এই মাসে বিশ্বজুড়ে তোলা কিছু বিস্ময়কর বিজ্ঞান-ফটোগ্রাফির মধ্যে রয়েছে প্রবালের ভেতরের জগতের অভূতপূর্ব দৃশ্য এবং আকাশে সৃষ্টি হওয়া বিরল ‘কেলভিন–হেলমহোল্টজ’ মেঘ। বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক ঘটনার সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছে এই ছবিগুলো।
প্রবালের ভেতরের স্বপ্নিল বন
এটি দেখতে যেন কোনো রূপকথার স্বপ্নরাজ্য। কিন্তু বাস্তবে এটি কোনো বন নয়, আর মানুষের হাঁটার মতো বড় জায়গাও নয়। ছবিটি আসলে এক প্রকার সফট কোরাল—ফুলকপির মতো দেখতে ‘কাউলিফ্লাওয়ার সফট কোরাল’-এর ভেতরের অংশ।
এই ছবিটি ২০২৫ সালের ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতার ন্যাচারাল আর্টিস্ট্রি বিভাগে রানার-আপ হয়। ছবি তুলেছেন রস গাজডিয়ন, যিনি বিশেষ এক ম্যাক্রো–ওয়াইড লেন্স ব্যবহার করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কোরালের নরম শাখাগুলোর গভীরে ক্যামেরা প্রবেশ করিয়ে এই দৃশ্য ধারণ করেন।
অনেক কোরাল আলোকসংশ্লেষণ নির্ভরশীল। কিন্তু সফট কোরাল হলো ‘ফিল্টার ফিডার’—এরা পানির স্রোতে ভেসে আসা ক্ষুদ্র প্রাণী ও কণিকা ছেঁকে খেয়ে বাঁচে। ছবিতে প্রতিটি শাখার ডগায় দেখা যায় একটি করে পলিপ—ছোট নলাকৃতির গঠন, যার মুখ রয়েছে এক প্রান্তে। সেই মুখের চারদিকে পালকের মতো নরম টেন্টাকল থাকে, যা পানির স্রোত থেকে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ধরে মুখের ভেতর পাঠায়।
চেক প্রজাতন্ত্রের আকাশে কেলভিন–হেলমহোল্টজ মেঘ
ঢেউয়ের মতো আকৃতির এই বিশেষ মেঘের নামকরণ হয়েছে দুই বিজ্ঞানী উইলিয়াম থমসন (লর্ড কেলভিন) এবং হারমান ভন হেলমহোল্টজের নামে। বায়ুমণ্ডলের দুই স্তর ভিন্ন গতিতে চললে এ ধরনের ঢেউ-আকৃতির মেঘ তৈরি হয়।
উপরের স্তরের উষ্ণ ও হালকা বায়ু যদি নিচের ঠান্ডা ও ভারী বায়ুর তুলনায় দ্রুতগতিতে চলে, তাহলে মেঘের ওপর ঠিক হ্রদের জলের মতো ঢেউ সৃষ্টি হয়। দ্রুত বয়ে যাওয়া বায়ু মেঘের জলীয়বাষ্পকে ওপরে তোলে, আবার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে তা নিচে নেমে আসে—একেবারে সৈকতের ঢেউ ভাঙার মতো।
এই মেঘ সাধারণত ট্রপোস্ফিয়ারের যেকোনো অংশে তৈরি হতে পারে, তবে খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা যায়। তাই এমন মেঘ দেখা বা এর ছবি তোলা বিরল ঘটনা। কেলভিন–হেলমহোল্টজ মেঘকে বায়ুচঞ্চলতার নির্দেশকও বলা হয়; পাইলটরা এ ধরনের মেঘ দেখলে সাধারণত পথ পরিবর্তন করেন, কারণ এর ভেতর দিয়ে উড়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
#বিজ্ঞান_ফটোগ্রাফি #প্রবাল প্রাকৃতিক_ঘটনা #কেলভিন_#হেলমহোল্টজ #বিশ্বপ্রকৃতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















