১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৪) পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা

একটি ঘর, একটি জীবিকা’— কেরালা সরকারের দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পে ৫৯ হাজারেরও বেশি পরিবার নতুন জীবনের পথে

দারিদ্র্যমুক্ত কেরালার ঘোষণা

আগামী ১ নভেম্বর কেরালা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে— রাজ্যটি এখন চরম দারিদ্র্যমুক্ত। এটি চার বছরব্যাপী এক বিশাল সামাজিক উদ্যোগের ফল। প্রায় চার লাখ গণনাকারী রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত গিয়ে চিহ্নিত করেছেন সবচেয়ে প্রান্তিক ও অসহায় মানুষদের। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এরপর প্রতিটি পরিবারের জন্য আলাদা উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়।


এক বিধবার ঘর ও জীবিকার গল্প

তিরুবনন্তপুরমের চেল্লামঙ্গলম ওয়ার্ডের সরু গলির ভেতরেই আম্বিকা দেবীর নতুন ঘর। ঘরের সামনে ছোট্ট মুদি দোকান— সেটিই এখন তাঁর জীবিকার কেন্দ্র। স্বামী মারা যাওয়ার পর সাত বছর ধরে তিনি ভগ্নপ্রায় ঘরে বাস করতেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কেরালা সরকারের ‘এক্সট্রিম পভার্টি ইরাডিকেশন প্রোগ্রাম’ (EPEP) তাঁকে একটি নতুন ঘর দেয়। পরে ৫০ হাজার রুপি সহায়তায় দোকানটি গড়ে তোলেন। এখন প্রতিবেশীরা নিয়মিত এখান থেকে কেনাকাটা করেন, আর সেটিই আম্বিকার জীবনের আশ্রয়।


চারটি সূচকে মূল্যায়ন: খাদ্য, স্বাস্থ্য, আয় ও আবাসন

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কেরালা সরকার চরম দারিদ্র্যের মানদণ্ড নির্ধারণ করে— খাদ্য, স্বাস্থ্য, আয় ও আবাসন। রাজ্যজুড়ে চার লাখ গণনাকারী মানুষ খুঁজে বের করেন যাঁরা সমাজের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন। কেউ কেউ রাস্তার ধারে, কেউ আবার নদীর নৌকায় একা বসবাস করছিলেন। এভাবে ৬৪,০০৬টি পরিবার চিহ্নিত হয়, যেখানে সদস্য সংখ্যা ছিল এক লক্ষের বেশি। তাঁদের মধ্যে ৪৩,৮৫০ জন ছিলেন একক সদস্যের পরিবার।


প্রত্যেক পরিবারের জন্য ‘মাইক্রো প্ল্যান’

অধিকাংশ সরকারি প্রকল্পে যেভাবে একরকম পরিকল্পনা চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে EPEP-এর বিশেষত্ব হলো— প্রতিটি পরিবারের জন্য আলাদা মাইক্রো-প্ল্যান তৈরি করা হয়। এই তালিকার শেষ সংখ্যা ছিল ৫৯,২৭৭ পরিবার। কারও প্রয়োজন ঘর, কারও প্রয়োজন জীবিকার সুযোগ, আবার কেউ চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য সহায়তা পেয়েছেন। এমনকি সাতজন মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনও পেয়েছেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

উদাহরণ হিসেবে ইদুক্কির মানকুলাম গ্রামপঞ্চায়েতের দাস রাজ ও তাঁর পরিবার মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, ঘর এবং জীবিকার জন্য সাহায্য পেয়েছেন। প্রকল্পের আওতায় তাঁরা একটি ঘর ও তিনটি ছাগল কেনার অর্থ পেয়েছেন।


সহায়তার বিশদ পরিসংখ্যান

স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২১,২৬৩ জনকে প্রয়োজনীয় সরকারি কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে, ৩,৯১৩ পরিবার পেয়েছে ঘর, ১,৩৩৮ পরিবার পেয়েছে জমিসহ ঘর, এবং ৫,৬৫১ পরিবারে ঘর মেরামত হয়েছে। নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, ওষুধ এবং প্রশমক সেবা দেওয়া হয়েছে হাজারো মানুষকে। জীবিকা সহায়তা পেয়েছে ৪,৩৯৪ পরিবার।


