০২:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫

জুলাই সনদে নতুন সংযোজনের দায় নেবে না বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করেছেন যে, জুলাই সনদের যেসব অংশে দলটির স্বাক্ষর রয়েছে, সেগুলোর দায়িত্ব বিএনপি নেবে, তবে অনুমতি ছাড়া পরবর্তীতে সংযোজিত অংশগুলোর দায় তারা নেবে না। শনিবার ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে তিনি বলেন, বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায়, প্রতারণা নয়।

বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করলেন ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই সনদের যেসব অংশে বিএনপি স্বাক্ষর করেছে, সেগুলোর দায় দল স্বীকার করবে। কিন্তু যে অংশগুলো পরবর্তীতে দলটির অনুমতি ছাড়া যুক্ত করা হয়েছে, তার দায় বিএনপি নেবে না।

শনিবার রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার— আমরা শুধু সেই অংশের দায়িত্ব নেব, যেখানে স্বাক্ষর করেছি। যে অংশে স্বাক্ষর করিনি, তার দায় আমাদের নয়।”

তিনি আরও বলেন, বিএনপি চায় এসব বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসুক।

বৃষ্টির দিনে স্বাক্ষর, পরে শর্তভঙ্গ

ফখরুল স্মরণ করান, সংসদ ভবনের সামনে বৃষ্টির মধ্যেই জুলাই সনদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেছিল। তখন সিদ্ধান্ত হয়— যেসব বিষয়ে সব দল একমত, সেগুলো সনদে থাকবে; আর যে বিষয়ে মতবিরোধ, তা ‘অসম্মতির নোট’ হিসেবে সংরক্ষিত হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, “আমরা সেই বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সনদে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু এখন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো প্রস্তাবে ঐসব ‘অসম্মতির নোট’ বাদ দিয়ে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”

বিএনপি নির্বাচন চায় এ বছরের মাঝামাঝিতেই

প্রতারণা সত্ত্বেও সংযত অবস্থান

বিএনপি নেতা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে প্রতারণা করেছে, তার পরও বিএনপি দায়িত্বশীল আচরণ করেছে।

“আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা রাস্তায় নামিনি, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করিনি, কিংবা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও কোনো পদক্ষেপ নিইনি,” বলেন ফখরুল।

জামায়াতের কৌশল নিয়ে সমালোচনা

মির্জা ফখরুল জামায়াতে ইসলামী’র প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “তারা এখন রাস্তায় নেমে এবং কিছু দলের সঙ্গে মিলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যেন সরকার তাদের মতো করে চলে।”

এই সমাবেশটি আয়োজন করে বিএনপি-সমর্থিত সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল— ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় নির্বাচন অপরিহার্য’, যা আগামী ৭ নভেম্বরের জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যত অর্জন

ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ নির্বাচন চান বিএনপি

ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস যে সময় ঘোষণা করেছেন— অর্থাৎ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে— বিএনপিও সেটিকেই সমর্থন করে।

তিনি বলেন, “অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) চালু হবে কি না, তা পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।”

একই দিনে ভোট ও গণভোটের প্রস্তাব

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলটি গণভোটকে প্রয়োজনীয় মনে না করলেও খরচ বাঁচাতে নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিল।

“আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, একই দিনে দুটি ব্যালটে ভোট নেওয়া হোক— একটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচন, অন্যটিতে গণভোট,” বলেন তিনি।

কিন্তু এখন জামায়াত বলছে, আগে গণভোট, পরে নির্বাচন— যা নির্বাচন বিলম্বিত করবে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

“তারাই এখন নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলছে, আমরা নয়, আমরা সবসময় দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে ফের রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে দেশ

সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান

জনউত্থানের পর অন্যান্য দল সংস্কারের কথা বললে বিএনপি তা ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন। কারণ, ২০২২ সালেই বিএনপি একটি ৩১ দফার সংস্কার রূপরেখা দিয়েছিল।

“আমাদের নেতারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ৩১ দফা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখন সনদে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত, তার অধিকাংশই আমাদের রূপরেখায় ছিল। তাহলে বলা হচ্ছে কীভাবে আমরা সংস্কার চাই না?”

তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রকৃত সংস্কারের পক্ষে, প্রতারণামূলক সংস্কারের নয়। জনগণকে বিভ্রান্ত করে ভুয়া সংস্কারের চেষ্টা আমরা মেনে নিতে পারি না।”

শেখ হাসিনাকে ফেরানোর আহ্বান

ফখরুল বলেন, ভারতের মাটিতে অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, কিন্তু কোথাও অনুশোচনার কোনো ইঙ্গিত দেননি।
“তিনি একবারও বলেননি যে তিনি তার ভুলের জন্য দুঃখিত। সাংবাদিকেরা যখন জিজ্ঞেস করেছেন ক্ষমা চাইবেন কি না, তিনি বলেছেন— ‘না, আমরা ক্ষমা চাইব না।’ এখন সেই একই মানুষ ভারতে বসে প্রচার চালাচ্ছেন,” অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি ভারত সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই— শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনুন। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না; মানুষ তা মেনে নেবে না।”

 

#BNP #মির্জা_ফখরুল #জুলাই_সনদ #জাতীয়_নির্বাচন২০২৬ #জামায়াত #সংস্কার #গণভোট #বাংলাদেশ_রাজনীতি #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই সনদে নতুন সংযোজনের দায় নেবে না বিএনপি

