বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি—বিশেষত কর্মজীবী মানুষের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে দেশে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, আর ধরা না পড়া রোগীদের মিলিয়ে সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে ২ কোটি। নগরের অফিসকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অনেকে ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিসে ভুগলেও চাকরি হারানোর ভয় বা সামাজিক লজ্জার কারণে অনেকেই বিষয়টি গোপন রাখেন। এতে জটিলতা আরও বাড়ে।
চিকিৎসকদের মতে, দেশের অফিস ও কারখানার দৈনন্দিন ছক ডায়াবেটিসের জন্য প্রায় ‘পারফেক্ট’ পরিবেশ তৈরি করে। দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকা, অনিয়মিত খাবার, চিনি-যুক্ত পানীয়, ফাস্টফুড নির্ভরতা এবং মানসিক চাপ—সব মিলিয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। গবেষণা বলছে, বিশ্বজুড়ে এখন অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীর বয়স কর্মজীবী পর্যায়ে; বাংলাদেশও সেই ধারার বাইরে নয়।

কর্মজীবীরা নাশতা না করে বের হন, দুপুরের খাবার মিটিংয়ের কারণে পিছিয়ে যায়, ক্ষুধা সামলাতে ভাজাপোড়া আর মিষ্টি পানীয় ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। বেশিরভাগ অফিসেই হাঁটার সুযোগ বা ব্যায়ামের জন্য স্থান নেই। অনেকে লজ্জার কারণে গোপনে ইনসুলিন নেন বা রক্তে শর্করা পরীক্ষা করেন। এই পরিস্থিতিতে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত কঠিন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়মিত হাঁটা, সুষম খাবার, চাপ কমানো ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতের ডায়াবেটিসের বড় অংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জরুরি। অফিসে ছোট হাঁটার বিরতি, স্বাস্থ্যকর ক্যানটিন মেনু, বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা—এসব কার্যক্রম কর্মীদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিসের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মস্থল-কেন্দ্রিক স্বাস্থ্য উদ্যোগই এই নীরব মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















