০৮:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডের জোর: নিরবচ্ছিন্ন সেবা ও ঋণ পুনরুদ্ধার পাবনা ও চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যু ডিএসই–তে ঘুরে দাঁড়ানো: ২০ দিন পর সূচক ৫ হাজারের ওপরে প্রায় ভুলে যাওয়া এক দেয়াল জীবনরক্ষাকারী সব ওষুধের দাম নির্ধারণে সরকারের পূর্ণ ক্ষমতা ফিরিয়ে দিল হাইকোর্ট ডিইউ অধ্যাপক হাফিজুর রহমানের ছয় মাসের জামিন, মুক্তিতে আর বাধা নেই ভারতের চাল কিনছে বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুরে থাকা ভারতীয় কোম্পানির শাখার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে আগুন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ১২ ধরনের উপহার—উদ্দেশ্য একটাই, যাত্রা একটু আরামদায়ক করা কেন্ড্রিকের সঙ্গে এবার স্পিল্ট মিল্কে জেনেসিস ওউসু ও লটে গ্যালাগারও

জার্মানিকে পাশে টেনে বিরল খনিজে নতুন সমীকরণ গড়তে চাইছে চীন

জোহানেসবার্গে খনিজ কূটনীতি

জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ বৈঠককে ঘিরে বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ে তৈরি উত্তেজনাকে সুযোগে পরিণত করতে চাইছে বেইজিং। শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে বৈঠকে চীনা প্রধানমন্ত্রী বিরল খনিজ রপ্তানির কড়াকড়িকে নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, আবার একইসঙ্গে যৌথ খনন উদ্যোগের প্রস্তাব দিয়েছেন। লক্ষ্য—জার্মান গাড়ি ও যন্ত্রপাতি শিল্পের উদ্বেগ কমানো, যারা গত কয়েক বছরে সরবরাহ সংকটে বড় আঘাত পেয়েছে।

বেইজিংয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আফ্রিকা ও অন্যান্য সম্পদসমৃদ্ধ দেশে নতুন খনি প্রকল্পে চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো নেতৃত্ব দেবে; জার্মান বিনিয়োগকারী ও প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, রপ্তানি সংকোচন ও মন্দার চাপে থাকা বার্লিনের জন্য এটি একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে নতুন ঝুঁকি। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই ‘ডি-রিস্কিং’ নীতির আওতায় চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর কথা বলছে।

জার্মানির বৈদ্যুতিক গাড়ি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি শিল্প সস্তা কিন্তু কৌশলগত খনিজের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। অতীতের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কারণে ইভি ব্যাটারি ও উইন্ড টারবাইনের খরচ বেড়েছে, অনেক কোম্পানিকে দ্রুত বিকল্প উৎস খুঁজতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে শুল্ক চাপানোর পর জার্মান পণ্যের বাজার আরও চাপে; এমন পরিস্থিতিতে সরবরাহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলেও ইউরোপীয় নিরাপত্তা নীতির বাইরে যেতে পারছে না বার্লিন।

ইইউ কূটনীতিকেরা বলছেন, তারা সংলাপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন, কিন্তু যে কোনো চুক্তিকে ইউরোপের সামগ্রিক কৌশলগত কাঁচামাল নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। নতুন প্রকল্পে স্বচ্ছতা, পরিবেশ রক্ষা ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি জোর দিয়ে তুলতে চায় ব্রাসেলস। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে তাইওয়ান ইস্যু বা অন্য কোনো বাণিজ্য বিরোধ উত্থাপিত হলে ইউরোপ আবার যেন হঠাৎ করে সরবরাহ সংকটে পড়ে না যায়, সে নিশ্চয়তাও চাইছে তারা।

