ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে একটা যাত্রীবাহী বাসে শুক্রবার ভোরে আগুন লেগে কমপক্ষে ১৯জনের মৃত্যু হয়েছে। হায়দ্রাবাদ থেকে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিল ওই যাত্রীবাহী বেসরকারি বাস।
কুর্নুল জেলার চিন্নাটেকুর গ্রামের কাছে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বাসটির সঙ্গে একটা বাইকের সংঘর্ষ হয়। তারপরই আগুন ধরে যায় বাসে।
আনুমানিক ভোর তিনটার কাছাকাছি সময়ে ঘটনাটি ঘটেছে। সেই সময় বাসের বেশিরভাগ যাত্রীই ঘুমিয়ে ছিলেন।
কুর্নুল রেঞ্জের ডিআইজি প্রবীণ কোয়া জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কবলে পড়া ওই বাস থেকে এপর্যন্ত ১৯জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহীও রয়েছেন।
মি. কোয়া পিটিআইকে বলেছেন, “ওই বেসরকারি বাসে ৩৯জন ছিলেন। একজন যাত্রী মাঝরাস্তা থেকে সওয়ার হয়েছিলেন। তার সম্পর্কে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।”
ওই বাসের যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন অশ্বিন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাসের চালক ও তার সহযোগীসহ বেশকয়েকজন যাত্রী পালাতে সক্ষম হন।
তিনি বলেছেন, “গত রাতে, আমরা বেঙ্গালুরু যাওয়ার জন্য কুকাটপল্লি থেকে এই বাসে উঠেছিলাম। বাস চালকের আসনের পিছনেই বসে ছিলাম আমি। রাত ২:৩০ থেকে ৩:৩০ এর মধ্যে, আমি জানালার পাশে আগুন দেখতে পাই এবং দ্রুত ড্রাইভারকে সতর্ক করি।”
“বাস থামানো হয়। ইতিমধ্যে, আমরা কয়েকজন জানালা ভেঙে পালানোর চেষ্টা করি। প্রায় ২০ জন বাস থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও অন্যরা পালাতে পারেননি।”
এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নায়ডুসহ অন্যান্যরা। মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তারা।
মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণও ঘোষণা করা হয়েছে।

কী হয়েছিল?
বেঙ্গালুরুর উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার রাতে রওয়ানা দিয়েছিল ওই বাস। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কুর্নুল জেলার চিন্নাটেকুর গ্রামের কাছে একটা বাইকের সঙ্গে বাসের ধাক্কা লাগে।
“ভোর তিনটা থেকে তিনটা বেজে দশ মিনিট নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের সঙ্গে ওই বাইকের ধাক্কা লাগার পর তেল লিক হতে থাকে। দ্রুত আগুন ধরে যায় বাসে,” বিবিসিকে বলেছেন ওই জেলার কালেক্টর এ সিরি।
“যে সময় ঘটনাটা ঘটে তখন যাত্রীরা ঘুমাচ্ছিলেন। বাসের দরজা খোলা সম্ভব হয়নি, ফলে বাসে ভিতরেই অনেকে আটকে পড়েন,”বলেছেন তিনি।
ডিআইজি প্রবীণ কোয়া জানিয়েছেন, সংঘাতের জের এতটাই তীব্র ছিল যে দমকলকর্মীরা পৌঁছানোর আগেই প্রায় ভস্মীভূত হয়ে যায় ওই বাস।
যারা কোনো ক্রমে জানালার কাচ ভেঙে বাইরে বেড়িয়ে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন তাদের বেশিরভাগের বয়স কম, এর মধ্যে শিশুও রয়েছে।
আহতদের চিকিৎসা চলছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পর দমকলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আপদকালীন পরিস্থিতির জন্য ওই বাসের ইমার্জেন্সি জানালা ভাঙার জন্য যে হাতুড়ি রাখার কথা, তা ছিল না।
ওই কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, “ধাক্কা লাগার পরও বাইকটাকে কিছু দূর টেনে নিয়ে যায় ওই বাস। আপদকালীন পরিস্থিতিতে কাচ ভাঙার জন্য কোনো হাতুড়ি ছিল না ওই বাসে।”

‘ঘুম ভেঙে দেখলাম বাসে আগুন জ্বলছে’
দুর্ঘটনার কবলে পড়া ওই বেসরকারি যাত্রীবাহী বাসে যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন জয়ন্ত কুশওয়াহা। ওই ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউড়ে উঠছিলেন তিনি।
মি. কুশওয়াহা বার্তা সংস্থা এএনআই কে জানিয়েছেন, ঘটনার সময় অন্যান্য যাত্রীদের মতো তিনিও ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম ভেঙে বাসে আগুনের শিখা দেখে চমকে ওঠেন। তিনি লক্ষ্য করেন বাসের ওঠা- নামা করার দরজা বন্ধ রয়েছে। দুর্ঘটনার পর আগুনের কবলে পড়া ওই বাসে তিনি এবং অন্যান্য যাত্রীরা আটকা পড়েন। কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে তিনিও ইমার্জেন্সি জানালা ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন এবং সক্ষমও হন।
মি. কুশওয়াহা বলেছেন, “তখন রাত ২:৩০-২:৪০ বাজে। বাসটা হঠাৎ থেমে গেল। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসে আগুন। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমাদের বাসে আগুন লেগেছে। কিছুক্ষণ পর আমি বুঝতে পারি। দেখলাম মাত্র দু-তিনজন জেগে আছে।”
“আমরা চিৎকার করে সবাইকে জাগিয়ে তুললাম। দরজাটা বন্ধ ছিল। আমরা ড্রাইভারকে খুঁজে পাইনি। বাসের দরজা বন্ধ থাকায় আমরা আপদকালীন জানালা ভেঙে বেরোই।”
চব্বিশ বছর বয়সী সূর্যও ওই বাসেই যাত্রী ছিলেন। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “ধোঁয়ায় আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। আমি এবং একজন সহযাত্রী মিলে পা দিয়ে আমাদের কাছে থাকা জানালা ভেঙে কোনো মতে বেঁচেছি।” হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা তিনি।
হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা অশোক ওই বাসের যাত্রী ছিলেন। কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকেন। দীপাবলি উৎসব উদযাপন করে বেঙ্গালুরুতে ফিরছিলেন।
তার কথায়, “আমি হঠাৎই বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। চোখ খুলে দেখি বাসে আগুন লেগেছে। আমি দ্রুত ইমার্জেন্সি জানালা ভেঙে লাফিয়ে বেরিয়ে আসি। আমার সাথে আরও দুই যাত্রীও লাফিয়ে বেরিয়ে আসেন।” তবে সে সুযোগ অনেকেই পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি।

‘দরজার হাইড্রোলিক সিস্টেম কাজ করেনি’
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বাড়ার কারণ, বাসের দরজা খোলা যায়নি।
এ সিরি বিবিসিকে বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, বাসের ইঞ্জিনে আগুন লাগার কারণে দরজার হাইড্রোলিক সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তারগুলো পুড়ে যায়। যে কারণে বাসের দরজা খোলা যায়নি এবং বাসে আটক যাত্রীদের মৃত্যু হয়।”
BBC News বাংলা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















