০৮:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু শেয়ারবাজারে পতন: সপ্তাহ শেষে লাল সংকেতে ডিএসই ও সিএসই ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিতের আহ্বান হিন্দু মহাজোটের সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণন: গাজা পুনর্গঠন ও শান্তি আলোচনায় বাস্তব পদক্ষেপ চাইলেন এনক্রিপ্টেড ফোন কলেই ফাঁস ষড়যন্ত্রের খবর পাকিস্তান থেকে পাখির খাবার নামে আসা আফিম বীজ চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাঠের গাদায় অগ্নিকাণ্ড

মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের প্রতি যৌন হয়রানি: নারী সহিংসতা নিয়ে নতুন বিতর্ক

ঘটনাটি যেভাবে ঘটল

মেক্সিকো সিটির কেন্দ্রস্থলে সরকারি বৈঠকের মাঝে সংক্ষিপ্ত হাঁটার সময় প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম এক ব্যক্তির যৌন হয়রানির শিকার হন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও আকারে ভাইরাল হয়, যা পুরো দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

শেইনবাউম জানান, তিনি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বলেন, “যদি দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও এমন হয়, তাহলে সাধারণ তরুণ নারীরা কতটা নিরাপদ?” তিনি আরও বলেন, “কোনও পুরুষেরই নারীর ব্যক্তিগত পরিসরে প্রবেশ বা সম্মতি ছাড়া স্পর্শ করার অধিকার নেই।”


ভিডিও ভাইরাল, প্রশ্ন নিরাপত্তা নিয়ে

ভিডিওতে দেখা যায়, মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি শেইনবাউমের কাঁধে হাত রেখে তাকে আলিঙ্গন ও চুম্বন করার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্ট সঙ্গে সঙ্গে তাকে সরিয়ে দেন, পরে তার সহকারীরা সামনে এসে বাধা দেয়। সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা সদস্যরা পাশে ছিলেন না।

ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা কতটা কার্যকর। আগের প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাদরের মতোই শেইনবাউমও খুব সীমিত নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করেন এবং প্রায়ই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে থাকেন। তিনি বলেন, “আমি এই অভ্যাস পরিবর্তন করব না। জনগণের কাছাকাছি থাকা জরুরি।”

প্রেসিডেন্টের ধারণা, অভিযুক্ত ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।


সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা

ঘটনার পর শেইনবাউম মেক্সিকোর পত্রিকা ‘রেফর্মা’-র কড়া সমালোচনা করেন, কারণ তারা সেই মুহূর্তের ছবি প্রকাশ করেছিল। প্রেসিডেন্ট বলেন, “এটি ভুক্তভোগীকে পুনরায় শিকার বানানোর শামিল। এই ছবি প্রকাশ করা ডিজিটাল সহিংসতার আওতায় পড়ে।” তিনি সংবাদপত্রটির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চান।

এ বিষয়ে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও বিবৃতি দেয়। তারা নারীদের প্রতি সহিংসতার শিকার হলে অভিযোগ জানাতে উৎসাহিত করে, পাশাপাশি গণমাধ্যমকে নারীর মর্যাদা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা লঙ্ঘনকারী বিষয়বস্তু প্রচার না করার আহ্বান জানায়।

Sheinbaum grabbed by stranger

সমালোচনার মুখে শেইনবাউম

যদিও নারীবিষয়ক আইন ও নিরাপত্তা নিয়ে শেইনবাউমের সরকারের উদ্যোগ আছে, নারীবাদী সংগঠনগুলো তাকে আগেও সমালোচনা করেছে। তাদের অভিযোগ, নারী হত্যাকাণ্ড (ফেমিসাইড) প্রতিরোধে সরকারের প্রচেষ্টা এখনও দুর্বল।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মেক্সিকোতে ৮২১টি ফেমিসাইড রেকর্ড হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা ৫০১। তবে মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।


যৌন হয়রানিকে ফৌজদারি অপরাধ করার দাবি

নারী অধিকারকর্মী আনা ইয়েলি পেরেজ বলেন, “প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা প্রতিদিন হাজার নারীর জীবনের প্রতিচ্ছবি। এটি নিন্দনীয় এবং এটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত।”

এ বিষয়ে শেইনবাউম ঘোষণা দেন যে, যৌন হয়রানিকে “ফৌজদারি অপরাধ” হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তিনি নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন—মেক্সিকোর প্রতিটি রাজ্যের আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে। বর্তমানে প্রায় অর্ধেক রাজ্যে, এবং রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে যৌন হয়রানি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।


অভিযুক্তের গ্রেপ্তার

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম উরিয়েল রিভেরা। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনাটি মেক্সিকোতে নারীর নিরাপত্তা ও যৌন সহিংসতা রোধে সরকারের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীর্ষ পর্যায়ের নেত্রীর সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটলে সাধারণ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের প্রতি এই আক্রমণ শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা লঙ্ঘন নয়—এটি মেক্সিকো সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা ও অসম্মানের গভীর বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। ঘটনাটি দেশব্যাপী নারী অধিকার আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে পারে, যদি সরকার প্রতিশ্রুত পদক্ষেপগুলো বাস্তবে রূপ দেয়।

