যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ইউক্রেন–রাশিয়া শান্তি পরিকল্পনাকে ঘিরে কিয়েভ ও পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। ইউক্রেন বলছে, পরিকল্পনাটি রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকে আছে এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বড় চাপ তৈরি করছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন—ওয়াশিংটনের প্রস্তাব এখনো তাঁর ‘শেষ কথা’ নয়।
পশ্চিমাদের উদ্বেগ ও ইউক্রেনের অবস্থান
চার বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র একটি ২৮ দফা নীলনকশা দিয়েছে। এতে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া, সেনাবাহিনী ছোট করা এবং ন্যাটোতে যোগদানের পথ বন্ধ রাখার মতো বিষয় রয়েছে—যা কিয়েভ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইউক্রেনের আলোচনাদল সুইজারল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জেলেনস্কি বলেন, পরিকল্পনাটি ইউক্রেনকে কঠিন সিদ্ধান্ত সামনে দাঁড় করিয়েছে—সার্বভৌমত্ব রক্ষা নাকি ওয়াশিংটনের সমর্থন ধরে রাখা।
ট্রাম্পের বক্তব্য
হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন,
“আমি শান্তি চাই। অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ হওয়ার কথা ছিল না। যেভাবেই হোক, যুদ্ধ থামাতে হবে।”
তিনি যোগ করেন, বর্তমান খসড়া তাঁকে ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ হিসেবে দেখানো হলেও সেটি এখনো শেষ সিদ্ধান্ত নয়।
মার্কিন পরিকল্পনায় মস্কোর দাবি প্রতিফলিত
পরিকল্পনায় রাশিয়ার পুরোনো দাবির প্রতিফলন স্পষ্ট হলেও ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা খুব কম। এ কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বেগ জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও জাপান যৌথ বিবৃতিতে জানায়—
- • বলপ্রয়োগে সীমান্ত পরিবর্তন করা যাবে না
- • ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সীমিত করার প্রস্তাব ভবিষ্যৎ হামলার ঝুঁকি বাড়ায়
- • ন্যাটো বা ইইউ–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত শুধুই সদস্য রাষ্ট্রদের সম্মতিক্রমে হওয়া উচিত
ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠক
জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের নেতারা ইউক্রেনকে সহায়তা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্জ বলেন, বড় শক্তিগুলো কোনো দেশের ওপর দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি টেনে দিতে পারে না; ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী নিশ্চয়তা জরুরি।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, মার্কিন পরিকল্পনা ইউরোপের স্বার্থ, বিশেষ করে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রভাব ফেলতে পারে—তাই আরও বিশদ আলোচনার প্রয়োজন।
রবিবার জেনেভায় ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেবেন জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইইউর দূতেরা।
ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিরা
মার্কিন পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকল এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা–পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৈঠকে অংশ নেবেন। ড্রিসকল ইতোমধ্যে পরিকল্পনার খসড়া কিয়েভকে উপস্থাপন করেছেন।
ইউরোপের অবিশ্বাস
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেন, রাশিয়া শান্তির কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। কয়েকদিন আগের এক হামলায় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে দুই ডজনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর অভিযোগ—রাশিয়া আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করে কৌশলগত সুবিধা নিতে চায়।
ম্যার্জ বলেন, “এই যুদ্ধ শেষ করার সুযোগ এখন রয়েছে, কিন্তু সবার জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধান থেকে আমরা এখনো দূরে।”
ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন পুনরায় বলেন, “ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়।”
জেলেনস্কির বার্তা: শান্তি মানে নিরাপত্তা
জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনের আলোচনাদল জাতীয় স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে এবং ভবিষ্যৎ আগ্রাসন রোধে যা দরকার সেটিই দাবি করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দ্রি ইয়েরমাক ও রুস্তেম উমেরভসহ নয়জন প্রতিনিধি আলোচনায় থাকবেন এবং প্রয়োজনে রাশিয়ার সঙ্গেও সরাসরি কথা বলার ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছে।
হোলোদোমর স্মরণে ইউক্রেনের প্রতিজ্ঞা
শনিবার ইউক্রেন হোলোদোমর স্মরণ দিবস পালন করেছে—১৯৩০-এর দশকে স্টালিনের নীতিতে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে লাখো মানুষ প্রাণ হারায়।
জেলেনস্কি বলেন,
“আমরা জানি কেন তখন মানুষ মরেছিল। আজও একই শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছি। আমরা রক্ষা করেছি, করছি এবং করব—এটাই আমাদের ঘর; এখানে রাশিয়া কখনোই প্রভু হতে পারবে না।”
#ট্রাম্প #ইউক্রেনযুদ্ধ #রাশিয়া #শান্তিপরিকল্পনা #জেলেনস্কি #মার্কিনরাজনীতি #ইউরোপ #আন্তর্জাতিকসংবাদ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















