ভূগর্ভস্থ শক্তি সংরক্ষণের নতুন দিগন্ত
টেক্সাসের ক্রিস্টিন এলাকায় একটি ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু আকর্ষণীয় যাত্রার শেষে রয়েছে এক অভিনব শক্তি-সংরক্ষণ কেন্দ্র। সান আন্তোনিওভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান—যারা মেটার ডেটা সেন্টারে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করেছে—সেখানে বিশ্বের অনন্য ব্যাটারিগুলোর একটি তৈরি করেছে। ইতোমধ্যেই এই প্রকল্প টেক্সাস গ্রিডে ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংরক্ষণ ও সরবরাহের সক্ষমতা দেখিয়েছে, এবং ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রচলিত পাম্পড হাইড্রো বনাম নতুন পদ্ধতি
বিশ্বে বর্তমানে গ্রিড-স্কেল শক্তি সংরক্ষণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো পাম্পড হাইড্রোপাওয়ার, যেখানে দুটি জলাধারের উচ্চতার পার্থক্য কাজে লাগিয়ে পানি ওপর তোলা ও নিচে নামিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। তবে এই পদ্ধতি ব্যয়বহুল, নির্মাণে দীর্ঘ সময় লাগে এবং প্রচুর জায়গা প্রয়োজন।
এ অবস্থায় সান আন্তোনিওর স্টার্টআপ SAGE Geosystems তুলে ধরেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সমাধান—ভূগর্ভে চাপ সঞ্চয় করে শক্তি সংরক্ষণ। তাদের দাবি, এটি পাম্পড হাইড্রোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি শক্তি ঘনত্ব তৈরি করতে পারে। প্রধান নির্বাহী সিন্ডি ট্যাফ, যিনি আগে শেলের ড্রিলিং বিভাগের নেতৃত্ব দিতেন, বলেন—“এটা মূলত উল্টো করে বানানো পাম্পড হাইড্রো।”

কীভাবে কাজ করে ভূগর্ভস্থ এই ব্যাটারি
প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত খনন করে নিচের শিলাস্তর ভেঙে এক ধরনের ভূগর্ভস্থ রিজার্ভয়ার তৈরি করেছে। পৃষ্ঠের জলাধার থেকে পানি একটি কূপ দিয়ে নিচে পাঠানো হয় এবং সেখানে উচ্চচাপে সংরক্ষণ করা হয়। যখন বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, কূপটি খোলা হয়। তখন শিলার স্বভাবগত চাপের কারণে পানি আবার ওপরের দিকে উঠে আসে ও টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে।
এই ভূগর্ভস্থ “ফুসফুস”—SAGE-এর ভাষায়—লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির তুলনায় অনেক বেশি সময় শক্তি ধরে রাখতে পারে। এছাড়া ব্যাটারি ব্লকের মতো প্রতিটি অংশ যোগ করতে বেশি খরচ লাগে না বলে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ইউনিটের সংরক্ষণ খরচ কমে যায়।
বিদ্যুৎ বাজারে অর্থনৈতিক সুবিধা
এই প্রযুক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদনকে আরও নমনীয় করে তুলতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—দুপুরে সস্তায় উৎপাদিত সৌরশক্তি সংরক্ষণ করে সন্ধ্যার বেশি দামের সময়ে বিক্রি করলে বিদ্যুতের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে SAGE-এর এই মডেলকে বিশেষভাবে কার্যকর হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্বে অন্য গবেষণা ও সম্ভাবনা
SAGE-এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান Enhanced Geothermal Systems (EGS) নিয়ে কাজ করছে, যদিও তাদের মধ্যে কেউই এমন উদ্ভাবনী ও বৃহৎ পরিসরে এগোচ্ছে না। ইউরোপের গবেষক ও ইউটিলিটি সংস্থাগুলোর একটি কনসোর্টিয়াম HYSTORE অ্যাকুইফার বা ভূগর্ভস্থ পানিস্তরে তাপ-শক্তি সংরক্ষণের প্রকল্প নিয়ে পরীক্ষা করছে। অন্য গবেষকেরা বোরহোল বা গভীর ছিদ্র ব্যবহার করেও শক্তি সংরক্ষণের সম্ভাবনা যাচাই করছেন।
পুরোনো ধারণায় নতুন সৃজনশীলতা
টেক্সাসের এই উদ্যোগ প্রমাণ করেছে যে, পুরোনো প্রযুক্তিকে নতুনভাবে কাজে লাগানো হলে ফলাফল হতে পারে বিস্ময়কর। ভূগর্ভস্থ চাপ-নির্ভর শক্তি সংরক্ষণ ভবিষ্যতের নমনীয়, সাশ্রয়ী এবং টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হয়ে উঠতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















