সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ৫২ জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) বদলি ও নতুন নিয়োগকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তকে ঘিরে নিরপেক্ষতা, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঠ প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাবিত নিয়োগ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে এবং সুশাসনের প্রতি আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।
যদিও এসব নিয়োগে কোনো বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবুও আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়ায় আমলাতন্ত্রের ভেতরে পুরোনো বিতর্ক ফের উত্থাপিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন মন্ত্রী ও সচিবের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন কর্মকর্তা এবার নতুন করে পদোন্নতি ও ডিসি নিয়োগ পেয়েছেন।
কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার নিয়োগ নিয়ে জ্যেষ্ঠ আমলাদের মধ্যে সমালোচনা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে—এসব কর্মকর্তাকে সিনিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) বা সংশ্লিষ্ট বোর্ডের সুপারিশ ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দলঘেঁষা ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ জেলায় নিয়োগকে অনেকে ‘নির্বাচনী মাঠ নিয়ন্ত্রণের কৌশল’ হিসেবে দেখছেন। এ কারণে ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।
গত সপ্তাহে তিন দফায় সরকার বিভিন্ন জেলায় ডিসি বদলি করেছেন।
১৩ নভেম্বর রাতে পৃথক দুইটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২৩ জন নতুন ডিসিকে নিয়োগ দেওয়া হয়—একটিতে ৯ জেলা এবং আরেকটিতে ১৪ জেলার নাম ছিল।
এর আগে ৮ ও ৯ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ এবং ১৪ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেয়, যদিও পরবর্তীতে কিছু নিয়োগ বাতিল করা হয়।
সর্বশেষ নিয়োগগুলোর ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা এবং এসএসবি’র সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে—এমন অভিযোগে আবারও আমলাতন্ত্রের ভেতরে সমালোচনা জোরদার হয়েছে।
এছাড়া মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞতা কম হলেও আওয়ামী লীগের প্রতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন কর্মকর্তার নিয়োগে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাদ পড়ায় অসন্তোষ বেড়েছে।
গাজীপুর, নোয়াখালী ও মাদারীপুরসহ কয়েকটি জেলায় বিতর্কিত নিয়োগ সমালোচনার মুখে পড়ে পরে বাতিল করা হয়—রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও অতীতের অনিয়মের অভিযোগের কারণে।
সাবেক সচিব ও জন প্রশাসন বিশেষজ্ঞ আবদুল আওয়াল মজুমদার বলেন, ডিসি নিয়োগে রাজনৈতিক আনুগত্যকে প্রাধান্য দিলে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা হুমকির মুখে পড়ে।
তিনি বলেন, এটি সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করে। নির্বাচনের সময় মাঠ প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে ডিসিদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর তাদের নিরপেক্ষ আচরণের ওপরই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে।
তিনি আরও বলেন, জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এখনই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার না দিলে প্রশাসনের ভেতরে বিভক্তি আরও গভীর হবে এবং রাষ্ট্রীয় সেবার মান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইউএনবি 


















