১০:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

অভিনয়ের আলোয় উদীয়মান নক্ষত্র—জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি

প্রারম্ভ: এক অভিনয়–নক্ষত্রের উত্থান

বাংলা টেলিভিশন নাটকের দুনিয়ায় নতুন প্রজন্মের মধ্যে যাঁরা সবচেয়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নাম জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে এই তরুণী আজ বাংলাদেশের নাট্যশিল্পে এক নির্ভরযোগ্য মুখ। তার স্বাভাবিক অভিনয়, মিষ্টি হাসি, এবং দর্শকের সঙ্গে আবেগের সংযোগ তাকে আলাদা করেছে। নাটকের জগতে প্রবেশের পর অল্প সময়েই তিনি নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন—এবং এখন তার নাম উচ্চারিত হয় শীর্ষ তরুণ অভিনেত্রীদের পাশে।

শৈশব ও বেড়ে ওঠা

হিমির শৈশব কেটেছে এক সাধারণ, সাংস্কৃতিক আবহে। ছোটবেলা থেকেই তিনি নাচ, গান ও নাটকে আগ্রহী ছিলেন। স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে কলেজ জীবনের নাট্যচর্চা—সব জায়গাতেই তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত। তার পরিবারও এই শিল্পীসত্তাকে সমর্থন দিয়েছে। যদিও নাটকে আসার পথ সহজ ছিল না, তিনি ধৈর্য ও অধ্যবসায়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।

এক সময় নাট্যজগতে তার নাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে—‘হিমি’ নামটিই যেন হয়ে ওঠে এক মিষ্টি পরিচিতি। দর্শকরা তার মুখে সরলতা আর অভিনয়ে স্বাভাবিকতার প্রতিফলন দেখতে পান। হিমি নিজেই বলেছেন, “আমি চাই প্রতিটি চরিত্র যেন দর্শকের কাছে বাস্তব মনে হয়, যেন কেউ বলে—এই মেয়েটা আমাদের আশেপাশের কেউ।”

শেখ হাসিনা চরিত্র থেকে বাদ পড়লেন জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি

অভিনয়ে আগমন

হিমির নাটকে প্রথম কাজটি ছিল ছোট একটি চরিত্রে, তবে সেই চরিত্রেই তিনি নজর কাড়েন। ধীরে ধীরে তিনি পেয়েছেন বড় সুযোগ। তরুণ নির্মাতাদের নাটকে কাজ করতে করতে তিনি শেখেন ক্যামেরার ভাষা, সংলাপের ভারসাম্য, দৃশ্যের ছন্দ—এবং এভাবেই তৈরি হয় তার নিজস্ব অভিনয়শৈলী।

তার প্রথম দিকের কাজগুলোর মধ্যে ‘ঠিক বেঠিক’, ‘কিস্তির স্যার’ ও ‘ঘরছাড়া’ নাটকগুলোই তাকে মূলধারার দর্শকের নজরে আনে। এরপর তিনি নিয়মিত হয়ে ওঠেন টিভি নাটকে, ইউটিউব নাটকে এবং ঈদ উপলক্ষে নির্মিত বিশেষ নাটকে।

হিমির অভিনয়ের ধরন হলো স্বতঃস্ফূর্ত, সংলাপে আবেগময় ভার আর দৃষ্টিতে সরলতা। তিনি অতিরঞ্জন এড়িয়ে বাস্তব চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করেন। কোনো কোনো দৃশ্যে কেবল চোখের ভাষায় তিনি যে আবেগ প্রকাশ করেন, সেটি নাটকের প্রাণ হয়ে দাঁড়ায়।

জনপ্রিয়তা ও দর্শকপ্রিয়তা

বাংলাদেশে টেলিভিশন নাটক দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। এই পরিসরে হিমির আগমন ছিল এক নতুন বাতাসের মতো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ভক্তসংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। দর্শকরা তার হাসি, সংলাপের ভঙ্গি, এবং সাদামাটা চরিত্রে গভীর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন।

হিমির নাটক প্রচারের পর মন্তব্যে দেখা যায় দর্শকেরা লেখেন—“হিমি মানেই স্বাভাবিক অভিনয়”, “তার চোখের অভিব্যক্তি মন ছুঁয়ে যায়”, “নতুন প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে সত্যিকারের অভিনেত্রী।”

