পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন
শারজাহ বুক অথরিটি সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কোনেক্সিও আফ্রিকাকে নবম শারজাহ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর রিফিউজি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড সাপোর্ট (সিয়ারা)-এর বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শারজাহের শাসক ও সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য মহামান্য ড. শেখ সুলতান বিন মোহাম্মদ আল কাসিমি; শারজাহের উপশাসক ও দ্য বিগ হার্ট ফাউন্ডেশনের (টিবিএইচএফ) মানবিক দূত শেখ সুলতান বিন আহমেদ আল কাসিমি; এবং শারজাহের শাসকের পত্নী, শারজাহ ফ্যামিলি অ্যান্ড কমিউনিটি কাউন্সিলের চেয়ারপারসন ও জাতিসংঘের শরণার্থী শিশুদের পক্ষে বিশেষ দূত শেখা জাওয়াহের বিনত মোহাম্মদ আল কাসিমি।
আফ্রিকার স্বীকৃতি ও পুরস্কারের গুরুত্ব
৫ লাখ দিরহামের এই পুরস্কার কোনেক্সিও আফ্রিকার কাজ আরও সম্প্রসারণে সহায়তা করবে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবহেলিত সম্প্রদায়ের মাঝে।
সংস্থাটির উদ্ভাবনী মানবিক মডেল—‘শিক্ষা থেকে কর্মসংস্থান’—পূর্ব আফ্রিকার শরণার্থীদের দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাদের কার্যক্রম বিশেষভাবে কেনিয়া, মালাউই ও উগান্ডার শরণার্থী শিবিরে পরিবর্তন আনছে।

অনুষ্ঠানের পরিবেশ ও বক্তব্য
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে। এরপর সিয়ারা পুরস্কারের ইতিহাস, মানবিক অবদান এবং বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্র দেখানো হয়।
টিবিএইচএফ–এর পরিচালক আলিয়া আল মুসাইবি উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, প্রতিটি মানুষের গল্প শোনার যোগ্য, তবে প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলো সেই কথাগুলো মন দিয়ে শোনা এবং যথাযথভাবে সাড়া দেওয়া। শরণার্থীদের গল্প আমাদের মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সহযোগিতার পরীক্ষায় ফেলে।
তিনি বলেন, শুরুর দিন থেকেই শেখ সুলতান মানুষকে কেন্দ্র করে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছেন—যেখানে মর্যাদাকেই সাফল্যের মূল মানদণ্ড ধরা হয়েছে। শেখা জাওয়াহেরের নেতৃত্বে শারজাহ সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে—যেখানে সেবাকে রূপান্তর করা হয়েছে ক্ষমতায়নে, আর সাহায্যকে রূপ দেওয়া হয়েছে অংশীদারিত্বে।
বিচারক প্যানেল ও মনোনয়ন
২০২৫ সালের সিয়ারা পুরস্কারের জন্য বিশ্বব্যাপী মানবিক সংস্থা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৭৯০টি আবেদন জমা পড়ে।
মানবিক প্রভাব, কাজের স্থায়িত্ব, শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবনে অবদান, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার মতো মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতিটি আবেদন কঠোরভাবে মূল্যায়ন করা হয়।

আফ্রিকার যাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কোনেক্সিও আফ্রিকার প্রতিষ্ঠাতা যাত্রা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর সংস্থাটির পরিচালক ফাবিয়ান দে ক্যাস্তিয়া বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, এই পুরস্কার শুধু কোনেক্সিও আফ্রিকার নয়; বরং আফ্রিকার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও স্বাগতিক সম্প্রদায়ের ১,০০০–এর বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষের সম্মান।
ফাবিয়ান আরও বলেন, দুর্বল মানুষের পাশে থাকা কর্তব্য, পছন্দ নয়। এই কর্তব্যকে টেকসই করতে হলে সামাজিক ও বাণিজ্যিক খাতের মাঝে সেতুবন্ধ তৈরি করতে হবে—শরণার্থীদের দক্ষতা ও বৈশ্বিক ব্যবসার সুযোগকে একসঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
তিনি জানান, ২০২৬ সালে সংস্থাটি কেনিয়া, মালাউই ও উগান্ডায় ডিজিটাল প্রশিক্ষণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ দক্ষতা বিষয়ে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হবে এবং এআই, ডাটা ম্যানেজমেন্ট ও কাস্টমার সাপোর্টের মতো খাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের চাকরির সুযোগ দিতে একটি সামাজিক উদ্যোগ বিভাগও শুরু হবে।
শারজাহের মানবিক বার্তার প্রতি সম্মান
ফাবিয়ান দে ক্যাস্তিয়া তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, শারজাহ শুধু সংস্কৃতি ও শিক্ষার জন্য পরিচিত নয়; মানবিকতার প্রতীক হিসেবেও বিশ্বে স্বীকৃত। এখানকার করুণা ও সহযোগিতার মূল্যবোধ কোনেক্সিও আফ্রিকার কাজকে প্রতিদিন এগিয়ে নিয়ে যায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















