ফিলিপাইনের পর এবার ভিয়েতনামে তাণ্ডব
ভিয়েতনামের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে টাইফুন কালমেগির আঘাতে। শুক্রবার কর্মকর্তারা জানান, ঝড়টি বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় ভিয়েতনামে আঘাত হানার পর গাছ উপড়ে পড়ে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে স্থলভাগে প্রবেশের পর এটি দুর্বল হয়ে পড়ে।
এর আগে ফিলিপাইনে একই ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ১৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০০ জনেরও বেশি নিখোঁজ আছেন।
প্রবল বৃষ্টি ও ভূমিধসের আশঙ্কা
ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, দেশের মধ্যাঞ্চলের থান হোয়া, থেকে কোয়াং ত্রি পর্যন্ত এলাকায় ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। হুয়ে থেকে ডাক লাক পর্যন্ত নদীর পানি বাড়তে থাকায় বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
“আমি একেবারে অসহায়” — কৃষকের ক্ষোভ
গিয়া লাই প্রদেশে যেখানে ঝড়ের আঘাত সবচেয়ে বেশি লেগেছে, স্থানীয় চিংড়ি চাষি নুয়েন দিন সা জানান, তার প্রায় ছয় মেট্রিক টন চিংড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।
২৬ বছর বয়সী সা বলেন, “গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় আমি খামার ঘুরে দেখেছি। সব চেষ্টা করেও কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। আমার সব বিনিয়োগ শেষ। এখন আমি সম্পূর্ণভাবে হতাশ।”
তার দুইতলা গুদামঘর সাত মিটার উঁচু ঢেউ, ও প্রবল বাতাসে কিছু সময়ের জন্য ডুবে যায়, ফলে প্রায় এক বিলিয়ন ডং (প্রায় ৩৭,৯৫০ মার্কিন ডলার) ক্ষতি হয়।
বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন এলাকায় দুর্ভোগ
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়েছে, ঘরের ছাদ ও কাচের টুকরো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক বাসিন্দা জেনারেটরের চারপাশে জড়ো হয়ে মোবাইলসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস চার্জ করতে দেখা গেছে।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, প্রায় ২,৮০০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রায় তেরো লাখ মানুষ বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন।
রাষ্ট্র-চালিত ভিয়েতনাম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, কোয়াং নগাই প্রদেশে রেলপথ অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উদ্ধার তৎপরতা ও কৃষিতে সতর্কতা
সরকার দুই লাখ আটষট্টি হাজারেরও বেশি সেনা সদস্যকে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত করেছে এবং মধ্যাঞ্চলে সম্ভাব্য বন্যা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে, যা দেশটির প্রধান কফি উৎপাদন এলাকাগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে বৃষ্টি কমে এসেছে এবং কফি গাছগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি।

নতুন ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় ফিলিপাইন
অন্যদিকে, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র শুক্রবার আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। তিনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। অধিকাংশ মানুষ প্রবল বন্যার স্রোতে ভেসে গিয়েছেন।”
এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশটিতে ১৩৫ জন এখনও নিখোঁজ এবং ৯৬ জন আহত হয়েছে।
কালমেগি ছিল এই বছর দক্ষিণ চীন সাগরে গঠিত ১৩তম টাইফুন। ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন, প্রশান্ত মহাসাগরের টাইফুন বেল্টের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিবছরই এমন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে কালমেগির মতো ঝড়গুলো এখন আগের চেয়ে অনেক ক্রমে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এদিকে, ফিলিপাইনের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নতুন আরেকটি ঝড় “ফং-ওয়ং”-এর জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে, যা আগামী রবিবার বা সোমবার সকালে উত্তর ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন হিসেবে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
#টাইফুনকালমেগি #ভিয়েতনামঝড় #ফিলিপাইনদুর্যোগ #জলবায়ুপরিবর্তন #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















