প্রকল্প ঘিরে বিতর্ক ও সরকারের অবস্থান
গ্রেট নিকোবর দ্বীপে ৯২ হাজার কোটি রুপির অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে চলমান বিতর্কে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, তারা প্রকল্পটির পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। জাতীয় সবুজ ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি)-এর শুনানিতে কেন্দ্র পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই প্রকল্পে কোনো আদিবাসীকে উচ্ছেদ করা হবে না, বরং বনাঞ্চলের বৃহত্তর অংশ সংরক্ষিতই থাকবে।
সরকার জানায়, দ্বীপের মোট এলাকার প্রায় ১৮ শতাংশ অংশে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি অংশ অক্ষত বনভূমি হিসেবে থাকবে।
প্রকল্পের পরিধি ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা
এই বিশাল প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা হবে একটি ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক টাউনশিপ এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় ১৬০ বর্গকিলোমিটার জমিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, যার মধ্যে ১৩০ বর্গকিলোমিটারই বনাঞ্চল। এখানেই বসবাস করে নিকোবরিজ ও শম্পেন সম্প্রদায়— উভয়েই তফসিলি উপজাতি, যার মধ্যে শম্পেন গোষ্ঠীকে ‘বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ উপজাতি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।

পরিবেশগত উদ্বেগ ও আইনি চ্যালেঞ্জ
সামাজিক কর্মী আশীষ কোঠারির দাখিল করা একটি আবেদনসহ একাধিক জনস্বার্থ মামলা প্রকল্পটির পরিবেশ ছাড়পত্রকে চ্যালেঞ্জ করে। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ‘আইল্যান্ড কোস্টাল রেগুলেশন জোন’ (আইসিআরজেড) বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নেও গুরুতর ঘাটতি রয়েছে।
এর জবাবে কেন্দ্র দাবি করে, প্রকল্প শুরুর আগে বহু দশক ধরে পরিচালিত গবেষণা ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, স্থানান্তর ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রবাল ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পরিকল্পনা
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটী জানান, প্রকল্প এলাকায় মোট ২০,৬৬৮টি প্রবাল কলোনির মধ্যে ১৬,০০০টিরও বেশি স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে, বাকি ৪,৫০০টি প্রবালের জন্যও দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি আরও জানান, এলাকায় পাওয়া ৫১টি ‘নিকোবর মেগাপোড’ পাখির বাসার মধ্যে ৩০টি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাকি বাসাগুলোর সুরক্ষায় পৃথক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ‘লেদারব্যাক’ কচ্ছপের প্রজনন সৈকতগুলোও সংরক্ষণের আওতায় আনা হবে।
‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে প্রকল্পের দাবি
সরকারের বক্তব্যে বলা হয়, এই প্রকল্প কেবল অবকাঠামো নয়, বরং ভারতের একটি “জাতীয় সম্পদ” হিসেবে বিবেচিত হবে। পরিবেশ সংরক্ষণের অংশ হিসেবে সরকার আগামী তিন দশক ধরে চলবে এমন সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি বাধ্যতামূলক করেছে।
তারা আরও উল্লেখ করে, প্রকল্পের পরিবেশ ছাড়পত্র একটি “সজীব দলিল” যা ২০৫২ সাল পর্যন্ত জৈববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রমের নির্দেশনা দেবে।

আদিবাসী সুরক্ষা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
সরকার জোর দিয়ে জানায়, কোনো উপজাতি সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ বা স্থানচ্যুত করা হবে না। প্রকল্পটি দ্বীপের মোট দ্বীপমালার মাত্র ১.৮২ শতাংশ জুড়ে হবে— যা পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখবে বলেই দাবি করা হয়।
জাতীয় সবুজ ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে ৭ই নভেম্বর।
: #গ্রেটনিকোবর #ভারতসরকার #পরিবেশ #এনজিটি #আদিবাসীসুরক্ষা #প্রকল্প #দ্বীপউন্নয়ন
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