০৮:৪৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করেছেন যে, জুলাই সনদের যেসব অংশে দলটির স্বাক্ষর রয়েছে, সেগুলোর দায়িত্ব বিএনপি নেবে, তবে অনুমতি ছাড়া পরবর্তীতে সংযোজিত অংশগুলোর দায় তারা নেবে না। শনিবার ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে তিনি বলেন, বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায়, প্রতারণা নয়।

বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করলেন ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই সনদের যেসব অংশে বিএনপি স্বাক্ষর করেছে, সেগুলোর দায় দল স্বীকার করবে। কিন্তু যে অংশগুলো পরবর্তীতে দলটির অনুমতি ছাড়া যুক্ত করা হয়েছে, তার দায় বিএনপি নেবে না।

শনিবার রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার— আমরা শুধু সেই অংশের দায়িত্ব নেব, যেখানে স্বাক্ষর করেছি। যে অংশে স্বাক্ষর করিনি, তার দায় আমাদের নয়।”

তিনি আরও বলেন, বিএনপি চায় এসব বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসুক।

বৃষ্টির দিনে স্বাক্ষর, পরে শর্তভঙ্গ

ফখরুল স্মরণ করান, সংসদ ভবনের সামনে বৃষ্টির মধ্যেই জুলাই সনদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেছিল। তখন সিদ্ধান্ত হয়— যেসব বিষয়ে সব দল একমত, সেগুলো সনদে থাকবে; আর যে বিষয়ে মতবিরোধ, তা ‘অসম্মতির নোট’ হিসেবে সংরক্ষিত হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, “আমরা সেই বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সনদে স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু এখন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো প্রস্তাবে ঐসব ‘অসম্মতির নোট’ বাদ দিয়ে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”

বিএনপি নির্বাচন চায় এ বছরের মাঝামাঝিতেই

প্রতারণা সত্ত্বেও সংযত অবস্থান

বিএনপি নেতা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে প্রতারণা করেছে, তার পরও বিএনপি দায়িত্বশীল আচরণ করেছে।

“আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা রাস্তায় নামিনি, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করিনি, কিংবা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও কোনো পদক্ষেপ নিইনি,” বলেন ফখরুল।

জামায়াতের কৌশল নিয়ে সমালোচনা

মির্জা ফখরুল জামায়াতে ইসলামী’র প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “তারা এখন রাস্তায় নেমে এবং কিছু দলের সঙ্গে মিলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যেন সরকার তাদের মতো করে চলে।”

এই সমাবেশটি আয়োজন করে বিএনপি-সমর্থিত সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল— ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় নির্বাচন অপরিহার্য’, যা আগামী ৭ নভেম্বরের জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যত অর্জন

ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ নির্বাচন চান বিএনপি

ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস যে সময় ঘোষণা করেছেন— অর্থাৎ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে— বিএনপিও সেটিকেই সমর্থন করে।

তিনি বলেন, “অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) চালু হবে কি না, তা পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।”

একই দিনে ভোট ও গণভোটের প্রস্তাব

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলটি গণভোটকে প্রয়োজনীয় মনে না করলেও খরচ বাঁচাতে নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিল।

“আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, একই দিনে দুটি ব্যালটে ভোট নেওয়া হোক— একটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচন, অন্যটিতে গণভোট,” বলেন তিনি।

কিন্তু এখন জামায়াত বলছে, আগে গণভোট, পরে নির্বাচন— যা নির্বাচন বিলম্বিত করবে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

“তারাই এখন নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলছে, আমরা নয়, আমরা সবসময় দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে ফের রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে দেশ

সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান

জনউত্থানের পর অন্যান্য দল সংস্কারের কথা বললে বিএনপি তা ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন। কারণ, ২০২২ সালেই বিএনপি একটি ৩১ দফার সংস্কার রূপরেখা দিয়েছিল।

“আমাদের নেতারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ৩১ দফা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখন সনদে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত, তার অধিকাংশই আমাদের রূপরেখায় ছিল। তাহলে বলা হচ্ছে কীভাবে আমরা সংস্কার চাই না?”

তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রকৃত সংস্কারের পক্ষে, প্রতারণামূলক সংস্কারের নয়। জনগণকে বিভ্রান্ত করে ভুয়া সংস্কারের চেষ্টা আমরা মেনে নিতে পারি না।”

শেখ হাসিনাকে ফেরানোর আহ্বান

ফখরুল বলেন, ভারতের মাটিতে অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, কিন্তু কোথাও অনুশোচনার কোনো ইঙ্গিত দেননি।
“তিনি একবারও বলেননি যে তিনি তার ভুলের জন্য দুঃখিত। সাংবাদিকেরা যখন জিজ্ঞেস করেছেন ক্ষমা চাইবেন কি না, তিনি বলেছেন— ‘না, আমরা ক্ষমা চাইব না।’ এখন সেই একই মানুষ ভারতে বসে প্রচার চালাচ্ছেন,” অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি ভারত সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই— শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনুন। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না; মানুষ তা মেনে নেবে না।”

 

#BNP #মির্জা_ফখরুল #জুলাই_সনদ #জাতীয়_নির্বাচন২০২৬ #জামায়াত #সংস্কার #গণভোট #বাংলাদেশ_রাজনীতি #সারাক্ষণরিপোর্ট