০৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
নোয়াখালীর কবিরহাটে ট্রাক-অটোর সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু কপ৩০ শুরুর আগেই নতুন জলবায়ু লক্ষ্য ঠিক করতে হুড়োহুড়ি ইইউর সিনেটরের অভিযোগে গুগলের জেমা এআই সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া বুসান এপিকে-র পর মাঠ ধরে রাখল চীন, আলোচনায় টিকে থাকার চাপ আমেরিকার জামায়াত নেতাকে নিয়ে ‘অশালীন মন্তব্য’: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলা সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’—নরম সুরে বলা সম্পর্কের গল্প হ্যারিসন ফোর্ডের হঠাৎ আগমনে ‘ট্রেন ড্রিমস’ প্রিমিয়ারে বাড়তি আলো জাপানের বিনিয়োগে রেকো ডিক খনি: তামার ঘাটতি মোকাবিলায় নতুন দিগন্ত সৃজনশীলতা ও ফ্যাশনের সীমানা ভাঙা—ভিক্টর ও রলফের অসাধারণ রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনী বিনিয়োগে জেন জেড-এর ভিন্নধর্মী পথচলা

২৩৭টি আসনে বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষণা, ৬৩ আসন খালি কেন, বাদ পড়লেন কারা?

  • Sarakhon Report
  • ১১:৪০:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • 18

বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় নেই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় অনেক নেতার নাম

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। এর মধ্যে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একটি আসনে প্রার্থী করা হয়েছে।

খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন ফেনী-১, বগুড়া-৭ এবং দিনাজপুর-৩ আসন থেকে। অন্যদিকে, তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

সোমবার বিকেলে ঢাকার গুলশানে অবস্থিত বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর আগে বেলা সাড়ে ১২টায় জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নেতাদের মধ্যে কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, সেটি ওই বৈঠকেই ঠিক করা হয় বলে জানা যাচ্ছে। অক্টোবর মাস থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করেছিল দলটি।

এদিকে, তিনশ’টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৬৩টি আসনে বিএনপি এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। ওই আসনগুলোর মধ্যে বড় একটি অংশ মিত্র দলগুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে দলটির একাধিক সূত্রে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে। আবার কিছু কিছু আসনে দলের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।

তবে ৬৩টি আসনের মধ্যে কতগুলোতে বিএনপি’র প্রার্থী দেওয়া হবে এবং কতগুলো মিত্রদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।

সোমবার ঘোষণা করা বিএনপি’র প্রার্থী তালিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, বেগম সেলিমা রহমানসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রীয় নেতার নাম দেখা যায়নি।

নেই একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য রুমিন ফারহানার নামও।

যদিও প্রার্থীদের নাম ঘোষণার সময়ই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, দল মনে করলে যেকোনো কারণে যেকোনো সংশোধনী আসতে পারে।

প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

হেভিওয়েট প্রার্থীরা কে কোন আসনে?

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বাইরেও মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে।

এর মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁও-০১ আসন থেকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লা-১ আসনে, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস, ঢাকা-৩ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নরসিংদী-২ আসনে আবদুল মঈন খান এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিবেন।

এর বাইরে, কক্সবাজার-১ আসন থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদ, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভোলা-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং দিনাজপুর-৬ আসনে এজেডএম জাহিদ হোসেন ভোট করবেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদের যারা মনোনয়ন পেলেন:

পটুয়াখালী-১ আসনে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নোয়াখালী-৩ আসনে বরকত উল্লাহ বুলু, নোয়াখালী-৪ আসনে মোহাম্মদ শাহজাহান, ফেনী-৩ আসনে আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাগুরা-২ আসনে নিতাই রায় চৌধুরী, কুমিল্লা-৩ আসনে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, টাঙ্গাইল-৮ আসনে আহমেদ আজম খান,

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কুমিল্লা-৬ আসনে মনিরুর হক চৌধুরী, ঢাকা-২ আসনে আমান উল্লাহ আমান, নোয়াখালী-১ আসনে মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী-৪ আসনে জয়নুল আবদিন ফারুক

বরিশাল-১ আসনে জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-৫ আসনে মজিবুর রহমান সারোয়ার, নেত্রকোনা-৪ আসনে লুৎফুজ্জামান বাবর, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে তাজভীর উল ইসলাম, পাবনা-৪ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে মুশফিকুর রহমান, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মঈনুল ইসলাম খান

