উদ্বোধন ও প্রতীকী অগ্রযাত্রা
শারজাহের শাসক ও খোরফাক্কান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, উচ্চ পরিষদের সদস্য ড. শেখ সুলতান বিন মুহাম্মদ আল কাসিমি বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন নতুন ‘শারজাহ মেরিন সায়েন্স রিসার্চ সেন্টার’। খোরফাক্কান শহরে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন, যা সমুদ্রবিজ্ঞান ও পরিবেশগত গবেষণায় আমিরাতের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে।
উদ্বোধনের পর শেখ সুলতান স্মারক ফলক উন্মোচন করেন এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। তিনি গবেষণাগারের অবকাঠামো, শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রম ও সমুদ্র সংরক্ষণে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি পর্যালোচনা করেন।
বারোটি আধুনিক গবেষণাগার ও উন্নত সুবিধা
নতুন কেন্দ্রটিতে রয়েছে বারোটি বিশেষায়িত গবেষণাগার— যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হিস্টোলজি, ওয়েট ল্যাব, মাইক্রোবায়োলজি ও এনভায়রনমেন্টাল অ্যানালাইসিস ল্যাব। এছাড়া আছে উন্নত মাইক্রোস্কপি সেন্টার, মেরিন কেমিস্ট্রি অ্যানালাইসিস ইউনিট, রিমোট সেন্সিং এবং ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (Geographic Information System – GIS) সুবিধা।
এখানে স্থাপন করা হয়েছে সমন্বিত পরীক্ষামূলক ট্যাংক সিস্টেম, সমুদ্রের পানি পরিশোধনাগার, বিশেষ মেরিন রিসার্চ পোর্ট এবং বৈজ্ঞানিক ডাইভিং প্রশিক্ষণ সুবিধা— যা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণায় এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে।

সমুদ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রা
শেখ সুলতান শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ করেন, যেগুলো সমুদ্র দূষণ শনাক্তকরণ, ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির হার নির্ধারণ এবং দূষিত পানি পৃথকীকরণে ব্যবহৃত হয়। তিনি মেরিন বর্জ্য বিশ্লেষণ ও দূষিত-পরিশুদ্ধ পানির তুলনামূলক পরীক্ষাও প্রত্যক্ষ করেন।
এই গবেষণাগুলো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমুদ্রবিজ্ঞান ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। পাশাপাশি এটি শারজাহকে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্যপদ অর্জনে সহায়তা করবে।
একাডেমিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব
খোরফাক্কান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স প্রোগ্রামটি পরিচালিত হচ্ছে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের একাডেমিক অংশীদারিত্বে। চার বছরের এই ব্যাচেলর প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা সমুদ্র ও জলজ বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয় এবং বৈজ্ঞানিক ডাইভিংয়ের মতো আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেশন অর্জন করে।
কেন্দ্রটির গবেষণায় এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্লাইমাউথ মেরিন ল্যাবরেটরি, ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টার ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা রয়েছে। এই অংশীদারিত্বের লক্ষ্য বহুমাত্রিক গবেষণা, উদ্ভাবন, ও বিশ্বমানের বৈজ্ঞানিক সংলাপে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী অর্জন
শেখ সুলতান সাক্ষাৎ করেন মেরিন ও অ্যাকোয়াটিক সায়েন্স কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, যারা ‘শারজাহ গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন অ্যাওয়ার্ড’-এর বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। তাদের “ওশান টেকসই উন্নয়ন” প্রকল্পে তারা প্রদর্শন করে একটি উন্নত সাবমেরিন প্রোটোটাইপ, যা স্মার্ট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্র পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও সুরক্ষায় কাজ করে।

একাডেমিক স্বীকৃতি ও সম্মাননা
অনুষ্ঠানে শেখ সুলতান এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক অধ্যাপকত্ব সনদ প্রদান করেন তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে—
১. ড. আলি হিলাল আলনাকবি, খোরফাক্কান বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর,
২. ড. স্টিভেন কিডম্যান, মেরিন সায়েন্স রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক, এবং
৩. ড. হেনরিক স্টাহল, কলেজ অব মেরিন অ্যান্ড অ্যাকোয়াটিক সায়েন্সেস-এর ডিন।
তাদের এই সম্মাননা প্রদান করা হয় কেন্দ্রটির প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা ও পরিবেশ সংরক্ষণে অবদানের জন্য।
নীল অর্থনীতি ও ভবিষ্যতের দৃষ্টি
‘শারজাহ মেরিন সায়েন্স রিসার্চ সেন্টার’-এর মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠা, যা সমুদ্র ও মহাসাগর সংরক্ষণে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। এটি শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির নয়, বরং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ব্লু ইকোনমি’ বা নীল অর্থনীতির বিকাশেও এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে।

শিক্ষার্থীরা শেখ সুলতানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই কেন্দ্র তাদের শিক্ষাজীবনে নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যতে দেশের সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
# শারজাহ,# শেখ সুলতান,# মেরিন সায়েন্স, #খোরফাক্কান বিশ্ববিদ্যালয়,# টেকসই উন্নয়ন,# নীল অর্থনীতি,# সংযুক্ত আরব আমিরাত, #পরিবেশ গবেষণা,# গালফ টুডে
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















