০৮:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

নেক্সপেরিয়া চিপ সংকটে আবার কাঁপছে বিশ্ব গাড়ি শিল্প

চীনের এক কারখানা, বিশ্বজুড়ে উৎপাদন ঝুঁকিতে

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দংগুয়ানে নেক্সপেরিয়ার একটি অপেক্ষাকৃত ছোট কারখানা হঠাৎ করেই বিশ্ব গাড়ি শিল্পের অন্যতম দুর্বল জায়গায় পরিণত হয়েছে। এখানকার সস্তা, পুরোনো প্রযুক্তির সেমিকন্ডাক্টরগুলো ব্যবহার হয় ব্রেক, জানালা, সেন্সরসহ নানা সাধারণ যন্ত্রাংশে। রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও নিয়ন্ত্রক ঝুঁকি বাড়তে থাকায় এ কারখানার সরবরাহ ব্যাহত হয়; ফলাফল—বিভিন্ন দেশে আবারও উৎপাদন কমানো, অতিরিক্ত শিফট বাতিল এবং শ্রমিকদের ছুটিতে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা বলে কয়েক মাস আগে নেদারল্যান্ডস সরকার বিশেষ আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করে নেক্সপেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সংস্থাটির প্রযুক্তি চীনা মালিকের মাধ্যমে অন্যত্র চলে যেতে পারে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং দংগুয়ান থেকে তৈরি চিপের রপ্তানি মন্থর বা স্থগিত করে। ২০২০–২১ সালের তীব্র চিপ সংকটের পর কোম্পানিগুলো যেভাবে “আর কখনো এমন হবে না” বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এই সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সেই আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছে।

প্রথম ধাক্কা লাগে জাপান ও ইউরোপের গাড়িনির্মাতাদের ওপর। নেক্সপেরিয়ার সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিসান ও হোন্ডার মতো ব্র্যান্ডকে কিছু কারখানায় শিফট কমাতে বা অস্থায়ীভাবে উৎপাদন বন্ধ করতে হয়। জার্মানির সিস্টেম সাপ্লায়াররা কর্মঘণ্টা কমানো ও ওভারটাইম নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়, কারণ গুদামে জমা চিপ দ্রুত শেষ হয়ে আসছিল। সমস্যাটা আরও জটিল হয় এই কারণে যে, এগুলো পুরোনো ধরনের চিপ; বিকল্প উৎপাদক কম, নতুন সরবরাহকারীকে মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সময়ও বেশি লাগে। কয়েক পয়সার একটি অংশের জন্য লাখ লাখ টাকার গাড়ি শোরুমে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়।

ঘটনাটি দেখিয়ে দিয়েছে, প্রযুক্তি যুদ্ধ এখন শুধু সর্বাধুনিক প্রসেসর নয়, সবচেয়ে সাধারণ সেমিকন্ডাক্টরকেও ঘিরে তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ কোটির পর কোটি ডলার ঢালছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপ কারখানায়; কিন্তু গাড়ি, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি বা শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কম শক্তির চিপের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা তুলনামূলকভাবে কম আলোচনায় এসেছে। বিশ্লেষকদের মতে, নেক্সপেরিয়া সংকট প্রমাণ করেছে—টেকসই শিল্পনীতি চাইলে পুরো ইকোসিস্টেমকে একসঙ্গে ভাবতে হবে।

গাড়ি শিল্পও এখন দ্রুত নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। শুধু কাগজে কলমে একাধিক সরবরাহকারী থাকার কথা বললেই ঝুঁকি কমে না, যদি তাদের বড় অংশ একই অঞ্চলে বা একই ভূরাজনৈতিক চাপের মধ্যে থাকে। তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বিকল্প ফাউন্ড্রির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কথা ভাবছে অনেক প্রতিষ্ঠান, যদিও সে ক্ষেত্রে দাম কিছুটা বাড়বে। একই সঙ্গে অনেক কোম্পানি আবার ‘জাস্ট ইন টাইম’ থেকে কিছুটা সরে এসে গুরুত্বপূর্ণ চিপের কৌশলগত মজুত গড়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এসব সিদ্ধান্ত কত দ্রুত বাস্তবে রূপ পায়, তার ওপরই নির্ভর করবে পরের ঝড় কতটা সামাল দিতে পারবে বৈশ্বিক গাড়ি খাত।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেটা কি সত্যিই একচেটিয়া শক্তি নয়?

