আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ঠান্ডার আমেজ
দিল্লি এ বছর তিন বছরে সবচেয়ে ঠান্ডা ও বৃষ্টিপূর্ণ অক্টোবর পার করেছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) জানিয়েছে, মাসজুড়ে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে দিনের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল। অক্টোবরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দীর্ঘমেয়াদি গড়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি কম। এটি ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ও কারণ
আইএমডির তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে রাজধানী দিল্লিতে ৮৯.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে—যা স্বাভাবিক গড়ের (১৫.১ মিলিমিটার) ছয় গুণ বেশি, অর্থাৎ ৪৯১ শতাংশ উদ্বৃত্ত। এই বৃষ্টিপাত দিল্লিকে করেছে তিন বছরে সবচেয়ে ভিজে অক্টোবরের শহর। ২০২৪ সালে কোনো বৃষ্টি হয়নি, আর ২০২৩ সালে ছিল মাত্র ৫.৪ মিলিমিটার। গত দশ বছরে এটি দিল্লির তৃতীয় সর্বাধিক বৃষ্টিপূর্ণ অক্টোবর।
স্কাইমেট ওয়েদারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মহেশ পালাওয়াত বলেন, “অক্টোবরের প্রথমার্ধে দিল্লিতে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে বৃষ্টি না হলেও আকাশ ছিল মেঘলা, যা দিনের তাপমাত্রা কমিয়ে এবং রাতের উষ্ণতা সামান্য বাড়িয়ে দিয়েছে।”
মাসজুড়ে তাপমাত্রার ওঠানামা
অক্টোবর ১ থেকে ৮ তারিখের মধ্যে মূল বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মাসের প্রথম দিনই ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, যা ছিল সর্বোচ্চ একদিনের রেকর্ড। মাসজুড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৭ ডিগ্রি (অক্টোবর ২ তারিখে) এবং সর্বনিম্ন দিনের তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ডিগ্রি (অক্টোবর ২৬ তারিখে)। অন্যদিকে গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি।
আইএমডি কর্মকর্তারা জানান, মৌসুমি বায়ুর আগাম প্রত্যাহার সত্ত্বেও পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ও অন্যান্য আবহাওয়া ব্যবস্থার কারণে এ পরিবর্তন ঘটেছে।
দূষণ ও বায়ুর মানের অবনতি
তবে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে মৌসুমি বায়ু সরে যাওয়ার পর বাতাসের গতিবেগ কমে যায়, ফলে রাজধানীর বায়ুমান দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (সিপিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে দিল্লির গড় বায়ু মান সূচক (একিউআই) ছিল ২২৪, যা ‘দুর্বল’ শ্রেণিতে পড়ে। ৩১ অক্টোবর একিউআই বেড়ে ৩৭৩-এ পৌঁছায়। গত তিন বছরের মধ্যে অক্টোবর মাসে এটি সর্বোচ্চ।
সিপিসিবির প্রাক্তন কর্মকর্তা দীপঙ্কর সাহা বলেন, “প্রতিবছর অক্টোবর মাসে মৌসুমি বায়ু প্রত্যাহারের পর থেকেই রাজধানীর বায়ু মান দ্রুত খারাপ হয়।”
তথ্যঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ
এছাড়া ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ জানিয়েছে, দিল্লির ৩৯টি বায়ু মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৯টিতে দীপাবলির দিন ও পরদিনে পূর্ণ ঘণ্টাভিত্তিক তথ্য পাওয়া গেছে। এটি রাজধানীর দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় তথ্যসংগ্রহের ঘাটতির একটি ইঙ্গিত বহন করে।
সব মিলিয়ে, দিল্লি এ বছর ঠান্ডা ও বৃষ্টিতে ভরা এক ব্যতিক্রমী অক্টোবর পার করেছে। কিন্তু মৌসুমি বায়ুর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই পুরনো সমস্যাটি ফিরে এসেছে: দূষণের ঘন কুয়াশা। এখন রাজধানীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই শীতের শুরুতে ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
#দিল্লি_আবহাওয়া #অক্টোবর_বৃষ্টি #দিল্লি_দূষণ #ভারত_আবহাওয়া #আইএমডি #বায়ু_মান #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
																			
																সারাক্ষণ রিপোর্ট 								 



