#মেক্সিকো #ক্লাউডিয়াশেইনবাউম #যৌনহয়রানি #নারীসহিংসতা #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে

মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের প্রতি যৌন হয়রানি: নারী সহিংসতা নিয়ে নতুন বিতর্ক

০৬:৩৭:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

ঘটনাটি যেভাবে ঘটল

মেক্সিকো সিটির কেন্দ্রস্থলে সরকারি বৈঠকের মাঝে সংক্ষিপ্ত হাঁটার সময় প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম এক ব্যক্তির যৌন হয়রানির শিকার হন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও আকারে ভাইরাল হয়, যা পুরো দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

শেইনবাউম জানান, তিনি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বলেন, “যদি দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও এমন হয়, তাহলে সাধারণ তরুণ নারীরা কতটা নিরাপদ?” তিনি আরও বলেন, “কোনও পুরুষেরই নারীর ব্যক্তিগত পরিসরে প্রবেশ বা সম্মতি ছাড়া স্পর্শ করার অধিকার নেই।”


ভিডিও ভাইরাল, প্রশ্ন নিরাপত্তা নিয়ে

ভিডিওতে দেখা যায়, মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি শেইনবাউমের কাঁধে হাত রেখে তাকে আলিঙ্গন ও চুম্বন করার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্ট সঙ্গে সঙ্গে তাকে সরিয়ে দেন, পরে তার সহকারীরা সামনে এসে বাধা দেয়। সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা সদস্যরা পাশে ছিলেন না।

ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা কতটা কার্যকর। আগের প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাদরের মতোই শেইনবাউমও খুব সীমিত নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করেন এবং প্রায়ই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে থাকেন। তিনি বলেন, “আমি এই অভ্যাস পরিবর্তন করব না। জনগণের কাছাকাছি থাকা জরুরি।”

প্রেসিডেন্টের ধারণা, অভিযুক্ত ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।


সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা

ঘটনার পর শেইনবাউম মেক্সিকোর পত্রিকা ‘রেফর্মা’-র কড়া সমালোচনা করেন, কারণ তারা সেই মুহূর্তের ছবি প্রকাশ করেছিল। প্রেসিডেন্ট বলেন, “এটি ভুক্তভোগীকে পুনরায় শিকার বানানোর শামিল। এই ছবি প্রকাশ করা ডিজিটাল সহিংসতার আওতায় পড়ে।” তিনি সংবাদপত্রটির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চান।

এ বিষয়ে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও বিবৃতি দেয়। তারা নারীদের প্রতি সহিংসতার শিকার হলে অভিযোগ জানাতে উৎসাহিত করে, পাশাপাশি গণমাধ্যমকে নারীর মর্যাদা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা লঙ্ঘনকারী বিষয়বস্তু প্রচার না করার আহ্বান জানায়।

Sheinbaum grabbed by stranger

সমালোচনার মুখে শেইনবাউম

যদিও নারীবিষয়ক আইন ও নিরাপত্তা নিয়ে শেইনবাউমের সরকারের উদ্যোগ আছে, নারীবাদী সংগঠনগুলো তাকে আগেও সমালোচনা করেছে। তাদের অভিযোগ, নারী হত্যাকাণ্ড (ফেমিসাইড) প্রতিরোধে সরকারের প্রচেষ্টা এখনও দুর্বল।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মেক্সিকোতে ৮২১টি ফেমিসাইড রেকর্ড হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা ৫০১। তবে মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।


যৌন হয়রানিকে ফৌজদারি অপরাধ করার দাবি

নারী অধিকারকর্মী আনা ইয়েলি পেরেজ বলেন, “প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা প্রতিদিন হাজার নারীর জীবনের প্রতিচ্ছবি। এটি নিন্দনীয় এবং এটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত।”

এ বিষয়ে শেইনবাউম ঘোষণা দেন যে, যৌন হয়রানিকে “ফৌজদারি অপরাধ” হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তিনি নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন—মেক্সিকোর প্রতিটি রাজ্যের আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে। বর্তমানে প্রায় অর্ধেক রাজ্যে, এবং রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে যৌন হয়রানি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।


অভিযুক্তের গ্রেপ্তার

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম উরিয়েল রিভেরা। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনাটি মেক্সিকোতে নারীর নিরাপত্তা ও যৌন সহিংসতা রোধে সরকারের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীর্ষ পর্যায়ের নেত্রীর সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটলে সাধারণ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের প্রতি এই আক্রমণ শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা লঙ্ঘন নয়—এটি মেক্সিকো সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা ও অসম্মানের গভীর বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। ঘটনাটি দেশব্যাপী নারী অধিকার আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে পারে, যদি সরকার প্রতিশ্রুত পদক্ষেপগুলো বাস্তবে রূপ দেয়।

#মেক্সিকো #ক্লাউডিয়াশেইনবাউম #যৌনহয়রানি #নারীসহিংসতা #সারাক্ষণরিপোর্ট