মানবসদৃশ রোবটকে সামরিক ব্যবহারের জন্য অস্ত্রে পরিণত করার পরিকল্পনা এখন শুধু বিজ্ঞান কল্পকাহিনির কথা নয়—এটি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক স্টার্টআপ ফাউন্ডেশনের তৈরি হিউম্যানয়েড রোবট ফ্যানটম এমকে১ সামরিক কাজ, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ ও মহাকাশ মিশনে মানুষের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে। তবে নিউ ইয়র্কে নিউজউইকের সদর দপ্তরে রোবটটির সাম্প্রতিক প্রদর্শনী দেখিয়েছে—এখনও অনেকটা পথ বাকি।
====================================
ফ্যানটম এমকে১: ভবিষ্যতের যুদ্ধসঙ্গী
৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতা, ১৭৬ পাউন্ড ওজনের এই স্টিল ও প্লাস্টিকের অ্যান্ড্রয়েড সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৪ মাইল হাঁটতে পারে। প্রতিষ্ঠাতা সংস্থার মতে, এটি মানুষের মতো সব কাজ শিখে এমন বিপজ্জনক কাজগুলো করবে যেগুলো বর্তমানে সৈন্যরা সম্পন্ন করেন।
ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সংকেত পাঠক বলেন:
“আমরা চাই রোবটটি মানুষের মতোই বিশ্বের সাথে মিথস্ক্রিয়া করুক—মানুষ যে সরঞ্জাম ব্যবহার করে তাও ব্যবহার করতে পারুক। কখনো সেটা ড্রিল হতে পারে, আবার কখনো অস্ত্রও।”
====================================
সামরিক ব্যবহার ও মহাকাশ মিশনের পরিকল্পনা
ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য শুধু যুদ্ধক্ষেত্র নয়—চাঁদ ও মঙ্গলেও এই রোবট দিয়ে অবকাঠামো তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার কাজ করানো।

পাঠকের ভাষায়:
“ভবিষ্যতে আমরা চাই এগুলো এমন পরিবেশে কাজ করুক, যেখানে মানুষ যেতে পারে না—অতি বিপজ্জনক বা অতিরিক্ত শ্রমসাধ্য স্থানে।”
মার্কিন যুদ্ধ দপ্তর (Department of War) জানায়—স্বয়ংক্রিয়তা ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড্রোন থেকে শুরু করে রোবট—সবক্ষেত্রেই সামরিক ব্যবস্থায় এআই ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয়তা বাড়বে।
====================================
চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা
চীন ও রাশিয়া ইতোমধ্যেই অস্ত্রধারী রোবট তৈরিতে অগ্রসর হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রও পিছিয়ে থাকতে চায় না। চীনের ইউনিট্রি রোবোটিকস ইতোমধ্যে বন্দুকধারী রোবট ডগ প্রদর্শন করেছে। রাশিয়াও একই ধরনের রোবটকে রকেট লঞ্চারের সঙ্গে ব্যবহার করেছে।
পাঠক বলেন:
“অনেকে এগুলোকে অস্ত্রে পরিণত করছে—এ অবস্থায় এগুলো না শেখানোই বরং ঝুঁকিপূর্ণ।”
====================================
ফ্যানটমের নির্মাণ, ব্যয় ও ক্ষমতা
ফ্যানটমের মাথায় আছে ৮টি ক্যামেরা, ৪৪ পাউন্ড পর্যন্ত জিনিস বহন করতে পারে, প্রয়োজন হলে ৮০ পাউন্ড পর্যন্ত তুলতে পারে। একটি রোবট তৈরি করতে খরচ পড়ে প্রায় ১,৫০,০০০ ডলার; ব্যাপক উৎপাদনে দাম অর্ধেকে নামতে পারে।
সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইক লেব্ল্যাঙ্ক বলেন:
“এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মাল্টিটুল। দরজা ভাঙা, বিস্ফোরক স্থাপন, ভবনে প্রবেশের আগে নজরদারি—এসব কাজ রোবটই করতে পারবে।”