এই প্রতিক্রিয়াগুলিই প্রমাণ করে, তিনি এখনকার সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। তার জনপ্রিয়তা কেবল অভিনয়ের কারণে নয়, তার বিনয়ী ব্যবহার ও পরিশ্রমী মনোভাবও দর্শকের হৃদয় জয় করেছে।

ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই হিমির

অভিনয়ের ধরন ও দক্ষতা

হিমি এমন একজন অভিনেত্রী যিনি চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করেন। তিনি কেবল সংলাপ মুখস্থ করেন না—চরিত্রটি অনুভব করেন। কখনো সরল প্রেমিকা, কখনো প্রতিবাদী নারী, কখনো সাধারণ গৃহবধূ, আবার কখনো হতাশায় ডুবে থাকা তরুণী—প্রতিটি ভূমিকায় তার অভিনয়ে আলাদা স্বাদ থাকে।

তিনি প্রযোজক ও পরিচালকের ভাবনা বোঝেন এবং চরিত্রের বাস্তব রূপ খুঁজে বের করেন। এজন্যই তিনি অনেক পরিচালকের প্রিয় শিল্পী। এক সাক্ষাৎকারে একজন পরিচালক বলেছিলেন, “হিমি দৃশ্যের মধ্যে এমনভাবে ডুবে যায় যে ক্যামেরা ঘোরার পরও সে চরিত্রে থেকে যায়।”

এটাই একজন প্রকৃত শিল্পীর লক্ষণ।

চ্যালেঞ্জ ও সংগ্রাম

নাট্যজগৎ অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ। প্রতিদিন নতুন মুখ আসছে, নতুন গল্প তৈরি হচ্ছে। হিমিকে টিকে থাকতে হয়েছে পরিশ্রম করে। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকবার প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং প্রত্যাখ্যানকেই প্রেরণায় পরিণত করেছেন।

এছাড়া নারী শিল্পী হিসেবে তাকে সামাজিক ও পেশাগত চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হয়েছে—অভিনয়ের সময় ব্যস্ততা, দীর্ঘ শুটিং, এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা। কিন্তু হিমি সবসময় পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছেন।

তিনি বলেন, “নাটক আমার ভালোবাসা। আমি যত ক্লান্তই থাকি না কেন, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে সব ভুলে যাই।”

ব্যতিক্রমী কিছু দেখাতে হলে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে: হিমি

পাঁচটি জনপ্রিয় নাটক: বিশদ বিশ্লেষণ

১. ঠিক বেঠিক

এই নাটকটি হিমির অভিনয়জীবনে এক মোড় এনে দেয়। গল্পটি আবর্তিত হয় এক তরুণীর আত্মসম্মান, ভালোবাসা ও সামাজিক ভুল বোঝাবুঝিকে ঘিরে। হিমি এখানে এমন এক নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে বাঁচতে শেখেন।

তার সংলাপের ভার, চোখের অভিব্যক্তি, এবং মৃদু কণ্ঠের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ—সব মিলিয়ে চরিত্রটি জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই নাটকটি দর্শকদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছিল এবং হিমিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।

২. কিস্তির স্যার

এ নাটকের গল্প সামাজিক বাস্তবতাকে সামনে আনে। একজন শিক্ষক ও এক তরুণীর পারিবারিক সংকটের মধ্যে মানসিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম আবর্তন—এই নাটকের মূল বিষয়। হিমি এখানে ছিলেন শিক্ষার্থীর ভূমিকায়, যিনি তার শিক্ষকের কাছ থেকে জীবনের অনুপ্রেরণা পান।

এই চরিত্রে হিমির অভিনয়ে এক ধরনের শান্ত গভীরতা দেখা যায়। তিনি নিজের চরিত্রকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন দর্শক ভুলে যান এটি কেবল অভিনয়। অনেক সমালোচক বলেছেন, এই নাটকই তার আবেগঘন অভিনয়ের শক্তি প্রকাশ করেছে।

৩. ঘরছাড়া

একটি মেয়ের ঘর ছেড়ে বাঁচার লড়াইয়ের গল্প ‘ঘরছাড়া’। হিমি এখানে এক দৃঢ়চেতা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি সমাজের প্রতিকূলতা জয় করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন। নাটকটি নারীর আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার বার্তা দেয়।