এক অন্ধ দম্পতির ঘর ফেরার গল্প

ইদুক্কির কুমারামঙ্গলমের শাই ভার্গিস ও তাঁর স্ত্রী সুনীথা দুজনেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁরা এক কক্ষের কুঁড়েঘরে বসবাস করছিলেন। জমির অংশীদারিত্ব জটিলতায় তাঁদের ঘর নির্মাণ আটকে ছিল। স্থানীয় প্রশাসন ২৭ বছর ধরে নিখোঁজ ভাই থ্যাঙ্কাচানকে খুঁজে বের করে জমি ভাগাভাগি সম্পন্ন করে। এরপর শাই পরিবার পেল LIFE প্রকল্পের ঘর ও কুদুম্বাস্রী থেকে জীবিকার জন্য মিউজিক বক্স ও মাইক্রোফোন।


মানবিক অংশগ্রহণের উদাহরণ

এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় দিক হলো জনসম্পৃক্ততা। স্থানীয় ব্যবসায়ী, সংগঠন ও সাধারণ মানুষও সহায়তা দিয়েছেন ঘর নির্মাণে ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিতে। এভাবে সমাজের অংশগ্রহণ প্রকল্পটিকে করেছে আরও কার্যকর।


জীবিকার মাধ্যমে স্থায়ী মুক্তি

কোল্লামের চাভারার ২৮ বছর বয়সী রেম্যা, যিনি স্বামীকে কোভিডে হারানোর পর নিজেই ক্যানসারে আক্রান্ত হন, প্রকল্পের সহায়তায় ঘর ও চাকরি দুটোই পেয়েছেন। এখন তিনি জনসেবা কেন্দ্রে কাজ করেন, যার আয় দিয়ে সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখাশোনা করেন।


বিকেন্দ্রীকৃত প্রশাসনের সাফল্য

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এম.বি. রাজেশ জানান, এই প্রকল্প সফল হওয়ার মূল কারণ হলো কেরালার শক্তিশালী স্থানীয় প্রশাসন। বিভিন্ন দপ্তর সমন্বয় করে কাজ করেছে— খাদ্য সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবহন, রাজস্ব ও আবাসন বিভাগ একসঙ্গে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

২০২৪ সালের মুন্ডাক্কাই ও চুরালমালা ভূমিধসের পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনেও এই মাইক্রো-প্ল্যান মডেল প্রয়োগ করা হচ্ছে।


সমালোচনা ও ভিন্নমত

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব চন্দ্রশেখর দাবি করেছেন, দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব হয়েছে মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের কারণে। অন্যদিকে, আদিবাসী সংগঠন ‘আদিবাসী গোত্র মহাসভা’ অভিযোগ করেছে— তালিকাভুক্ত পরিবারগুলোর মাত্র ৫ শতাংশ উপজাতি সম্প্রদায়ের।

সংগঠনের রাজ্য সমন্বয়ক এম. গীতানন্দন বলেন, প্রাথমিক জরিপ পদ্ধতিই ভুল ছিল, কারণ তাতে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ওয়ানাড ও আত্তাপাডির বহু পরিবার এখনও ভূমিহীন, বেকার এবং শুধুমাত্র রেশনেই বেঁচে আছে।


স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিবাদ ও সরকারি ঘোষণা

ASHA স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি অংশ সরকারকে অভিযুক্ত করেছে দারিদ্র্য সংজ্ঞা ভুলভাবে নির্ধারণের জন্য। তারা অভিনেতা মোহনলাল, মম্মুটি ও কমল হাসানকে অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দাবি, প্রতিদিন ২২৩ রুপি ভাতা দিয়ে জীবনযাপন অসম্ভব। তবে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, চরম দারিদ্র্যমুক্ত রাজ্য ঘোষণার আগেই ASHA কর্মীদের মাসিক ভাতা ১,০০০ রুপি বাড়ানো হয়েছে।


দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্যোগ

স্থানীয় সরকার বিভাগ ইতিমধ্যে প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ শুরু করেছে, যাতে অর্জিত সাফল্য টিকে থাকে এবং কোনো পরিবার যেন পুনরায় চরম দারিদ্র্যে না ফিরে যায়।


#কেরালা #দারিদ্র্যনির্মূল #সামাজিকউন্নয়ন #মানবিকসহায়তা #ভারত #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭)

