০৮:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

পঞ্চাশের পর হঠাৎ বাড়ছে অটোইমিউন রোগ: ‘স্বাভাবিক বার্ধক্য’ ভেবে ঝুঁকি নিচ্ছেন অনেকে

বার্ধক্যের লক্ষণ নাকি ইমিউন সিস্টেমের আক্রমণ

দীর্ঘদিন ধরে অটোইমিউন রোগকে অনেকেই তরুণ বা মধ্যবয়সীদের অসুখ হিসেবে ভাবতেন। কিন্তু নতুন তথ্য বলছে, পঞ্চাশের পর বয়সে এমন রোগ দ্রুত বাড়ছে—এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রথমে এটিকে “স্বাভাবিক বার্ধক্য” ধরে নেওয়া হচ্ছে। অবসাদ, হালকা জ্বর, অজানা ব্যথা, স্মৃতিভ্রংশ, ঘন ঘন মুড বদলে যাওয়া—এসব লক্ষণকে অনেক সময়েই সাধারণ ক্লান্তি বা বয়সজনিত সমস্যা হিসেবে দেখানো হয়। পরে যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় ইমিউন সিস্টেম নিজেই জয়েন্ট, স্নায়ু বা অন্য অঙ্গকে আক্রমণ করছে, তখন পর্যন্ত কিছু ক্ষতি হয়ে গেছে।

কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা একাধিক প্রবণতার কথা বলছেন। মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি দিন বাঁচছে, একাধিক দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও ওষুধ একসঙ্গে চলমান থাকে; কিছু ওষুধ আবার ইমিউন সিস্টেমে সূক্ষ্ম প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি উন্নত ইমেজিং ও রক্তপরীক্ষা অনেক আগে ধরা না-পড়া কেসও এখন ধরা দিচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, দীর্ঘস্থায়ী ভাইরাস সংক্রমণ, এমনকি বায়ুদূষণে থাকা ক্ষুদ্র কণাও ইমিউন সিস্টেমকে উত্তেজিত করছে কি না, সে নিয়েও গবেষণা চলছে। নারীরা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ রোগী; তবে ষাটের পর বয়সী পুরুষদের মধ্যেও তুলনামূলক বেশি অটোইমিউন রোগ ধরা পড়ছে।

রোগের ধরনও একেক রকম। কারও ক্ষেত্রে মূল আঘাত জয়েন্ট, ত্বক বা অন্ত্রের ওপর; কারও আবার স্নায়ুতন্ত্র বা রক্তনালিতে। কিছু অটোইমিউন স্নায়ুরোগের উপসর্গ ডিমেনশিয়া বা মানসিক রোগের মতো হওয়ায় বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি আরও বেড়ে যায়। হঠাৎ করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ, আচরণ বদলে যাওয়া বা অদ্ভুত খিঁচুনি দেখা দিলে শুধু মানসিক স্বাস্থ্য বা আলঝাইমার ধরে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ; অনেক সময়ই এর পেছনে থাকে অটোইমিউন এনসেফালাইটিসের মতো রোগ। সঠিক সময়ে সঠিক পরীক্ষা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধে ভালো সাড়া পাওয়া যায়।

চিকিৎসায় এখন বায়োলজিক ড্রাগ ও টার্গেটেড ছোট অণু ওষুধ বিপ্লব ঘটিয়েছে। এসব ওষুধ ইমিউন সিস্টেমের নির্দিষ্ট পথকে লক্ষ্য করে কাজ করে, ফলে অনেক রোগী আবার কাজে ফিরতে, ভ্রমণ করতে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন। কিন্তু এর বিনিময়ে সংক্রমণ বা ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে—বয়সী রোগীর ক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে বিবেচ্য। তাই আধুনিক চিকিৎসা এখন শুধু “কোন ওষুধ দেব” সেই সিদ্ধান্ত নয়; বরং রোগীর সঙ্গে বসে ঝুঁকি–সুবিধার হিসাব বুঝিয়ে নেওয়া, ফলো-আপ পরিকল্পনা তৈরি করা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, পঞ্চাশ পার হওয়ার পর প্রতিটি ব্যথা বা ক্লান্তি মানেই অটোইমিউন রোগ নয়। তবে কয়েকটি সতর্কবার্তা গুরুত্ব দেওয়া উচিত—নতুন করে জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে চলা হালকা জ্বর, অকারণে ওজন কমে যাওয়া, অদ্ভুত দাগ বা র‌্যাশ, হঠাৎ স্মৃতিভ্রংশ বা আচরণগত পরিবর্তন। এমন কিছু দেখা দিলে সাধারণ চেকআপের পাশাপাশি প্রাথমিক রক্তপরীক্ষা করে প্রয়োজন হলে রিউমাটোলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট বা ইমিউনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো। জনসংখ্যা দ্রুত বার্ধক্যের দিকে এগোচ্ছে বলে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে এখনই আরও বেশি বিশেষজ্ঞ তৈরি ও দীর্ঘমেয়াদি অটোইমিউন কেয়ারের সুযোগ বাড়ানোর চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেটা কি সত্যিই একচেটিয়া শক্তি নয়?