চীনের জন্য এই কূটনীতি দ্বিমুখী—একদিকে বিরল খনিজকে রাজনৈতিক অস্ত্র বানানোর অভিযোগ নরম করা, অন্যদিকে আমেরিকা নেতৃত্বাধীন বিকল্প জোট গঠনের উদ্যোগকে দুর্বল করা। বেইজিং যুক্তি দিচ্ছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও কম কড়াকড়ি নয়; বরং যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও বেশি মূল্য সংযোজনের সুযোগ পাবে। শেষ পর্যন্ত জার্মানি ঠিক কী পথ বেছে নেয়, তা নির্ধারণ করবে ইউরোপ কতটা ভারসাম্য রেখে শিল্পনীতি, জলবায়ু লক্ষ্য ও নিরাপত্তা উদ্বেগ সামলাতে পারবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডের জোর: নিরবচ্ছিন্ন সেবা ও ঋণ পুনরুদ্ধার

জার্মানিকে পাশে টেনে বিরল খনিজে নতুন সমীকরণ গড়তে চাইছে চীন

০৬:৪৭:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

জোহানেসবার্গে খনিজ কূটনীতি

জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ বৈঠককে ঘিরে বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ে তৈরি উত্তেজনাকে সুযোগে পরিণত করতে চাইছে বেইজিং। শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে বৈঠকে চীনা প্রধানমন্ত্রী বিরল খনিজ রপ্তানির কড়াকড়িকে নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, আবার একইসঙ্গে যৌথ খনন উদ্যোগের প্রস্তাব দিয়েছেন। লক্ষ্য—জার্মান গাড়ি ও যন্ত্রপাতি শিল্পের উদ্বেগ কমানো, যারা গত কয়েক বছরে সরবরাহ সংকটে বড় আঘাত পেয়েছে।

বেইজিংয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আফ্রিকা ও অন্যান্য সম্পদসমৃদ্ধ দেশে নতুন খনি প্রকল্পে চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো নেতৃত্ব দেবে; জার্মান বিনিয়োগকারী ও প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, রপ্তানি সংকোচন ও মন্দার চাপে থাকা বার্লিনের জন্য এটি একদিকে সুযোগ, অন্যদিকে নতুন ঝুঁকি। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই ‘ডি-রিস্কিং’ নীতির আওতায় চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর কথা বলছে।

জার্মানির বৈদ্যুতিক গাড়ি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি শিল্প সস্তা কিন্তু কৌশলগত খনিজের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। অতীতের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কারণে ইভি ব্যাটারি ও উইন্ড টারবাইনের খরচ বেড়েছে, অনেক কোম্পানিকে দ্রুত বিকল্প উৎস খুঁজতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে শুল্ক চাপানোর পর জার্মান পণ্যের বাজার আরও চাপে; এমন পরিস্থিতিতে সরবরাহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলেও ইউরোপীয় নিরাপত্তা নীতির বাইরে যেতে পারছে না বার্লিন।

ইইউ কূটনীতিকেরা বলছেন, তারা সংলাপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন, কিন্তু যে কোনো চুক্তিকে ইউরোপের সামগ্রিক কৌশলগত কাঁচামাল নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। নতুন প্রকল্পে স্বচ্ছতা, পরিবেশ রক্ষা ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি জোর দিয়ে তুলতে চায় ব্রাসেলস। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে তাইওয়ান ইস্যু বা অন্য কোনো বাণিজ্য বিরোধ উত্থাপিত হলে ইউরোপ আবার যেন হঠাৎ করে সরবরাহ সংকটে পড়ে না যায়, সে নিশ্চয়তাও চাইছে তারা।

চীনের জন্য এই কূটনীতি দ্বিমুখী—একদিকে বিরল খনিজকে রাজনৈতিক অস্ত্র বানানোর অভিযোগ নরম করা, অন্যদিকে আমেরিকা নেতৃত্বাধীন বিকল্প জোট গঠনের উদ্যোগকে দুর্বল করা। বেইজিং যুক্তি দিচ্ছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও কম কড়াকড়ি নয়; বরং যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও বেশি মূল্য সংযোজনের সুযোগ পাবে। শেষ পর্যন্ত জার্মানি ঠিক কী পথ বেছে নেয়, তা নির্ধারণ করবে ইউরোপ কতটা ভারসাম্য রেখে শিল্পনীতি, জলবায়ু লক্ষ্য ও নিরাপত্তা উদ্বেগ সামলাতে পারবে।