টাইফুন টিনো (কালমেগি)-র ভয়াবহ আঘাতে ফিলিপাইনের সেবু প্রদেশে বন্যা ও ভূমিধসে বহু এলাকা বিপর্যস্ত, এবং উদ্ধারকর্মীরা এখনও নিখোঁজদের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাদেশিক সরকার ইতিমধ্যে পুরো অঞ্চলকে দুর্যোগ পরিস্থিতি (state of calamity) ঘোষণা করেছে।
সেবুতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি
সেবু প্রদেশেই সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
- লিলোয়ান: ৩৫ জন (সর্বোচ্চ)
- কোম্পোস্টেলা: ১৬ জন
- মানডাওয়ে সিটি: ১২ জন
- দানাও সিটি: ৯ জন
- তালিসায় সিটি: ৭ জন
- বালামবান (Balamban): ৬ জন
- কনসোলাসিয়ন: ১ জন
এছাড়া সেবু সিটি আলাদাভাবে ১২ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। বহু বারাঙ্গায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে; উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।

গভর্নরের মন্তব্য: “অপ্রত্যাশিত বন্যা”
সেবু গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি ছিল “অপ্রত্যাশিত”। তিনি বলেন, “আমরা ধারণা করছিলাম ঝড়বায়ুই সবচেয়ে বিপজ্জনক হবে, কিন্তু দেখা গেল পানিই আসল বিপদ।” সরকার বর্তমানে ত্রাণ কার্যক্রম ও বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারে মনোযোগী।
অবকাঠামো ও সরবরাহে বড় ব্যাঘাত
রাস্তাঘাট, সেতু ও ড্রেনেজ সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিষ্কারকরণ ও সরবরাহে বিলম্ব ঘটছে।
অনলাইন ভিডিওতে দেখা গেছে যানবাহন, কনটেইনার ও বাড়ি-ঘর বন্যা ও কাদার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।
স্থানীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, সেবুতে ২৪ ঘণ্টায় ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে — যা মাসিক গড়ের তুলনায় অনেক বেশি।
অন্যান্য অঞ্চলে প্রাণহানি
- পশ্চিম ভিসায়াস (Iloilo): ৫৫ বছর বয়সী এক নারী (Barangay Paloc So-ol, Dumanagas) নদীর ধারে কুটির ছিঁড়ে বন্যায় মহাদুর্ঘটনায় মারা যান; হাসপাতালে নেওয়া হলে ‘ডিওএ (DOA)’-তে ঘোষণা করা হয়।
- নেগ্রস আইল্যান্ড, আগুসান দেল সুর, লেইটে, বোহল ও কাপিজ: ভূমিধস, গাছপড়া ও দুর্ঘটনায় একাধিক মৃত্যু হয়েছে।

জাতীয়ভাবে ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা
- NDRRMC জানিয়েছে, প্রথমে ৬৩ জন নিহত ও ২৬ জন নিখোঁজ বলে জানানো হয়, পরে সংখ্যা বেড়ে যায়।
- মোট ৩১৮,০০০+ পরিবার বা প্রায় ১.১ মিলিয়ন মানুষ সাতটি অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত।
- ১৭৫,৫৩১ জন ২,১৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন; আরও ৬৫,৭৫১ জন আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।
- বিদ্যুৎ ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে ৭৪টি শহর ও উপজেলায়; ২৭টি সড়ক, ৫টি সেতু, ২টি বিমানবন্দর ও ১৫১টি সমুদ্রবন্দর অচল।
- সমুদ্রপথে চলাচল বন্ধ থাকায় লুজন ও ভিসায়াসের বন্দরগুলোতে ৪,০০০+ যাত্রী ও ১,৩০০ ট্রাক আটকে আছে।
- ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে ৮৪,৪৬৮ পরিবার (প্রায় ২.৬ লাখ মানুষ)।
- সরকারি ও স্থানীয় সংস্থাগুলো মিলিয়ে পিএস ৩১.৩ মিলিয়ন টাকার সহায়তা বিতরণ করেছে।
উদ্ধার কার্যক্রম ও সরকারি নির্দেশ
দেশজুড়ে ১,১৫৭টি সার্চ, রেসকিউ ও রিকভারি টিম এবং ১০,৭৩৬টি জরুরি দল কাজ করছে।
রাষ্ট্রপতি ফেরদিনান্ড মার্কোস জুনিয়র ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম দ্রুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা চলছে, তবে নিহতের সংখ্যা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে বলে গণ্য হচ্ছে।
সেবু সিটির জরুরি আহ্বান
সেবু সিটির মেয়র নেস্টর আর্কিভাল জানিয়েছেন, শহরে ভারী যন্ত্রপাতি, স্বেচ্ছাসেবক চালক ও ক্লিয়ারিং-রিকভারি কর্মী জরুরি প্রয়োজন।
শহর প্রশাসন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, হাইজিন কিট, তাঁবু ও প্রাথমিক সামগ্রী বিতরণের জন্য ডোনেশন সেন্টার খুলেছে। সরকারি অফিসগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে যাতে কর্মীরা ত্রাণকাজে অংশ নিতে পারেন।
শিশুদের প্রাণহানি
রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ন্যূনতম কয়েকজন শিশু ও কিশোর রয়েছে। পানির স্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চলে ফ্ল্যাশ ফ্লাডে তাদের মৃত্যু হয়।

আবহাওয়া দপ্তরের নতুন সতর্কতা
- আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, টাইফুন টিনো ২ নভেম্বর ‘পিএআর’ (PAR) অঞ্চলে প্রবেশ করে ৩ নভেম্বর দক্ষিণ লেইটে আঘাত হানে এবং পরে পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরে চলে যায়।
- উত্তর-পূর্ব মাইন্ডানাও উপকূলে থাকা আরেকটি ট্রপিকাল ডিপ্রেশন শুক্র বা শনিবার ‘পিএআর’-এ ফিরে আসতে পারে, যা সপ্তাহান্তে সুপার টাইফুনে রূপ নিতে পারে বলে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
টাইফুন টিনোতে সবচেয়ে বড় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে সেবু প্রদেশে — শতাধিক প্রাণহানি, গৃহহীনতা, ও অবকাঠামো ধ্বংসে বিপর্যস্ত এলাকা এখনো পুনরুদ্ধারের অপেক্ষায়। সরকারি, সামরিক ও স্বেচ্ছাসেবী দলগুলো উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে ক্রমবর্ধমান আবহাওয়াগত ঝুঁকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