একটি ঘর, একটি জীবিকা’— কেরালা সরকারের দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পে ৫৯ হাজারেরও বেশি পরিবার নতুন জীবনের পথে

০২:৪৭:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

দারিদ্র্যমুক্ত কেরালার ঘোষণা

আগামী ১ নভেম্বর কেরালা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে— রাজ্যটি এখন চরম দারিদ্র্যমুক্ত। এটি চার বছরব্যাপী এক বিশাল সামাজিক উদ্যোগের ফল। প্রায় চার লাখ গণনাকারী রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত গিয়ে চিহ্নিত করেছেন সবচেয়ে প্রান্তিক ও অসহায় মানুষদের। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এরপর প্রতিটি পরিবারের জন্য আলাদা উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়।


এক বিধবার ঘর ও জীবিকার গল্প

তিরুবনন্তপুরমের চেল্লামঙ্গলম ওয়ার্ডের সরু গলির ভেতরেই আম্বিকা দেবীর নতুন ঘর। ঘরের সামনে ছোট্ট মুদি দোকান— সেটিই এখন তাঁর জীবিকার কেন্দ্র। স্বামী মারা যাওয়ার পর সাত বছর ধরে তিনি ভগ্নপ্রায় ঘরে বাস করতেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কেরালা সরকারের ‘এক্সট্রিম পভার্টি ইরাডিকেশন প্রোগ্রাম’ (EPEP) তাঁকে একটি নতুন ঘর দেয়। পরে ৫০ হাজার রুপি সহায়তায় দোকানটি গড়ে তোলেন। এখন প্রতিবেশীরা নিয়মিত এখান থেকে কেনাকাটা করেন, আর সেটিই আম্বিকার জীবনের আশ্রয়।


চারটি সূচকে মূল্যায়ন: খাদ্য, স্বাস্থ্য, আয় ও আবাসন

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কেরালা সরকার চরম দারিদ্র্যের মানদণ্ড নির্ধারণ করে— খাদ্য, স্বাস্থ্য, আয় ও আবাসন। রাজ্যজুড়ে চার লাখ গণনাকারী মানুষ খুঁজে বের করেন যাঁরা সমাজের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন। কেউ কেউ রাস্তার ধারে, কেউ আবার নদীর নৌকায় একা বসবাস করছিলেন। এভাবে ৬৪,০০৬টি পরিবার চিহ্নিত হয়, যেখানে সদস্য সংখ্যা ছিল এক লক্ষের বেশি। তাঁদের মধ্যে ৪৩,৮৫০ জন ছিলেন একক সদস্যের পরিবার।


প্রত্যেক পরিবারের জন্য ‘মাইক্রো প্ল্যান’

অধিকাংশ সরকারি প্রকল্পে যেভাবে একরকম পরিকল্পনা চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে EPEP-এর বিশেষত্ব হলো— প্রতিটি পরিবারের জন্য আলাদা মাইক্রো-প্ল্যান তৈরি করা হয়। এই তালিকার শেষ সংখ্যা ছিল ৫৯,২৭৭ পরিবার। কারও প্রয়োজন ঘর, কারও প্রয়োজন জীবিকার সুযোগ, আবার কেউ চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য সহায়তা পেয়েছেন। এমনকি সাতজন মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনও পেয়েছেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

উদাহরণ হিসেবে ইদুক্কির মানকুলাম গ্রামপঞ্চায়েতের দাস রাজ ও তাঁর পরিবার মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, ঘর এবং জীবিকার জন্য সাহায্য পেয়েছেন। প্রকল্পের আওতায় তাঁরা একটি ঘর ও তিনটি ছাগল কেনার অর্থ পেয়েছেন।


সহায়তার বিশদ পরিসংখ্যান

স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২১,২৬৩ জনকে প্রয়োজনীয় সরকারি কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে, ৩,৯১৩ পরিবার পেয়েছে ঘর, ১,৩৩৮ পরিবার পেয়েছে জমিসহ ঘর, এবং ৫,৬৫১ পরিবারে ঘর মেরামত হয়েছে। নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, ওষুধ এবং প্রশমক সেবা দেওয়া হয়েছে হাজারো মানুষকে। জীবিকা সহায়তা পেয়েছে ৪,৩৯৪ পরিবার।


