ভারতবর্ষগামি সান্তা-পাওলা নামক জাহাজে আরোহণ করেন। অবশ্য ইত্তোসহ অন্যান্যদেরকে বহনকারি সান্তা-পাওলা মার্কিন বিমান সেনা প্রেরণের প্রথম জাহাজ ছিলো না
প্রাথমিক পর্যায়ে, বার্মায় জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-স্ট্রট্র্যাটেজি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রেও ব্রিটেন একমত হতে পারছিল না। বার্মা ক্যাম্পেনে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট হওয়ার প্রধান লক্ষ্য ছিল- চীনমুখি স্থলপথটি পুনরায় দখল করে খোলার ব্যবস্থা ক্যা এবং চীনের জাতীয় সরকারকে প্রদত্ত সাপ্লাই ও ট্রেনিং এমনভাবে অব্যাহঃ রাখা যেন অবশেষে চীনের মাধ্যমেই জাপানের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালিত করা যায়।
কিন্তু ব্রিটেন মহা আপত্তি করে; মহা আপত্তি করার প্রধান কারণ ছিল যে এই প্রক্রিয়াটি চীনকে নিশ্চয় শক্তিশালী করে তুলবে- কিন্তু ব্রিটেন চায় না যে চীন এমনভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠুক; কারণ তার মহা উদ্বেগ দুশ্চিন্তা ছিল যে যুদ্ধোত্তর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশ আধিপত্যের বিরুদ্ধে চীন বাগড়া দিয়ে পারে। তদুপরি ব্রিটেন তার যুদ্ধোত্তর স্টেটাস কুও বজায় রাখার পক্ষপাতি ছিল, অর্থাৎ যুদ্ধ শেষে সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করবে।
কিন্তু আমেরিকানদের ইচ্ছা ছিল একেবারেই উল্টোমুখি, বিপরীত, তারা চায় যে যুদ্ধোত্তর দক্ষিণ এশিয়র দেশগুলো স্বাধীন সার্বভৌমত্ব অর্জন করুক। ১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসে রুজভেল্ট ও চার্চিল মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কায় মিটিং করেন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বার্মা ফ্রন্টে অ্যাংলো-আমেরিকান মৈত্রীজোটের ভবিষ্যৎ স্ট্র্যাটেজি সংশ্লিষ্ট একটি পরিকল্পনা নির্ধারণ করা। ক্যাসাব্লাঙ্কা মিটিং-এ তাঁরা একমত হন যে ‘বার্মা টু চীন’ স্থলপথ খোলার জন্য বার্মায় প্রচণ্ড ক্যাম্পেন বা অভিযান শুরু করা হবে।
১৯৪২ সালের আটাশে মে ইভো দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লস্টোন থেকে ভারতবর্ষগামি সান্তা-পাওলা নামক জাহাজে আরোহণ করেন। অবশ্য ইত্তোসহ অন্যান্যদেরকে বহনকারি সান্তা-পাওলা মার্কিন বিমান সেনা প্রেরণের প্রথম জাহাজ ছিলো না: সান্তা-পাওলার দুইমাস পূর্ব থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ভারতে এরকম সামরিক কনভয় পাঠানো শুরু করেছিল। সান্তা-পাওলা ছিল আরেকটি সংযোজনমাত্র। ইত্যের সঙ্গে ছিল পচাত্তর পাউন্ড ওজনের মালপত্র, একটি রাইফেল এবং অ্যামো বেল্ট।
জাহাজ ঘাটে এসে, চারদিক থেকে পেচানো সাপের মতো জাহাজ ঘিরে অপেক্ষমাণদের লম্বা লাইন দেখে ইভোর তো ভিমড়ি খাওয়া দশা। অ-নে-ক অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর ইভো অবশেষে জাহাজে আরোহণ করে। জাহাজের ডেকের ঠিক নিচেয় বিশাল একটা ঘরে ইভো-কে যমলশয্যা বা বাঙ্ক বেড দেখিয়ে দেয়া হলো। ধমলশয্যাটি ছিল ‘তিন সারি’র বা তিন-তলা বিশিষ্ট শয্যা, তবে সৌভাগ্যক্রমে ইভোর বরাদ্দে নিচের বিছানিটি জোটে। ঘরটি ছিল উষ্ণ, গুমোট এবং দুর্বিষহ।
আরোহণ পর্ব সমাপ্তির পরে সেনাদেরকে জানানো হয় যে যাত্রার প্রথম রাতে কাউকে কোনো খাবার খেতে দেয়া হবে না। আদেশ জারি হয় যে: রাতের বেলা কেউ বাতি জ্বালাবে না, এমনকি সিগারেটের লাইটারও জ্বালানো নিষেধ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় এলাকায় শত্রুপক্ষের সাবমেরিনকে আনাগোনা করতে দেখা গেছে।
(চলবে)
নাঈম হক 



















