সারাক্ষণ রিপোর্ট 
বিএনপি নেতা সতর্ক করলেন গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার হুমকি নিয়ে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শনিবার সতর্ক করেছেন যে কিছু রাজনৈতিক দলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ জনগণের অধিকার ও সুযোগকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। যেসব দল একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অংশ ছিল, তারা এখন এমন কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে যা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গণতান্ত্রিক শাসনই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব
‘হিন্দু রিপ্রেজেন্টেটিভ কাউন্সিল ২০২৫’-এ ভার্চুয়ালি ভাষণ দিতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা, কোনো দলের স্বার্থ রক্ষা করা নয়।
তিনি বলেন, “স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের কিছু সহযোগীর ভূমিকা এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা জনগণের অধিকার ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। দেশে অস্থিরতা তৈরি হলে পরাজিত ও পলাতক স্বৈরাচারী শক্তির পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি হবে।”
স্বৈরাচারবিরোধী ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান
তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকার ও সব গণতন্ত্রপন্থী শক্তিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যেমনভাবে কিছু বিরোধীদলীয় সদস্য একসময় স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে টিকে থাকার জন্য গোপন কৌশল নিয়েছিল, তেমনি এখন পরাজিত শক্তিগুলোও দেশের গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ করতে গোপনে ষড়যন্ত্র করছে।
“আগস্ট ৫-এর পরাজিত পলাতক শক্তিগুলো যেন কোনো দলের আড়ালে লুকিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে। এর প্রতিরোধে জাতীয় স্বৈরাচারবিরোধী ঐক্য বজায় রাখা সবচেয়ে বড় কৌশল,” তিনি বলেন।
বিএনপির সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি
তারেক রহমান জানান, বিএনপি এখনো অন্তর্বর্তী সরকার ও আন্দোলনের সহযোগী দলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ‘মতুয়া সম্প্রদায়’, যা হরিচাঁদ ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করেন।
গণতন্ত্র ও সহনশীল রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান
তারেক বলেন, বিএনপি শান্তিপ্রিয়, সহনশীল ও জনগণনির্ভর একটি রাজনৈতিক দল। ভিন্নমতকে সম্মান জানানো এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ।
তিনি বলেন, “বিএনপির রাজনীতি মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে পরিচালিত।”
তারেক আরও বলেন, একটি স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা, কোনো দলের স্বার্থে কাজ করা নয়।
নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার আহ্বান
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। “এই নির্বাচনের মাধ্যমে আপনারা স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এবং আপনাদের প্রতিনিধি বেছে নেবেন।”
জনগণের জন্য কল্যাণমূলক পরিকল্পনা
তারেক রহমান জানান, বিএনপি ইতোমধ্যে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে, যাতে একটি সমৃদ্ধ ও সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়।
তিনি বলেন, সরকার গঠনের সুযোগ পেলে বিএনপি পাঁচ মিলিয়ন নিম্নআয়ের পরিবারের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করবে, যা পরিবারের নারী প্রধানের নামে দেওয়া হবে—দারিদ্র্য বিমোচনের অংশ হিসেবে।
তাছাড়া, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ‘ফার্মার্স কার্ড’ দেওয়া হবে, যাতে তারা ধীরে ধীরে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারে।
সকল নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিতের অঙ্গীকার
তারেক বলেন, “বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার—একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে ধর্ম, জাতি বা পটভূমি নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক মর্যাদা, স্বাধীনতা ও সমান সুযোগে বসবাস করবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনই একমাত্র পথ।
ফখরুলের বক্তব্য
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের দল একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়—যেমনটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তিনি বলেন, মতুয়া সম্প্রদায় মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চায়, আর বিএনপি চায় যাতে সব সম্প্রদায়ের মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদায় বাঁচতে পারে।
ফখরুল আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে দলটি সরকার গঠন করতে পারে।
#রাজনীতি #বিএনপি #তারেক_রহমান #গণতন্ত্র #বাংলাদেশ_নির্বাচন