এক অন্ধ দম্পতির ঘর ফেরার গল্প

ইদুক্কির কুমারামঙ্গলমের শাই ভার্গিস ও তাঁর স্ত্রী সুনীথা দুজনেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁরা এক কক্ষের কুঁড়েঘরে বসবাস করছিলেন। জমির অংশীদারিত্ব জটিলতায় তাঁদের ঘর নির্মাণ আটকে ছিল। স্থানীয় প্রশাসন ২৭ বছর ধরে নিখোঁজ ভাই থ্যাঙ্কাচানকে খুঁজে বের করে জমি ভাগাভাগি সম্পন্ন করে। এরপর শাই পরিবার পেল LIFE প্রকল্পের ঘর ও কুদুম্বাস্রী থেকে জীবিকার জন্য মিউজিক বক্স ও মাইক্রোফোন।


মানবিক অংশগ্রহণের উদাহরণ

এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় দিক হলো জনসম্পৃক্ততা। স্থানীয় ব্যবসায়ী, সংগঠন ও সাধারণ মানুষও সহায়তা দিয়েছেন ঘর নির্মাণে ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিতে। এভাবে সমাজের অংশগ্রহণ প্রকল্পটিকে করেছে আরও কার্যকর।


জীবিকার মাধ্যমে স্থায়ী মুক্তি

কোল্লামের চাভারার ২৮ বছর বয়সী রেম্যা, যিনি স্বামীকে কোভিডে হারানোর পর নিজেই ক্যানসারে আক্রান্ত হন, প্রকল্পের সহায়তায় ঘর ও চাকরি দুটোই পেয়েছেন। এখন তিনি জনসেবা কেন্দ্রে কাজ করেন, যার আয় দিয়ে সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখাশোনা করেন।


বিকেন্দ্রীকৃত প্রশাসনের সাফল্য

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এম.বি. রাজেশ জানান, এই প্রকল্প সফল হওয়ার মূল কারণ হলো কেরালার শক্তিশালী স্থানীয় প্রশাসন। বিভিন্ন দপ্তর সমন্বয় করে কাজ করেছে— খাদ্য সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবহন, রাজস্ব ও আবাসন বিভাগ একসঙ্গে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

২০২৪ সালের মুন্ডাক্কাই ও চুরালমালা ভূমিধসের পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনেও এই মাইক্রো-প্ল্যান মডেল প্রয়োগ করা হচ্ছে।


সমালোচনা ও ভিন্নমত

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব চন্দ্রশেখর দাবি করেছেন, দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব হয়েছে মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের কারণে। অন্যদিকে, আদিবাসী সংগঠন ‘আদিবাসী গোত্র মহাসভা’ অভিযোগ করেছে— তালিকাভুক্ত পরিবারগুলোর মাত্র ৫ শতাংশ উপজাতি সম্প্রদায়ের।

সংগঠনের রাজ্য সমন্বয়ক এম. গীতানন্দন বলেন, প্রাথমিক জরিপ পদ্ধতিই ভুল ছিল, কারণ তাতে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ওয়ানাড ও আত্তাপাডির বহু পরিবার এখনও ভূমিহীন, বেকার এবং শুধুমাত্র রেশনেই বেঁচে আছে।


স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিবাদ ও সরকারি ঘোষণা

ASHA স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি অংশ সরকারকে অভিযুক্ত করেছে দারিদ্র্য সংজ্ঞা ভুলভাবে নির্ধারণের জন্য। তারা অভিনেতা মোহনলাল, মম্মুটি ও কমল হাসানকে অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দাবি, প্রতিদিন ২২৩ রুপি ভাতা দিয়ে জীবনযাপন অসম্ভব। তবে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, চরম দারিদ্র্যমুক্ত রাজ্য ঘোষণার আগেই ASHA কর্মীদের মাসিক ভাতা ১,০০০ রুপি বাড়ানো হয়েছে।


দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্যোগ

স্থানীয় সরকার বিভাগ ইতিমধ্যে প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ শুরু করেছে, যাতে অর্জিত সাফল্য টিকে থাকে এবং কোনো পরিবার যেন পুনরায় চরম দারিদ্র্যে না ফিরে যায়।


#কেরালা #দারিদ্র্যনির্মূল #সামাজিকউন্নয়ন #মানবিকসহায়তা #ভারত #সারাক্ষণরিপোর্ট