বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের নতুন অধ্যায়
চীন সোমবার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর উদ্দেশে ওষুধ তৈরির প্রাথমিক রাসায়নিক (ড্রাগ প্রিকার্সর) রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপটি আসে এমন সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর ফেন্টানিল-সম্পর্কিত শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।
নতুন তালিকা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সোমবার ১৩টি রাসায়নিকের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেগুলো সিন্থেটিক ওপিওয়েড—বিশেষ করে ফেন্টানিল তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। এখন থেকে এই রাসায়নিকগুলো যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয় রপ্তানি করতে বিশেষ লাইসেন্স নিতে হবে। এই নিয়ম সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী সমঝোতা
চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর ২০% শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, চীন ফেন্টানিলের কাঁচামাল যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাহ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে, যার ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার আমেরিকান প্রাণ হারাচ্ছেন।
তবে গত মাসের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প শুল্কের হার অর্ধেকে নামিয়ে ১০% করেন। তিনি দাবি করেন, চীন এই বিষয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।

বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে সাময়িক বিরতি
এই সমঝোতা আসলে এক বছরের জন্য পারস্পরিক বাণিজ্যিক যুদ্ধ থেকে বিরতির অংশ। উভয় দেশই একে অপরের ওপর নতুন করে কোনো অতিরিক্ত শুল্ক, বাণিজ্যিক সীমাবদ্ধতা বা শিপিং ফি আরোপ করবে না বলে সম্মত হয়েছে। তবুও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে চীনের ওপর মোট কার্যকর শুল্কহার ৪০% এর বেশি রাখছে, যার মধ্যে ফেন্টানিল-সম্পর্কিত ১০% শুল্কও অন্তর্ভুক্ত।
আইনপ্রয়োগ ও গোয়েন্দা সহযোগিতা
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল সম্প্রতি চীন সফর করেছেন—ফেন্টানিল ও আইনপ্রয়োগ সংক্রান্ত আলোচনার জন্য। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, তিনি এই সফর সম্পর্কে অবগত নন।
আগের নিয়ন্ত্রণের পরিধি আরও বাড়ল
চীনের এই নতুন নিয়ম মূলত বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ। এর আগে চীন মিয়ানমার, লাওস ও আফগানিস্তানের উদ্দেশে ৪১টি প্রিকার্সর রাসায়নিক রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল। নতুন তালিকায় উল্লিখিত দেশগুলো ছাড়া অন্য কোনো দেশে এসব রাসায়নিক রপ্তানিতে এখনো লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই।
![]()
চীনের এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যদিও উভয় পক্ষ আপাতত উত্তেজনা কমাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে, ফেন্টানিল ও সংশ্লিষ্ট রাসায়নিকের প্রবাহ নিয়ে পারস্পরিক আস্থা এখনো দুর্বলই রয়ে গেছে।
#চীন #যুক্তরাষ্ট্র #ফেন্টানিল #বাণিজ্যযুদ্ধ #রপ্তানিনিয়ন্ত্রণ #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















