০৫:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

ব্রাজিলে শেষ হলো কপ৩০, অর্থ প্রতিশ্রুতি বাড়ল কিন্তু জ্বালানি ইস্যু ঝুলে রইল

দুর্বল সমঝোতায় শেষ দুই সপ্তাহের টানা আলোচনাঃ সমালোচনার তীর

ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলন শেষ হলো এমন এক সমঝোতায়, যাকে অনেকে সীমিত সাফল্য এবং অনেকে সরাসরি দুর্বল আপস বলে বর্ণনা করছেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচনার মূল অর্জন হলো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য অভিযোজন খাতে বাড়তি অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার; সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, তাপপ্রবাহ ও ঘন ঘন ঝড়–বন্যার ধাক্কা সামলাতে এসব টাকার ব্যবহার হওয়ার কথা। অতীতের “লস অ্যান্ড ড্যামেজ” তহবিলের ওপর ভিত্তি করে এবার কিছু কাঠামো আরও স্পষ্ট করা হলেও, কত অর্থ কখন আসবে—সেই প্রশ্নের জবাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের বৈঠকের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। ফলে, ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো যেসব দৃঢ় ও বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি আশা করেছিল, তার অনেকটাই অপূর্ণ থেকে গেছে।

সবচেয়ে বেশি সমালোচনা এসেছে জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে। চুক্তিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়ানো এবং “অব্যাহত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো”র কথা বলা হয়েছে; কিন্তু তেল, গ্যাস ও কয়লা ধাপে ধাপে “সম্পূর্ণ পর্যায়সমাপ্তি”র মতো স্পষ্ট শব্দ সেখানে নেই। বড় তেল-গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলো যুক্তি দিয়েছে, দ্রুত ফসিল জ্বালানি ছেড়ে দিলে জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে, অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন—১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যে থাকতে হলে এ পথ ছাড়া উপায় নেই। সম্মেলনের মাঝপথে ভেন্যুতে ছোট একটি অগ্নিকাণ্ডও ঘটে, যা পরিবেশবাদীদের ভাষায়, অ্যামাজন বনাঞ্চল আর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চলমান বাস্তব ঝুঁকির প্রতীক হয়ে ওঠে।

আগামী জলবায়ু চক্রের জন্য কী বার্তা রেখে গেল বেলেম

সমালোচনা সত্ত্বেও বেলেমের এই সমঝোতায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো রাখা হয়েছে, যা আগামী কয়েক বছরের জলবায়ু নীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। বৈশ্বিক “স্টকটেক” বা যৌথ অগ্রগতি মূল্যায়ন পর্ব শেষ করে দলিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে যে বিশ্ব তীব্রভাবে লক্ষ্যচ্যুত; একই সঙ্গে সব দেশকে পরের সম্মেলনের আগেই নিজেদের জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে। অভিযোজন, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও জলবায়ু সহনশীল কৃষি নিয়ে নতুন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, যা ঠিকমতো অনুসৃত হলে কৃষি-নির্ভর এবং উপকূলীয় দুর্বল সমাজে তহবিল পাঠানোর পথে দিকনির্দেশনা দিতে পারে। সমর্থকদের দাবি, ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন আর যুদ্ধের মধ্যেও বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়াটি অন্তত সচল রয়েছে—এটিই এখন বড় বার্তা।

তবে সমালোচকেরা মনে করেন, সময়সূচি ও বাধ্যতামূলক লক্ষ্য না থাকলে সরকার ও কোম্পানিগুলো সহজেই নতুন তেল-গ্যাস প্রকল্প অনুমোদন করতে থাকবে, আর দূরের কোনো সবুজ লক্ষ্যকে সামনে ধরে নিজেদের অগ্রগতি দেখাবে। অনেক আর্থিক প্রতিশ্রুতিও স্বেচ্ছামূলক এবং দাতা দেশের বাজেট রাজনীতির ওপর নির্ভরশীল, ফলে বাস্তবে কতটা টাকা আদৌ আসবে তা অনিশ্চিত। তবু কপ৩০–এর শেষ মুহূর্তে দেখা গেছে, ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র থেকে শুরু করে কিছু বড় উদীয়মান অর্থনীতিও এখন সরাসরি ফসিল জ্বালানি নির্ভরতা কমানো ও ভবিষ্যতে পর্যায়সমাপ্তির কথা জোরালোভাবে তুলছে। শব্দচয়নে “ফেজ-আউট” না এলেও এই জোট ভবিষ্যৎ সম্মেলনগুলোর ওপর চাপ বাড়াবে—বিশেষ করে যখন আদালত, বিনিয়োগকারী ও ভোটাররা ক্রমশ বাস্তব নির্গমন কমার প্রমাণ দাবি করছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রাজিলে শেষ হলো কপ৩০, অর্থ প্রতিশ্রুতি বাড়ল কিন্তু জ্বালানি ইস্যু ঝুলে রইল

