যুক্তরাষ্ট্রে গাঁজা বৈধতার বিস্তার বাড়লেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—গাঁজা থেকেও আসক্তি হয়, এবং ক্যানাবিস ইউজ ডিসঅর্ডার দ্রুত বাড়ছে। কীভাবে এ আসক্তি চিনবেন, কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন এবং কোথায় চিকিৎসা পাবেন—সব জানা জরুরি।
গাঁজা আসক্তি সম্পর্কে ভুল ধারণা
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আসক্তি বিশেষজ্ঞ ডা. স্মিতা দাস বলেন, অনেকেই ভুলভাবে মনে করেন গাঁজায় আসক্তি হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় অর্ধেক অঙ্গরাজ্যে বিনোদনমূলক গাঁজা বৈধ হওয়ায় এই ধারণা আরও ছড়িয়েছে। বাস্তবে, গাঁজায় আসক্তি হয়—যাকে বলা হয় ক্যানাবিস ইউজ ডিসঅর্ডার—এবং এটি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, গাঁজা সেবনকারীদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে প্রায় ৩ জনই এই সমস্যায় পড়েন।
কীভাবে বুঝবেন কেউ ক্যানাবিস ইউজ ডিসঅর্ডারে ভুগছেন
যদি গাঁজা আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপন, কাজ, পড়াশোনা, মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্য কিংবা সম্পর্ককে ব্যাহত করে—এগুলোই প্রধান সতর্ক সংকেত।
ডা. দাস মনে করিয়ে দেন, ব্যবহারের পরিমাণ ও গাঁজার শক্তি (পটেন্সি) যত বেশি হবে, ঝুঁকিও তত বাড়বে।
- • ১৯৬০-এর দশকে গাঁজায় টিএইচসি ছিল ৫%-এর কম
- • বর্তমানে অনেক ডিসপেনসারিতে ফুল বা কনসেন্ট্রেটে টিএইচসি ৪০%-এর কাছাকাছি
- • DSM–এর নির্দিষ্ট মানদণ্ডে ক্যানাবিস ইউজ ডিসঅর্ডার নির্ণয় করা হয়

লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- • একই প্রভাব পেতে বেশি পরিমাণ গাঁজা লাগা
- • গাঁজা কমালে বা বন্ধ করলে বিরক্তি ও অস্বস্তি
- • গাঁজা সংগ্রহ ও সেবনে অতিরিক্ত সময় ব্যয়
আসক্তির বিভিন্ন মাত্রা
গত এক বছরে এই মানদণ্ডের মধ্যে অন্তত ২ টি মিললে মৃদু আসক্তি ধরা হয়। ৬-টির বেশি মিললে তা গুরুতর আসক্তি হিসেবে বিবেচিত।
২০২৪ সালের জাতীয় জরিপ অনুযায়ী—১২ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে ৭% ক্যানাবিস ইউজ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত, যাদের বেশিরভাগই মৃদু পর্যায়ের।
প্রায় ৫ জনে একজন গুরুতর পর্যায়ে।
ডা. দাসের মতে, একই মাত্রার গাঁজা একজনের জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, অন্যজনের ক্ষেত্রে তেমন নয়। মূল বিষয় হলো—গাঁজা দৈনন্দিন কর্মক্ষমতাকে কতটা ব্যাহত করছে।

চিকিৎসার উপায়
অনেকেই প্রথমে অন্য কোনো সমস্যা, যেমন অ্যালকোহল ব্যবহারের কারণে চিকিৎসকের কাছে যান। আলাপের এক পর্যায়ে গাঁজা সম্পর্কিত সমস্যার কথাও উঠে আসে।
কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি—
১. মোটিভেশনাল ইন্টারভিউ — আচরণ পরিবর্তনের অভ্যন্তরীণ প্রেরণা খোঁজায় সাহায্য করে
২. কগনিটিভ বিহেভিয়রাল থেরাপি (CBT) — নেতিবাচক চিন্তা ও আচরণ কমায়
৩. মারিজুয়ানা অ্যানোনিমাস–এর মতো ১২-ধাপের প্রোগ্রাম
ব্যক্তিগতভাবে কেউ চাইলে সহায়ক গোষ্ঠীতে যোগ দিতে পারেন বা এমন মানুষের সঙ্গে থাকতে পারেন যারা গাঁজা ব্যবহার করেন না—এটিও পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৪ বছর আগে ডেভ বুশনেল রেডিটে গাঁজা নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে আগ্রহীদের জন্য একটি গ্রুপ তৈরি করেন। বর্তমানে সেখানে সদস্য সংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। তার মতে, অনলাইন আলোচনার জায়গা অনেকের জন্য সরাসরি বৈঠকের তুলনায় আরামদায়ক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন—অসুবিধা অনুভব করলে অবশ্যই সাহায্য নিতে হবে, তা পেশাদার চিকিৎসক বা সমমনা মানুষের কাছ থেকেই হোক না কেন।
ডা. দাস সতর্ক করেন—অ্যালকোহলের মতোই, কোনো কিছু বৈধ হলেই তা নিরাপদ হয় না।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