====================================
সরকারি চুক্তি ও অগ্রগতি
ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যেই প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের সরকারি চুক্তি পেয়েছে। তারা পূর্বে ‘অ্যালেক্স’ নামের একটি হিউম্যানয়েড টর্সো তৈরি করা কোম্পানি অধিগ্রহণ করে তাকে পূর্ণাঙ্গ দেহযুক্ত রোবটে রূপ দেয়—সেটিই আজকের ফ্যানটম এমকে১।
২০২৫ সালের শুরুর দিকে রোবটটি নাইট ক্লাবে ডিজে হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করে—যা ছিল এর প্রথম জনসম্মুখের প্রদর্শনী।
====================================
নিউজউইকে ব্যর্থ প্রদর্শনী
রোবটটিকে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নিউ ইয়র্কে নিয়ে আসতে হয়েছে বিশাল প্লাস্টিকের বাক্সে। পৌঁছে সেটিকে আবার জোড়া লাগাতে হয়। দুই দিন ধরে বারবার চেষ্টা করেও ঠিকমতো দাঁড় করানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারলেও রোবটটি হঠাৎ পড়ে যায়—কারণ ছিল সদ্য বসানো নতুন কম্পিউটার বোর্ড।
এই ব্যর্থতা রোবটের সামরিক ব্যবহারের বড় বাস্তব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে।
====================================
উৎপাদনের লক্ষ্য: বছরে ১০,০০০ রোবট
ডিএইচএস (Department of Homeland Security) যদিও এখনো সীমান্তরক্ষায় রোবট ব্যবহারের পরিকল্পনা অস্বীকার করেছে, তবে আলোচনাকে “অনানুষ্ঠানিক কিন্তু চলমান” বলে জানিয়েছে।
ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য—২০২৬ সালে ১০,০০০ রোবট উৎপাদন।
====================================
মানবসদৃশ রোবটের ভবিষ্যৎ
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফ্যানটমের মতো রোবট সব কাজ করতে পারার মতো বুদ্ধিমান হতে আরও সময় লাগবে।
হার্ভার্ড এআই অ্যান্ড রোবোটিকস ল্যাবের প্রধান মেংইউ ওয়াং বলেন:
“রোবট এখনো ChatGPT-র স্তরের বুদ্ধিমত্তা পায়নি। বাস্তবে বড় পরিবর্তন আসতে কমপক্ষে ১০ বছর লাগবে।”

====================================
নৈতিকতা, নিরাপত্তা ও প্রভাব
সামরিক রোবট ব্যবহার নিয়ে নৈতিকতামূলক বিতর্ক নতুন নয়। ড্রোনের মতোই ভবিষ্যতের মানবসদৃশ রোবটেও হ্যাকিং, সাইবার ঝুঁকি ও ভুল ব্যবহারের সম্ভাবনা বড় চ্যালেঞ্জ।
র্যান্ড কর্পোরেশনের বিজ্ঞানী মাইকেল ভারমির বলেন—
“যদি নিরাপত্তা দুর্বল হয়, রোবটগুলো উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে।”
====================================
সামগ্রিক মূল্যায়ন
ফ্যানটম এমকে১ নিঃসন্দেহে অগ্রগতির প্রতীক, কিন্তু এটি এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। মানবকে প্রতিস্থাপন বা যুদ্ধক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে কার্যকর হতে রোবটটির আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।
পাঠক বলেন:
“লক্ষ্য অর্জনে সামনে বিশাল কাজ বাকি—কিন্তু পথ আমরা শুরু করে দিয়েছি।”
====================================
#রোবট #সামরিক প্রযুক্তি #কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা #যুক্তরাষ্ট্র #চীন–রাশিয়া প্রতিযোগিতা #ফ্যানটম এমকে১
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