০৩:২৬:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

দুর্বল সমঝোতায় শেষ দুই সপ্তাহের টানা আলোচনাঃ সমালোচনার তীর

ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলন শেষ হলো এমন এক সমঝোতায়, যাকে অনেকে সীমিত সাফল্য এবং অনেকে সরাসরি দুর্বল আপস বলে বর্ণনা করছেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচনার মূল অর্জন হলো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য অভিযোজন খাতে বাড়তি অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার; সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, তাপপ্রবাহ ও ঘন ঘন ঝড়–বন্যার ধাক্কা সামলাতে এসব টাকার ব্যবহার হওয়ার কথা। অতীতের “লস অ্যান্ড ড্যামেজ” তহবিলের ওপর ভিত্তি করে এবার কিছু কাঠামো আরও স্পষ্ট করা হলেও, কত অর্থ কখন আসবে—সেই প্রশ্নের জবাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের বৈঠকের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। ফলে, ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো যেসব দৃঢ় ও বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি আশা করেছিল, তার অনেকটাই অপূর্ণ থেকে গেছে।

সবচেয়ে বেশি সমালোচনা এসেছে জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে। চুক্তিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাড়ানো এবং “অব্যাহত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো”র কথা বলা হয়েছে; কিন্তু তেল, গ্যাস ও কয়লা ধাপে ধাপে “সম্পূর্ণ পর্যায়সমাপ্তি”র মতো স্পষ্ট শব্দ সেখানে নেই। বড় তেল-গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলো যুক্তি দিয়েছে, দ্রুত ফসিল জ্বালানি ছেড়ে দিলে জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে, অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন—১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যে থাকতে হলে এ পথ ছাড়া উপায় নেই। সম্মেলনের মাঝপথে ভেন্যুতে ছোট একটি অগ্নিকাণ্ডও ঘটে, যা পরিবেশবাদীদের ভাষায়, অ্যামাজন বনাঞ্চল আর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চলমান বাস্তব ঝুঁকির প্রতীক হয়ে ওঠে।

আগামী জলবায়ু চক্রের জন্য কী বার্তা রেখে গেল বেলেম

সমালোচনা সত্ত্বেও বেলেমের এই সমঝোতায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো রাখা হয়েছে, যা আগামী কয়েক বছরের জলবায়ু নীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। বৈশ্বিক “স্টকটেক” বা যৌথ অগ্রগতি মূল্যায়ন পর্ব শেষ করে দলিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে যে বিশ্ব তীব্রভাবে লক্ষ্যচ্যুত; একই সঙ্গে সব দেশকে পরের সম্মেলনের আগেই নিজেদের জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে। অভিযোজন, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও জলবায়ু সহনশীল কৃষি নিয়ে নতুন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, যা ঠিকমতো অনুসৃত হলে কৃষি-নির্ভর এবং উপকূলীয় দুর্বল সমাজে তহবিল পাঠানোর পথে দিকনির্দেশনা দিতে পারে। সমর্থকদের দাবি, ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন আর যুদ্ধের মধ্যেও বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়াটি অন্তত সচল রয়েছে—এটিই এখন বড় বার্তা।

তবে সমালোচকেরা মনে করেন, সময়সূচি ও বাধ্যতামূলক লক্ষ্য না থাকলে সরকার ও কোম্পানিগুলো সহজেই নতুন তেল-গ্যাস প্রকল্প অনুমোদন করতে থাকবে, আর দূরের কোনো সবুজ লক্ষ্যকে সামনে ধরে নিজেদের অগ্রগতি দেখাবে। অনেক আর্থিক প্রতিশ্রুতিও স্বেচ্ছামূলক এবং দাতা দেশের বাজেট রাজনীতির ওপর নির্ভরশীল, ফলে বাস্তবে কতটা টাকা আদৌ আসবে তা অনিশ্চিত। তবু কপ৩০–এর শেষ মুহূর্তে দেখা গেছে, ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র থেকে শুরু করে কিছু বড় উদীয়মান অর্থনীতিও এখন সরাসরি ফসিল জ্বালানি নির্ভরতা কমানো ও ভবিষ্যতে পর্যায়সমাপ্তির কথা জোরালোভাবে তুলছে। শব্দচয়নে “ফেজ-আউট” না এলেও এই জোট ভবিষ্যৎ সম্মেলনগুলোর ওপর চাপ বাড়াবে—বিশেষ করে যখন আদালত, বিনিয়োগকারী ও ভোটাররা ক্রমশ বাস্তব নির্গমন কমার প্রমাণ দাবি করছে।