গভীর রাত পর্যন্ত যা করতে কষ্ট লাগে না হিমির - Bangla news

হিমির সংলাপ উচ্চারণে দৃঢ়তা, চোখে আত্মবিশ্বাস এবং চেহারায় সংগ্রামী মানসিকতা ফুটে উঠেছে। এই নাটক তার ক্যারিয়ারে এক পরিণত অভিনয়ের দৃষ্টান্ত।

৪. বেশি বেশি

‘বেশি বেশি’ ছিল একটি আধুনিক সম্পর্কের গল্প। শহুরে জীবনের এক তরুণীর স্বপ্ন, ভালোবাসা এবং হতাশার মিশ্র অনুভূতি ফুটে উঠেছে নাটকটিতে। হিমি এখানে এমন এক চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি সবসময় “বেশি” কিছু চাওয়ার মধ্যে হারিয়ে যান।

তার অভিনয়ে দেখা যায় বাস্তব জীবনের টানাপোড়েন—একদিকে সামাজিক প্রত্যাশা, অন্যদিকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। তিনি দর্শকদের মনে করিয়ে দেন, “বেশি কিছু চাওয়া মানেই সুখ নয়।” এটি ছিল এক পরিণত চিন্তাধারার নাটক।

৫. হঠাৎ বিয়ে

এই নাটকটি ছিল রোমান্টিক কমেডি ঘরানার। হিমি এখানে অভিনয় করেন এক হাস্যরসপূর্ণ চরিত্রে, যেখানে দুর্ঘটনাবশত দুই তরুণ-তরুণীর বিয়ে হয়ে যায়, আর তারপর শুরু হয় মজার সব ঘটনা।

এই নাটকে হিমির অভিনয় ছিল প্রাণবন্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত। তিনি দর্শককে হাসিয়েছেন, আবার আবেগেও ছুঁয়েছেন। এটি প্রমাণ করে, তিনি কেবল আবেগঘন নাটকেই নয়, হালকা বিনোদনমূলক নাটকেও সমান দক্ষ।

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির অভিনয়ের ১০ বছর । খবরের কাগজ

নাট্যজগতে প্রভাব ও দর্শকের ভালোবাসা

হিমির নাটক এখন ইউটিউব ও টিভিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখে। তার সংলাপের ভঙ্গি তরুণ দর্শকদের মধ্যে ‘ক্যাচফ্রেজ’ হয়ে গেছে। প্রযোজক ও পরিচালকরা বলেন, “যে নাটকে হিমি থাকে, সেখানে দর্শকের আস্থা থাকে।”

তিনি এখন বাংলাদেশের নাট্যজগতে এক প্রতীক—নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী, পরিশ্রমী ও পেশাদার একজন শিল্পী। তার উপস্থিতি শুধু পর্দায় নয়, পর্দার বাইরেও ইতিবাচক শক্তি ছড়ায়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও স্বপ্ন

হিমি এখন অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার দিকেও আগ্রহী। ভবিষ্যতে তিনি ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পরিকল্পনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখেন, একদিন নিজেই নাটক নির্মাণ করবেন—যেখানে সমাজ, নারীজীবন ও সম্পর্কের বাস্তবতা ফুটে উঠবে।

তিনি বলেন, “আমি চাই আমার কাজের মাধ্যমে মানুষ হাসুক, কাঁদুক, চিন্তা করুক—এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির গল্প এক তরুণীর জয়যাত্রা। তিনি দেখিয়েছেন, স্বপ্ন থাকলে, পরিশ্রম থাকলে, আর নিজের কাজে ভালোবাসা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আজ তিনি আমাদের নাট্যদুনিয়ার উজ্জ্বল মুখ।

তার চোখের হাসি, সংলাপের নিখুঁত উচ্চারণ, আর চরিত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন এক নিঃশব্দ অনুপ্রেরণা। হিমি প্রমাণ করেছেন, বড় হতে তারকাখ্যাতি নয়—প্রয়োজন মনের গভীর থেকে শিল্পকে ভালোবাসা।

 

#হিমি #বাংলানাটক #অভিনেত্রীহিমি #টেলিভিশননাটক #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