সিলেট-১ আসনে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট-২ আসনে তাহমিনা রশদীর লুনা, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সিলেট-৬ আসনে এনামুল হক চৌধুরী, টাঙ্গাইল-২ আসনে আবদুস সালাম পিন্টু, ফেনী-২ আসনে জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, কিশোরগনজ-৪ আসনে ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার-৩ আসনে নাসের রহমান রয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন ফেনী-১, বগুড়া-৭ এবং দিনাজপুর-৩ আসন থেকে

মনোনয়ন পাওয়া যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে নরসিংদী-১ আসনে খায়রুল কবির খোকন এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যান এবং ময়মনসিংহ-১ আসনে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স রয়েছেন।

এর বাইরে, লালমনিরহাট-৩ আসনে আসাদুল হাবিব দুলু, চাঁপাই নবাবগঞ্জ -৩ আসনে হারুনর রশিদ, রাজশাহী-২ আসনে মিজানুর রহমান মিনু, নাটোর-২ আসনে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মাগুরা-২ নিতাই রায় চৌধুরী, খুলনা-২ নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৫ আসনে আলী আজগর লবী, পটুয়াখালী-১ আসনে সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, টাঙ্গাইল-২ আব্দুস সালাম পিন্টু, নেত্রকোনা-১ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে ড. ওসমান ফারুক, মুন্সিগঞ্জ-২ মিজানুর রহমান সিনহা, ঢাকা-৬ ইশরাক হোসেন, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, চাঁদপুর-১ এহসানুল হক মিলন, ফেনী -৩ আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নোয়াখালী-৩ বরকত উল্লাহ বুলু, চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে হুম্মাম কাদের চৌধুরী নির্বাচন করবেন।

১২টি আসনে নারী প্রার্থী ১০ জন

আসন্ন নির্বাচনে ২৩৭ জনের যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে ১০ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।

এর মধ্যে খালেদা জিয়া একা তিনটি আসনে নির্বাচন করবেন।

দলের অন্য নারী নেত্রীদের মধ্য ফরিদপুর-২ আসনে শ্যামা ওয়াবেদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন, যশোর-২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টু এবং শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, ঢাকা-১৪ সানজিদা ইসলাম তুলিএবং সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদী।

তারেক রহমান

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন

তালিকায় নেই যেসব গুরুত্বপূর্ণ নেতারা

সোমবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর দেখা গেছে এই তালিকায় নেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং বেগম সেলিমা রহমানের নাম।

প্রার্থী তালিকায় নেই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, সদ্য মনোনীত যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবীরের নামও।

নেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমিনুর রশীদ ইয়াসিনের নাম। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনও নেই প্রার্থী তালিকায়।

বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনায় ছিলেন একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য রুমিন ফারহানার নাম। তবে মনোনয়ন তালিকায় এবার তার নাম দেখা যায়নি।

ঢাকা ১০ আসন থেকে বিগত সময়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম। এই আসনে একবার প্রার্থী হয়েছিলেন আরেক নেতা রবিউল ইসলাম রবি। তাদের দুই জনের নামও নেই ঘোষিত তালিকায়।

মাগুরার একটি আসন থেকে এবার দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন আলোচিত নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। তবে তিনিও বাদ পড়েছেন এই তালিকা থেকে।

অন্যদিকে, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পরিবারের সদস্যদের অনেকেই বাদ পড়েছেন মনোনয়ন তালিকা থেকে। দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে থেকে এক পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত ছিল দলের।

যে কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদ, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদও বাদ পড়েছেন এই তালিকা থেকে।

তবে যেসব আসন থেকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা নির্বাচন করতেন, তাদের মৃত্যুজনিত কারণে কয়েকটি আসন থেকে তাদের সন্তান বা স্ত্রীদের এবার দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির লোগো

ফাঁকা আসনের কী হবে?

