অবশ্যদর্শন ভ্রমণগন্তব্যকে বর্ণিত করেছে। এই তালিকা সম্পর্কে ম্যাগাজিনটির নির্বাহী সম্পাদক নাথান লাম্প জানিয়েছেন, কী কারণে এসব জায়গা নির্বাচিত হলো—সেটা এখানে সহজ ভাষায় তুলে ধরা হলো।
আমেরিকার গন্তব্য
- পিটসবার্গ (Pittsburgh), পেনসিলভ্যানিয়া: লাম্প বলেন, “আমেরিকায় আমার প্রিয় শহরগুলোর একটি। সপ্তাহান্তে ভ্রমণের জন্য খুবই সহজ।” শিল্প, তরুণ সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ঘেরা পরিবেশ এখানে নতুন প্রাণ যোগ করেছে। মিউজিয়ামগুলো “চমৎকার” এবং শহরের ছোট দোকান ও এলাকাগুলো “মজার বৈচিত্র্যময়” আকর্ষণ তৈরি করেছে।
দক্ষিণ আমেরিকা
- মেদেলিন (Medellín), কলম্বিয়া: লাম্প এটাকে “দারুণ এক ফিরে আসার গল্প” বলে বর্ণনা করেছেন—শিল্প ও সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে, বাগানের সৌন্দর্য ও প্রাণবন্ত পরিবেশ এটিকে করে তুলেছে সত্যিই চিত্তাকর্ষক গন্তব্য।
- রিও ডি জেনেইরো (Rio de Janeiro), ব্রাজিল: এখানে দ্রুত নতুন মিউজিয়াম খুলছে, আর ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার মূর্তির দিকে নতুন এক হাইকিং ট্রেইল চালু হচ্ছে।
ইউরোপের কিছু চমক
- ওলু (Oulu), ফিনল্যান্ড: ২০২৬ সালের ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত।
- গিমারাএস (Guimarães), পর্তুগাল: ২০২৬ সালের ইউরোপীয় সবুজ রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
- হাল (Hull), ইংল্যান্ড: প্রায় অবহেলিত এই বন্দরনগরীকে লাম্প বলেছেন “সমুদ্র-দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”। এখানে রয়েছে এক “চমৎকার অ্যাকুয়ারিয়ামটি।”
তালিকার অন্যান্য গন্তব্য ও বৈশিষ্ট্য
- বেইজিং (Beijing), চীন: ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ রাজধানী। শহরের সেন্ট্রাল অক্ষ UNESCO বিশ্বঐতিহ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে, আর নতুন বাস পরিষেবা ভ্রমণকে করেছে আরও সহজ।
- রাবাত (Rabat), মরক্কো: সাগর-তীরবর্তী এই রাজধানী পুরনো ঐতিহ্য ও আধুনিক স্থাপত্যের মিলন ঘটিয়েছে।
- ডমিনিকা (Dominica): পৃথিবীর প্রথম স্পার্ম হোয়েল রিজার্ভ গঠনের পথে, যেখানে প্রায় ২০০টি হোয়েল বছরজুড়ে সাঁতার কাটে।
- আকাগেরা ন্যাশনাল পার্ক (Akagera National Park), রোয়ান্ডা: সাফারি ‘বিগ ফাইভ’ দেখার সুযোগ—লায়ন, চিতা, গণ্ডার, হাতি ও জলহস্তি—এখানে দর্শনার্থীর ভিড় তুলনামূলকভাবে কম।
- ইয়ামাগাতা প্রিফেকচার (Yamagata Prefecture), জাপান: জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত শান্ত ও সুন্দর এলাকা, যেখানে রয়েছে অনসেন ও প্রাচীন মন্দির।
- উলুরু-কাটা জুটা ন্যাশনাল পার্ক (Uluru-Kata Tjuta National Park), অস্ট্রেলিয়া: এপ্রিল থেকে সেখানে রাতের আকাশে তারাছাওয়া দৃশ্য উপভোগের জন্য ক্যাম্পফায়ার আয়োজন থাকবে।
- ফিজি দ্বীপপুঞ্জ (Fiji Islands): ৩০০-রও বেশি স্বর্গীয় দ্বীপ নিয়ে টেকসই পর্যটনে দেশটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করছে।
- ক্যুবেক (Québec), কানাডা: আদিবাসী নেতৃত্বাধীন নতুন ওয়াইল্ডারনেস পার্কসহ অনন্য প্রাকৃতিক আকর্ষণ তৈরি করছে।
- কোস্টাল ওয়াহাকা (Coastal Oaxaca), মেক্সিকো: সুরুচিপূর্ণ সৈকত আর সার্ফারদের স্বর্গ হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
- খিভা (Khiva), উজবেকিস্তান: সিল্ক রোডের তুলনায় কম পরিচিত এই শহরে এখন হাই-স্পিড ট্রেনে সহজেই পৌঁছানো যায়।
- ব্ল্যাক সি কোস্ট (Black Sea Coast), তুরস্ক: সাধারণ মেডিটারেনিয়ান বা এজিয়ান উপকূলের তুলনায় কম পর্যটক এবং সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ।
- ম্যানিলা (Manila), ফিলিপাইনস্: খাবার-সংস্কৃতিপ্
রেমীদের জন্য আদর্শ গন্তব্য—রেস্তোরাঁ ও সড়কভোজনের সমন্বয় অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। - মাউই (Maui), হাওয়াই, যুক্তরাষ্ট্র: ২০২৩ সালের অগ্নিকাণ্ডের পর ধীরে ধীরে ফিরে আসছে; বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২৬ সাল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
- রুট ৬৬ (Route 66), ওকলাহোমা, যুক্তরাষ্ট্র: ঐতিহাসিক রোড–ট্রিপ রুটটি তার ১০০তম বার্ষিকীতে নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে, যা আউটডোর অভিজ্ঞতা বাড়াবে।
উল্লেখযোগ্য ঘুরে দেখার বিষয়গুলো
- নতুন ট্রেইল, রিজার্ভ ও পার্ক পর্যটনে উৎসাহ যোগাচ্ছে—যেমন দক্ষিণ কোরিয়ার ডংসিও ট্রেইল (Dongseo Trail) বা তুরস্কের ব্ল্যাক সি কোস্ট।
- পরিবেশ ও সংস্কৃতি সংরক্ষণেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে—যেমন ফিজিতে স্বেচ্ছাসেবী পর্যটন (ভলান্টিয়ার ট্যুরিজম) কার্যক্রমের সুযোগ।
- ইতিহাস ও আধুনিকতার মেলবন্ধনও স্পষ্ট—যেমন বেইজিংয়ের প্রাচীন রাজধানী কেন্দ্র বা রাবাতের আধুনিক স্থাপত্য।
২০২৬ সালের এই তালিকা কেবল জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যের সংকলন নয়—বরং এমন জায়গাগুলো তুলে ধরে যেগুলো হয়তো এখনো অনাবিষ্কৃত, কিন্তু যাত্রাপ্রেমীদের নতুন অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম। নাথান লাম্প বলেন, “এই ধরনের তালিকা মানুষকে এমনভাবে ভাবতে উৎসাহিত করে—নিজ দেশ কিংবা বিদেশ সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে।”
#ন্যাশনালজিওগ্রাফিক #বিশ্বেরসেরাগন্তব্য #বেইজিং #রিওডিজেনেইরো #পিটসবার্গ #ভ্রমণ২০২৬ #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