হংকং বাজারে সানি হেভি ইন্ডাস্ট্রির শেয়ার বিক্রি শুরু

অভিনয়ের আলোয় উদীয়মান নক্ষত্র—জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি

০৬:৫৭:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

প্রারম্ভ: এক অভিনয়–নক্ষত্রের উত্থান

বাংলা টেলিভিশন নাটকের দুনিয়ায় নতুন প্রজন্মের মধ্যে যাঁরা সবচেয়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নাম জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে এই তরুণী আজ বাংলাদেশের নাট্যশিল্পে এক নির্ভরযোগ্য মুখ। তার স্বাভাবিক অভিনয়, মিষ্টি হাসি, এবং দর্শকের সঙ্গে আবেগের সংযোগ তাকে আলাদা করেছে। নাটকের জগতে প্রবেশের পর অল্প সময়েই তিনি নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন—এবং এখন তার নাম উচ্চারিত হয় শীর্ষ তরুণ অভিনেত্রীদের পাশে।

শৈশব ও বেড়ে ওঠা

হিমির শৈশব কেটেছে এক সাধারণ, সাংস্কৃতিক আবহে। ছোটবেলা থেকেই তিনি নাচ, গান ও নাটকে আগ্রহী ছিলেন। স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে কলেজ জীবনের নাট্যচর্চা—সব জায়গাতেই তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত। তার পরিবারও এই শিল্পীসত্তাকে সমর্থন দিয়েছে। যদিও নাটকে আসার পথ সহজ ছিল না, তিনি ধৈর্য ও অধ্যবসায়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।

এক সময় নাট্যজগতে তার নাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে—‘হিমি’ নামটিই যেন হয়ে ওঠে এক মিষ্টি পরিচিতি। দর্শকরা তার মুখে সরলতা আর অভিনয়ে স্বাভাবিকতার প্রতিফলন দেখতে পান। হিমি নিজেই বলেছেন, “আমি চাই প্রতিটি চরিত্র যেন দর্শকের কাছে বাস্তব মনে হয়, যেন কেউ বলে—এই মেয়েটা আমাদের আশেপাশের কেউ।”

শেখ হাসিনা চরিত্র থেকে বাদ পড়লেন জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি

অভিনয়ে আগমন

হিমির নাটকে প্রথম কাজটি ছিল ছোট একটি চরিত্রে, তবে সেই চরিত্রেই তিনি নজর কাড়েন। ধীরে ধীরে তিনি পেয়েছেন বড় সুযোগ। তরুণ নির্মাতাদের নাটকে কাজ করতে করতে তিনি শেখেন ক্যামেরার ভাষা, সংলাপের ভারসাম্য, দৃশ্যের ছন্দ—এবং এভাবেই তৈরি হয় তার নিজস্ব অভিনয়শৈলী।

তার প্রথম দিকের কাজগুলোর মধ্যে ‘ঠিক বেঠিক’, ‘কিস্তির স্যার’ ও ‘ঘরছাড়া’ নাটকগুলোই তাকে মূলধারার দর্শকের নজরে আনে। এরপর তিনি নিয়মিত হয়ে ওঠেন টিভি নাটকে, ইউটিউব নাটকে এবং ঈদ উপলক্ষে নির্মিত বিশেষ নাটকে।

হিমির অভিনয়ের ধরন হলো স্বতঃস্ফূর্ত, সংলাপে আবেগময় ভার আর দৃষ্টিতে সরলতা। তিনি অতিরঞ্জন এড়িয়ে বাস্তব চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করেন। কোনো কোনো দৃশ্যে কেবল চোখের ভাষায় তিনি যে আবেগ প্রকাশ করেন, সেটি নাটকের প্রাণ হয়ে দাঁড়ায়।

জনপ্রিয়তা ও দর্শকপ্রিয়তা

বাংলাদেশে টেলিভিশন নাটক দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। এই পরিসরে হিমির আগমন ছিল এক নতুন বাতাসের মতো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ভক্তসংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। দর্শকরা তার হাসি, সংলাপের ভঙ্গি, এবং সাদামাটা চরিত্রে গভীর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন।

হিমির নাটক প্রচারের পর মন্তব্যে দেখা যায় দর্শকেরা লেখেন—“হিমি মানেই স্বাভাবিক অভিনয়”, “তার চোখের অভিব্যক্তি মন ছুঁয়ে যায়”, “নতুন প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে সত্যিকারের অভিনেত্রী।”