নেক্সপেরিয়া চিপ সংকটে আবার কাঁপছে বিশ্ব গাড়ি শিল্প

০৬:৫৩:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

চীনের এক কারখানা, বিশ্বজুড়ে উৎপাদন ঝুঁকিতে

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দংগুয়ানে নেক্সপেরিয়ার একটি অপেক্ষাকৃত ছোট কারখানা হঠাৎ করেই বিশ্ব গাড়ি শিল্পের অন্যতম দুর্বল জায়গায় পরিণত হয়েছে। এখানকার সস্তা, পুরোনো প্রযুক্তির সেমিকন্ডাক্টরগুলো ব্যবহার হয় ব্রেক, জানালা, সেন্সরসহ নানা সাধারণ যন্ত্রাংশে। রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও নিয়ন্ত্রক ঝুঁকি বাড়তে থাকায় এ কারখানার সরবরাহ ব্যাহত হয়; ফলাফল—বিভিন্ন দেশে আবারও উৎপাদন কমানো, অতিরিক্ত শিফট বাতিল এবং শ্রমিকদের ছুটিতে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা বলে কয়েক মাস আগে নেদারল্যান্ডস সরকার বিশেষ আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করে নেক্সপেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সংস্থাটির প্রযুক্তি চীনা মালিকের মাধ্যমে অন্যত্র চলে যেতে পারে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং দংগুয়ান থেকে তৈরি চিপের রপ্তানি মন্থর বা স্থগিত করে। ২০২০–২১ সালের তীব্র চিপ সংকটের পর কোম্পানিগুলো যেভাবে “আর কখনো এমন হবে না” বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এই সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সেই আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছে।

প্রথম ধাক্কা লাগে জাপান ও ইউরোপের গাড়িনির্মাতাদের ওপর। নেক্সপেরিয়ার সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিসান ও হোন্ডার মতো ব্র্যান্ডকে কিছু কারখানায় শিফট কমাতে বা অস্থায়ীভাবে উৎপাদন বন্ধ করতে হয়। জার্মানির সিস্টেম সাপ্লায়াররা কর্মঘণ্টা কমানো ও ওভারটাইম নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়, কারণ গুদামে জমা চিপ দ্রুত শেষ হয়ে আসছিল। সমস্যাটা আরও জটিল হয় এই কারণে যে, এগুলো পুরোনো ধরনের চিপ; বিকল্প উৎপাদক কম, নতুন সরবরাহকারীকে মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সময়ও বেশি লাগে। কয়েক পয়সার একটি অংশের জন্য লাখ লাখ টাকার গাড়ি শোরুমে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়।

ঘটনাটি দেখিয়ে দিয়েছে, প্রযুক্তি যুদ্ধ এখন শুধু সর্বাধুনিক প্রসেসর নয়, সবচেয়ে সাধারণ সেমিকন্ডাক্টরকেও ঘিরে তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ কোটির পর কোটি ডলার ঢালছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপ কারখানায়; কিন্তু গাড়ি, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি বা শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কম শক্তির চিপের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা তুলনামূলকভাবে কম আলোচনায় এসেছে। বিশ্লেষকদের মতে, নেক্সপেরিয়া সংকট প্রমাণ করেছে—টেকসই শিল্পনীতি চাইলে পুরো ইকোসিস্টেমকে একসঙ্গে ভাবতে হবে।

গাড়ি শিল্পও এখন দ্রুত নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। শুধু কাগজে কলমে একাধিক সরবরাহকারী থাকার কথা বললেই ঝুঁকি কমে না, যদি তাদের বড় অংশ একই অঞ্চলে বা একই ভূরাজনৈতিক চাপের মধ্যে থাকে। তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বিকল্প ফাউন্ড্রির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কথা ভাবছে অনেক প্রতিষ্ঠান, যদিও সে ক্ষেত্রে দাম কিছুটা বাড়বে। একই সঙ্গে অনেক কোম্পানি আবার ‘জাস্ট ইন টাইম’ থেকে কিছুটা সরে এসে গুরুত্বপূর্ণ চিপের কৌশলগত মজুত গড়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এসব সিদ্ধান্ত কত দ্রুত বাস্তবে রূপ পায়, তার ওপরই নির্ভর করবে পরের ঝড় কতটা সামাল দিতে পারবে বৈশ্বিক গাড়ি খাত।