ভয়াবহ ঝড়ে ফিলিপাইনের বিপর্যয়
ফিলিপাইনে টাইফুন ‘কালমায়গি’র আঘাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে, এবং আরও ১২৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানায়, দেশের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে কালমায়গি যখন দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে অগ্রসর হয়, তখন এটি আবারও শক্তি অর্জন করে ভিয়েতনামের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।
ভিয়েতনামে ব্যাপক সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি
ভিয়েতনামের জিয়া লাই প্রদেশে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসে নিম্নাঞ্চলগুলোতে ভয়াবহ বন্যা এবং কৃষিক্ষেত্রে বড় ক্ষতি হতে পারে। জরুরি সতর্কতা জারি করে সবাইকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেবু প্রদেশে ধ্বংসের চিত্র
ফিলিপাইনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সেবু প্রদেশে পানি নেমে যাওয়ার পর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দেখা গেছে, শত শত ঘরবাড়ি ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে, গাড়ি উল্টে পড়েছে, রাস্তাগুলো কাঁদা ও ধ্বংসাবশেষে ভরপুর।

কালমায়গি আঘাত হানার আগে দেশজুড়ে ২ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। অনেকে ফিরে এসে দেখছেন, তাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। কেউ কেউ ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি পরিষ্কারের কঠিন কাজ শুরু করেছেন, ঘরের ভেতর ও রাস্তাঘাট থেকে কাদা সরাচ্ছেন।
নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার অভিযান
ফিলিপাইনের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা র্যাফি আলেহান্দ্রো বলেন, “এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ধ্বংসাবশেষ সরানো। এটি দ্রুত করতে হবে—যাতে নিখোঁজদের খোঁজ পাওয়া যায় এবং ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালানো যায়।”
নতুন ঝড়ের আশঙ্কা
যখন কালমায়গি (স্থানীয় নাম টিনো) ফিলিপাইনের এলাকা থেকে সরে যায়, তখন আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করে জানায়—মিন্ডানাও দ্বীপের পূর্ব দিকে আরেকটি নতুন ঝড় গঠিত হচ্ছে, যা পরবর্তী সপ্তাহের শুরুতে টাইফুনে রূপ নিতে পারে।
কালমায়গি হলো এই বছর ফিলিপাইনে আঘাত হানা ২০তম ঝড়। এক মাস আগেই উত্তর সেবুতে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে বহু মানুষ মারা গিয়েছিল এবং হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। সেই ক্ষত না শুকোতেই আবারও প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশটি বিপর্যস্ত হলো।
ভিয়েতনামে দ্বিতীয় আঘাতের সম্ভাবনা
ঝড়টি দক্ষিণ চীন সাগরের উপর দিয়ে চলতে চলতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং ভিয়েতনামের উপকূলে দ্বিতীয়বার আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব পড়বে ভিয়েতনামের মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি প্রদেশে, বিশেষ করে কফি উৎপাদনকারী এলাকায়—যেখানে বর্তমানে ফসল কাটার মৌসুম চলছে।
সরকারি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই হাজার হাজার সেনা সদস্যকে উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার কাজে প্রস্তুত রেখেছে।

বিমানবন্দর ও যাতায়াতে প্রভাব
ভিয়েতনামের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দা নাংসহ আটটি বিমানবন্দরের কার্যক্রমে ঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে। সব এয়ারলাইন ও স্থানীয় প্রশাসনকে ঘনিষ্ঠভাবে আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টাইফুন কালমায়গি শুধু ফিলিপাইনের প্রাণহানি নয়, ঘরবাড়ি, কৃষিক্ষেত্র এবং অবকাঠামোতেও ব্যাপক ক্ষতি ডেকে এনেছে। এখন এর পরবর্তী গন্তব্য ভিয়েতনাম, যেখানে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে উভয় দেশেই উদ্ধার ও পুনর্গঠনের কাজ হবে দীর্ঘ ও কঠিন এক লড়াই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