এই প্রতিক্রিয়াগুলিই প্রমাণ করে, তিনি এখনকার সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। তার জনপ্রিয়তা কেবল অভিনয়ের কারণে নয়, তার বিনয়ী ব্যবহার ও পরিশ্রমী মনোভাবও দর্শকের হৃদয় জয় করেছে।

ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই হিমির

অভিনয়ের ধরন ও দক্ষতা

হিমি এমন একজন অভিনেত্রী যিনি চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করেন। তিনি কেবল সংলাপ মুখস্থ করেন না—চরিত্রটি অনুভব করেন। কখনো সরল প্রেমিকা, কখনো প্রতিবাদী নারী, কখনো সাধারণ গৃহবধূ, আবার কখনো হতাশায় ডুবে থাকা তরুণী—প্রতিটি ভূমিকায় তার অভিনয়ে আলাদা স্বাদ থাকে।

তিনি প্রযোজক ও পরিচালকের ভাবনা বোঝেন এবং চরিত্রের বাস্তব রূপ খুঁজে বের করেন। এজন্যই তিনি অনেক পরিচালকের প্রিয় শিল্পী। এক সাক্ষাৎকারে একজন পরিচালক বলেছিলেন, “হিমি দৃশ্যের মধ্যে এমনভাবে ডুবে যায় যে ক্যামেরা ঘোরার পরও সে চরিত্রে থেকে যায়।”

এটাই একজন প্রকৃত শিল্পীর লক্ষণ।

চ্যালেঞ্জ ও সংগ্রাম

নাট্যজগৎ অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ। প্রতিদিন নতুন মুখ আসছে, নতুন গল্প তৈরি হচ্ছে। হিমিকে টিকে থাকতে হয়েছে পরিশ্রম করে। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকবার প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং প্রত্যাখ্যানকেই প্রেরণায় পরিণত করেছেন।

এছাড়া নারী শিল্পী হিসেবে তাকে সামাজিক ও পেশাগত চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হয়েছে—অভিনয়ের সময় ব্যস্ততা, দীর্ঘ শুটিং, এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা। কিন্তু হিমি সবসময় পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছেন।

তিনি বলেন, “নাটক আমার ভালোবাসা। আমি যত ক্লান্তই থাকি না কেন, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে সব ভুলে যাই।”

ব্যতিক্রমী কিছু দেখাতে হলে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে: হিমি

পাঁচটি জনপ্রিয় নাটক: বিশদ বিশ্লেষণ

১. ঠিক বেঠিক

এই নাটকটি হিমির অভিনয়জীবনে এক মোড় এনে দেয়। গল্পটি আবর্তিত হয় এক তরুণীর আত্মসম্মান, ভালোবাসা ও সামাজিক ভুল বোঝাবুঝিকে ঘিরে। হিমি এখানে এমন এক নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে বাঁচতে শেখেন।

তার সংলাপের ভার, চোখের অভিব্যক্তি, এবং মৃদু কণ্ঠের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ—সব মিলিয়ে চরিত্রটি জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই নাটকটি দর্শকদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছিল এবং হিমিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।

২. কিস্তির স্যার

এ নাটকের গল্প সামাজিক বাস্তবতাকে সামনে আনে। একজন শিক্ষক ও এক তরুণীর পারিবারিক সংকটের মধ্যে মানসিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম আবর্তন—এই নাটকের মূল বিষয়। হিমি এখানে ছিলেন শিক্ষার্থীর ভূমিকায়, যিনি তার শিক্ষকের কাছ থেকে জীবনের অনুপ্রেরণা পান।

এই চরিত্রে হিমির অভিনয়ে এক ধরনের শান্ত গভীরতা দেখা যায়। তিনি নিজের চরিত্রকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন দর্শক ভুলে যান এটি কেবল অভিনয়। অনেক সমালোচক বলেছেন, এই নাটকই তার আবেগঘন অভিনয়ের শক্তি প্রকাশ করেছে।

৩. ঘরছাড়া

একটি মেয়ের ঘর ছেড়ে বাঁচার লড়াইয়ের গল্প ‘ঘরছাড়া’। হিমি এখানে এক দৃঢ়চেতা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি সমাজের প্রতিকূলতা জয় করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন। নাটকটি নারীর আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার বার্তা দেয়।