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যে ৬৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি, এর একটা বড় অংশ মিত্র দল ও জোটগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা জানিয়েছেন, মিত্র দলগুলোর বাইরেও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি এবং ইসলামপন্থী কিছু দলের সঙ্গে তাদের আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে আলোচনা চলছে।

এসব দলের জন্য আসন আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে বিএনপিকে।

এছাড়াও অনেক আসনে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকজন করে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এবং এসব এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও মীমাংসা করা যাচ্ছে না।

এসব কারণে ওই আসনগুলো খালি রাখা হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক জানিয়েছেন।

তবে দলটি মিত্র বা অন্য দলগুলোর জন্য শেষপর্যন্ত কতটা আসনের ছাড় দেবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

বিএনপির মিত্র একটি জোটের একাধিক নেতা বিবিসিকে বলেন, তাদের কারও কারও আসনে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি।

এখন আসন সমঝোতার আলোচনা হবে বলে তারা আশা করছেন।

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

নোয়াখালীর কবিরহাটে ট্রাক-অটোর সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু

২৩৭টি আসনে বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষণা, ৬৩ আসন খালি কেন, বাদ পড়লেন কারা?

১১:৪০:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। এর মধ্যে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একটি আসনে প্রার্থী করা হয়েছে।

খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন ফেনী-১, বগুড়া-৭ এবং দিনাজপুর-৩ আসন থেকে। অন্যদিকে, তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

সোমবার বিকেলে ঢাকার গুলশানে অবস্থিত বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর আগে বেলা সাড়ে ১২টায় জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নেতাদের মধ্যে কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, সেটি ওই বৈঠকেই ঠিক করা হয় বলে জানা যাচ্ছে। অক্টোবর মাস থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করেছিল দলটি।

এদিকে, তিনশ’টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৬৩টি আসনে বিএনপি এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। ওই আসনগুলোর মধ্যে বড় একটি অংশ মিত্র দলগুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে দলটির একাধিক সূত্রে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে। আবার কিছু কিছু আসনে দলের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।

তবে ৬৩টি আসনের মধ্যে কতগুলোতে বিএনপি’র প্রার্থী দেওয়া হবে এবং কতগুলো মিত্রদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।

সোমবার ঘোষণা করা বিএনপি’র প্রার্থী তালিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, বেগম সেলিমা রহমানসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রীয় নেতার নাম দেখা যায়নি।

নেই একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য রুমিন ফারহানার নামও।

যদিও প্রার্থীদের নাম ঘোষণার সময়ই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, দল মনে করলে যেকোনো কারণে যেকোনো সংশোধনী আসতে পারে।

প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

হেভিওয়েট প্রার্থীরা কে কোন আসনে?

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বাইরেও মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে।

এর মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁও-০১ আসন থেকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লা-১ আসনে, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস, ঢাকা-৩ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নরসিংদী-২ আসনে আবদুল মঈন খান এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিবেন।

এর বাইরে, কক্সবাজার-১ আসন থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদ, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভোলা-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং দিনাজপুর-৬ আসনে এজেডএম জাহিদ হোসেন ভোট করবেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদের যারা মনোনয়ন পেলেন:

পটুয়াখালী-১ আসনে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নোয়াখালী-৩ আসনে বরকত উল্লাহ বুলু, নোয়াখালী-৪ আসনে মোহাম্মদ শাহজাহান, ফেনী-৩ আসনে আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাগুরা-২ আসনে নিতাই রায় চৌধুরী, কুমিল্লা-৩ আসনে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, টাঙ্গাইল-৮ আসনে আহমেদ আজম খান,

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কুমিল্লা-৬ আসনে মনিরুর হক চৌধুরী, ঢাকা-২ আসনে আমান উল্লাহ আমান, নোয়াখালী-১ আসনে মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী-৪ আসনে জয়নুল আবদিন ফারুক

বরিশাল-১ আসনে জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-৫ আসনে মজিবুর রহমান সারোয়ার, নেত্রকোনা-৪ আসনে লুৎফুজ্জামান বাবর, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে তাজভীর উল ইসলাম, পাবনা-৪ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে মুশফিকুর রহমান, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মঈনুল ইসলাম খান

সিলেট-১ আসনে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট-২ আসনে তাহমিনা রশদীর লুনা, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সিলেট-৬ আসনে এনামুল হক চৌধুরী, টাঙ্গাইল-২ আসনে আবদুস সালাম পিন্টু, ফেনী-২ আসনে জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, কিশোরগনজ-৪ আসনে ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার-৩ আসনে নাসের রহমান রয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন ফেনী-১, বগুড়া-৭ এবং দিনাজপুর-৩ আসন থেকে