পঞ্চাশের পর হঠাৎ বাড়ছে অটোইমিউন রোগ: ‘স্বাভাবিক বার্ধক্য’ ভেবে ঝুঁকি নিচ্ছেন অনেকে

০৭:০৩:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

বার্ধক্যের লক্ষণ নাকি ইমিউন সিস্টেমের আক্রমণ

দীর্ঘদিন ধরে অটোইমিউন রোগকে অনেকেই তরুণ বা মধ্যবয়সীদের অসুখ হিসেবে ভাবতেন। কিন্তু নতুন তথ্য বলছে, পঞ্চাশের পর বয়সে এমন রোগ দ্রুত বাড়ছে—এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রথমে এটিকে “স্বাভাবিক বার্ধক্য” ধরে নেওয়া হচ্ছে। অবসাদ, হালকা জ্বর, অজানা ব্যথা, স্মৃতিভ্রংশ, ঘন ঘন মুড বদলে যাওয়া—এসব লক্ষণকে অনেক সময়েই সাধারণ ক্লান্তি বা বয়সজনিত সমস্যা হিসেবে দেখানো হয়। পরে যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় ইমিউন সিস্টেম নিজেই জয়েন্ট, স্নায়ু বা অন্য অঙ্গকে আক্রমণ করছে, তখন পর্যন্ত কিছু ক্ষতি হয়ে গেছে।

কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা একাধিক প্রবণতার কথা বলছেন। মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি দিন বাঁচছে, একাধিক দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও ওষুধ একসঙ্গে চলমান থাকে; কিছু ওষুধ আবার ইমিউন সিস্টেমে সূক্ষ্ম প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি উন্নত ইমেজিং ও রক্তপরীক্ষা অনেক আগে ধরা না-পড়া কেসও এখন ধরা দিচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, দীর্ঘস্থায়ী ভাইরাস সংক্রমণ, এমনকি বায়ুদূষণে থাকা ক্ষুদ্র কণাও ইমিউন সিস্টেমকে উত্তেজিত করছে কি না, সে নিয়েও গবেষণা চলছে। নারীরা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ রোগী; তবে ষাটের পর বয়সী পুরুষদের মধ্যেও তুলনামূলক বেশি অটোইমিউন রোগ ধরা পড়ছে।

রোগের ধরনও একেক রকম। কারও ক্ষেত্রে মূল আঘাত জয়েন্ট, ত্বক বা অন্ত্রের ওপর; কারও আবার স্নায়ুতন্ত্র বা রক্তনালিতে। কিছু অটোইমিউন স্নায়ুরোগের উপসর্গ ডিমেনশিয়া বা মানসিক রোগের মতো হওয়ায় বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি আরও বেড়ে যায়। হঠাৎ করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ, আচরণ বদলে যাওয়া বা অদ্ভুত খিঁচুনি দেখা দিলে শুধু মানসিক স্বাস্থ্য বা আলঝাইমার ধরে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ; অনেক সময়ই এর পেছনে থাকে অটোইমিউন এনসেফালাইটিসের মতো রোগ। সঠিক সময়ে সঠিক পরীক্ষা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধে ভালো সাড়া পাওয়া যায়।

চিকিৎসায় এখন বায়োলজিক ড্রাগ ও টার্গেটেড ছোট অণু ওষুধ বিপ্লব ঘটিয়েছে। এসব ওষুধ ইমিউন সিস্টেমের নির্দিষ্ট পথকে লক্ষ্য করে কাজ করে, ফলে অনেক রোগী আবার কাজে ফিরতে, ভ্রমণ করতে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন। কিন্তু এর বিনিময়ে সংক্রমণ বা ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে—বয়সী রোগীর ক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে বিবেচ্য। তাই আধুনিক চিকিৎসা এখন শুধু “কোন ওষুধ দেব” সেই সিদ্ধান্ত নয়; বরং রোগীর সঙ্গে বসে ঝুঁকি–সুবিধার হিসাব বুঝিয়ে নেওয়া, ফলো-আপ পরিকল্পনা তৈরি করা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, পঞ্চাশ পার হওয়ার পর প্রতিটি ব্যথা বা ক্লান্তি মানেই অটোইমিউন রোগ নয়। তবে কয়েকটি সতর্কবার্তা গুরুত্ব দেওয়া উচিত—নতুন করে জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে চলা হালকা জ্বর, অকারণে ওজন কমে যাওয়া, অদ্ভুত দাগ বা র‌্যাশ, হঠাৎ স্মৃতিভ্রংশ বা আচরণগত পরিবর্তন। এমন কিছু দেখা দিলে সাধারণ চেকআপের পাশাপাশি প্রাথমিক রক্তপরীক্ষা করে প্রয়োজন হলে রিউমাটোলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট বা ইমিউনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো। জনসংখ্যা দ্রুত বার্ধক্যের দিকে এগোচ্ছে বলে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে এখনই আরও বেশি বিশেষজ্ঞ তৈরি ও দীর্ঘমেয়াদি অটোইমিউন কেয়ারের সুযোগ বাড়ানোর চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।