গভীর রাত পর্যন্ত যা করতে কষ্ট লাগে না হিমির - Bangla news

হিমির সংলাপ উচ্চারণে দৃঢ়তা, চোখে আত্মবিশ্বাস এবং চেহারায় সংগ্রামী মানসিকতা ফুটে উঠেছে। এই নাটক তার ক্যারিয়ারে এক পরিণত অভিনয়ের দৃষ্টান্ত।

৪. বেশি বেশি

‘বেশি বেশি’ ছিল একটি আধুনিক সম্পর্কের গল্প। শহুরে জীবনের এক তরুণীর স্বপ্ন, ভালোবাসা এবং হতাশার মিশ্র অনুভূতি ফুটে উঠেছে নাটকটিতে। হিমি এখানে এমন এক চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি সবসময় “বেশি” কিছু চাওয়ার মধ্যে হারিয়ে যান।

তার অভিনয়ে দেখা যায় বাস্তব জীবনের টানাপোড়েন—একদিকে সামাজিক প্রত্যাশা, অন্যদিকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। তিনি দর্শকদের মনে করিয়ে দেন, “বেশি কিছু চাওয়া মানেই সুখ নয়।” এটি ছিল এক পরিণত চিন্তাধারার নাটক।

৫. হঠাৎ বিয়ে

এই নাটকটি ছিল রোমান্টিক কমেডি ঘরানার। হিমি এখানে অভিনয় করেন এক হাস্যরসপূর্ণ চরিত্রে, যেখানে দুর্ঘটনাবশত দুই তরুণ-তরুণীর বিয়ে হয়ে যায়, আর তারপর শুরু হয় মজার সব ঘটনা।

এই নাটকে হিমির অভিনয় ছিল প্রাণবন্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত। তিনি দর্শককে হাসিয়েছেন, আবার আবেগেও ছুঁয়েছেন। এটি প্রমাণ করে, তিনি কেবল আবেগঘন নাটকেই নয়, হালকা বিনোদনমূলক নাটকেও সমান দক্ষ।

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির অভিনয়ের ১০ বছর । খবরের কাগজ

নাট্যজগতে প্রভাব ও দর্শকের ভালোবাসা

হিমির নাটক এখন ইউটিউব ও টিভিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখে। তার সংলাপের ভঙ্গি তরুণ দর্শকদের মধ্যে ‘ক্যাচফ্রেজ’ হয়ে গেছে। প্রযোজক ও পরিচালকরা বলেন, “যে নাটকে হিমি থাকে, সেখানে দর্শকের আস্থা থাকে।”

তিনি এখন বাংলাদেশের নাট্যজগতে এক প্রতীক—নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী, পরিশ্রমী ও পেশাদার একজন শিল্পী। তার উপস্থিতি শুধু পর্দায় নয়, পর্দার বাইরেও ইতিবাচক শক্তি ছড়ায়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও স্বপ্ন

হিমি এখন অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার দিকেও আগ্রহী। ভবিষ্যতে তিনি ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পরিকল্পনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখেন, একদিন নিজেই নাটক নির্মাণ করবেন—যেখানে সমাজ, নারীজীবন ও সম্পর্কের বাস্তবতা ফুটে উঠবে।

তিনি বলেন, “আমি চাই আমার কাজের মাধ্যমে মানুষ হাসুক, কাঁদুক, চিন্তা করুক—এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির গল্প এক তরুণীর জয়যাত্রা। তিনি দেখিয়েছেন, স্বপ্ন থাকলে, পরিশ্রম থাকলে, আর নিজের কাজে ভালোবাসা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আজ তিনি আমাদের নাট্যদুনিয়ার উজ্জ্বল মুখ।

তার চোখের হাসি, সংলাপের নিখুঁত উচ্চারণ, আর চরিত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন এক নিঃশব্দ অনুপ্রেরণা। হিমি প্রমাণ করেছেন, বড় হতে তারকাখ্যাতি নয়—প্রয়োজন মনের গভীর থেকে শিল্পকে ভালোবাসা।

 

#হিমি #বাংলানাটক #অভিনেত্রীহিমি #টেলিভিশননাটক #সারাক্ষণরিপোর্ট