মনোনয়ন পাওয়া যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে নরসিংদী-১ আসনে খায়রুল কবির খোকন এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যান এবং ময়মনসিংহ-১ আসনে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স রয়েছেন।

এর বাইরে, লালমনিরহাট-৩ আসনে আসাদুল হাবিব দুলু, চাঁপাই নবাবগঞ্জ -৩ আসনে হারুনর রশিদ, রাজশাহী-২ আসনে মিজানুর রহমান মিনু, নাটোর-২ আসনে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মাগুরা-২ নিতাই রায় চৌধুরী, খুলনা-২ নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৫ আসনে আলী আজগর লবী, পটুয়াখালী-১ আসনে সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, টাঙ্গাইল-২ আব্দুস সালাম পিন্টু, নেত্রকোনা-১ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে ড. ওসমান ফারুক, মুন্সিগঞ্জ-২ মিজানুর রহমান সিনহা, ঢাকা-৬ ইশরাক হোসেন, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, চাঁদপুর-১ এহসানুল হক মিলন, ফেনী -৩ আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নোয়াখালী-৩ বরকত উল্লাহ বুলু, চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে হুম্মাম কাদের চৌধুরী নির্বাচন করবেন।

১২টি আসনে নারী প্রার্থী ১০ জন

আসন্ন নির্বাচনে ২৩৭ জনের যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে ১০ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।

এর মধ্যে খালেদা জিয়া একা তিনটি আসনে নির্বাচন করবেন।

দলের অন্য নারী নেত্রীদের মধ্য ফরিদপুর-২ আসনে শ্যামা ওয়াবেদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন, যশোর-২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টু এবং শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, ঢাকা-১৪ সানজিদা ইসলাম তুলিএবং সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদী।

তারেক রহমান

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন

তালিকায় নেই যেসব গুরুত্বপূর্ণ নেতারা

সোমবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর দেখা গেছে এই তালিকায় নেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং বেগম সেলিমা রহমানের নাম।

প্রার্থী তালিকায় নেই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, সদ্য মনোনীত যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবীরের নামও।

নেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমিনুর রশীদ ইয়াসিনের নাম। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনও নেই প্রার্থী তালিকায়।

বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনায় ছিলেন একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য রুমিন ফারহানার নাম। তবে মনোনয়ন তালিকায় এবার তার নাম দেখা যায়নি।

ঢাকা ১০ আসন থেকে বিগত সময়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম। এই আসনে একবার প্রার্থী হয়েছিলেন আরেক নেতা রবিউল ইসলাম রবি। তাদের দুই জনের নামও নেই ঘোষিত তালিকায়।

মাগুরার একটি আসন থেকে এবার দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন আলোচিত নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। তবে তিনিও বাদ পড়েছেন এই তালিকা থেকে।

অন্যদিকে, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পরিবারের সদস্যদের অনেকেই বাদ পড়েছেন মনোনয়ন তালিকা থেকে। দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে থেকে এক পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত ছিল দলের।

যে কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদ, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদও বাদ পড়েছেন এই তালিকা থেকে।

তবে যেসব আসন থেকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা নির্বাচন করতেন, তাদের মৃত্যুজনিত কারণে কয়েকটি আসন থেকে তাদের সন্তান বা স্ত্রীদের এবার দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির লোগো

ফাঁকা আসনের কী হবে?

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যে ৬৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি, এর একটা বড় অংশ মিত্র দল ও জোটগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা জানিয়েছেন, মিত্র দলগুলোর বাইরেও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি এবং ইসলামপন্থী কিছু দলের সঙ্গে তাদের আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে আলোচনা চলছে।

এসব দলের জন্য আসন আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে বিএনপিকে।

এছাড়াও অনেক আসনে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকজন করে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এবং এসব এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও মীমাংসা করা যাচ্ছে না।

এসব কারণে ওই আসনগুলো খালি রাখা হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক জানিয়েছেন।

তবে দলটি মিত্র বা অন্য দলগুলোর জন্য শেষপর্যন্ত কতটা আসনের ছাড় দেবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

বিএনপির মিত্র একটি জোটের একাধিক নেতা বিবিসিকে বলেন, তাদের কারও কারও আসনে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি।

এখন আসন সমঝোতার আলোচনা হবে বলে তারা আশা করছেন।

বিবিসি নিউজ বাংলা