যুক্তরাষ্ট্র–চীন উত্তেজনা, ভিসা কড়াকড়ি এবং পশ্চিমা দেশের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চীনের বিজনেস স্কুলগুলো আন্তর্জাতিক ট্যালেন্ট ধরে রাখা ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্ত রাখতে নতুন শিক্ষা মডেল, প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক সহযোগিতায় জোর দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও চীনের বিজনেস স্কুলগুলো আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং উচ্চমানের ট্যালেন্ট ধরে রাখতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র–চীন উত্তেজনা ও পশ্চিমা দেশের কড়াকড়ির মাঝেও এসব প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের শিক্ষা ধরে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ তথ্য জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানকারী সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন টু অ্যাডভান্স কলেজিয়েট স্কুলস অব বিজনেস (এ–এ–সি–এস–বি)-এর সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী লিলি বি।
চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক মনোভাব
লিলি বি জানান, তিনি যেসব চীনা বিজনেস স্কুল পরিদর্শন করেছেন, তাদের কেউই আন্তর্জাতিক ট্যালেন্ট বা বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পটভূমির বিপক্ষে নয়। বরং এই বৈচিত্র্যই তাদের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে বলে তারা মনে করেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে ৪৫ শতাংশেরও বেশি শিক্ষক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
এ–এ–সি–এস–বি: বৈশ্বিক মান যাচাই
১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ–এ–সি–এস–বি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজনেস স্কুলকে স্বীকৃতি দেয়। নেতৃত্ব, শেখানো-শেখার মান, গবেষণার প্রভাব এবং সমাজে অবদান—এসবকে গুরুত্ব দিয়ে মান যাচাই করা হয়।
চীনে বর্তমানে ৫২টি এ–এ–সি–এস–বি স্বীকৃত বিজনেস স্কুল রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আরও কমপক্ষে ৪০টি প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে।
চীনে বিজনেস শিক্ষার উত্থান
২০০০ সালের পর চীনে বিজনেস শিক্ষার দ্রুত উত্থান ঘটে। ২০০১ সালে ডব্লিউ–টি–ওতে যোগদান এবং অর্থনীতিকে আধুনিকায়নের সরকারি উদ্যোগ উচ্চশিক্ষায় ব্যাপক বিনিয়োগ বাড়ায়। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম হওয়া ছিল এর প্রধান লক্ষ্য।

সরকারি সহায়তা ও স্বায়ত্তশাসন
চীন সরকার বিজনেস স্কুলগুলোকে নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে কর্মকর্তারা জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও বেশি সম্পদ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বিপরীতে অনেক পশ্চিমা দেশে অর্থায়ন সংকট ও টিউশন ফি বৃদ্ধির চাপ বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক ছাত্র ভর্তির সংকোচন
ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার অনেক দেশ আন্তর্জাতিক ছাত্র গ্রহণ কমিয়ে দিচ্ছে। নেদারল্যান্ডসে বাসস্থানের সংকটের কারণে ছাত্রসংখ্যায় সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক দেশে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের অভিবাসন সমস্যার সঙ্গে এক করে দেখা হচ্ছে, যা তাদের প্রকৃত অবদানকে উপেক্ষা করে।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা ছাত্র কমে যাওয়া
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা ছাত্র ছিল প্রায় ৩৭০,০০০; বর্তমানে তা কমে প্রায় ২৭০,০০০-এ নেমেছে। যদিও মোট আন্তর্জাতিক ভর্তিতে কমতি দেখা গেছে, বিজনেস স্কুলগুলোর ওপর এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম।
শিক্ষা বিনিময়ে নতুন পথ
শারীরিক উপস্থিতি কঠিন হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন উপায়ে আন্তর্জাতিক সংযোগ বজায় রাখছে। কেউ চীনে স্যাটেলাইট ক্যাম্পাস চালু করেছে, কেউ যৌথ গবেষণা, ভার্চুয়াল ক্লাস এবং যৌথ ডিগ্রি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে—“মানুষ নয়, ধারণা স্থানান্তর”—এ।
গ্লোবালাইজেশন থামবে না
লিলি বি মনে করেন, সব প্রতিকূলতার মাঝেও গ্লোবালাইজেশন থামানো সম্ভব নয়। কারণ বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ও বাজার এতটাই আন্তঃসংযুক্ত যে এসব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা বাস্তবসম্মত নয়।
চীনা বিজনেস স্কুলগুলোর অভিযোজন
চীনের বিজনেস স্কুলগুলো শুধু আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখছে না, বরং স্থানীয় প্রয়োজনের সঙ্গে মিল রেখে নতুন মডেলও তৈরি করছে। পাঠ্যক্রমে শিল্পভিত্তিক চর্চা, বাস্তব সমস্যাভিত্তিক শেখানো এবং শিল্পখাতে বাধ্যতামূলক সফর এসব নতুন মডেলের অংশ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার
এআই এখন শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীনের বিজনেস স্কুলগুলো এআই-কে শেখার বিষয় হিসেবে গ্রহণ করছে এবং শেখানো-শেখানোর প্রক্রিয়ায়ও এআই ব্যবহার করছে।
স্টেম বনাম ম্যানেজমেন্ট
চীনের প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্টেম বিষয়ে ঝুঁকছে। তবুও বিজনেস শিক্ষার চাহিদা টিকে আছে। এ–এ–সি–এস–বি-এর তথ্য অনুযায়ী, বিজনেস বিষয়ে স্নাতক ভর্তি ধীরে হলেও বাড়ছে। লিলি বি মনে করেন, শিক্ষার্থী স্টেম-এ স্নাতক করে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করলে সেটি অত্যন্ত শক্তিশালী সমন্বয় তৈরি করে।
লিলি বি বলেন, একটি সমাজের শক্তি বৈচিত্র্যের মধ্যে। তরুণ প্রজন্ম স্টেম এবং ম্যানেজমেন্ট—দুই পথেই দেশকে এগিয়ে নিতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















