তিন বছরে প্রশিক্ষণ, কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট ও কো–প্রোডাকশনে বিনিয়োগ
এশিয়ার দ্রুত বদলে যাওয়া স্ক্রিন–অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করতে তিন বছর মেয়াদি ১৫৪ মিলিয়ন ডলারের বিশেষ তহবিল ঘোষণা করেছে সিঙ্গাপুর। দেশটির ইনফোকম মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (আইএমডিএ) এশিয়া টেলিভিশন ফোরামের এক সেশনে জানায়, এই অর্থ মূলত চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের লেখক, পরিচালক ও প্রযোজকদের গড়ে তোলার প্রশিক্ষণপথ, স্ক্রিপ্ট–ডেভেলপমেন্ট এবং আন্তর্জাতিক কো–প্রোডাকশন তৈরিতে ব্যয় করা হবে। লক্ষ্য হলো শুধু টেকনিক্যাল সার্ভিস বা লোকেশন–ভিত্তিক কাজ নয়, শুরু থেকেই সৃষ্টিশীল সিদ্ধান্ত–প্রক্রিয়ার ভেতরে স্থানীয় নির্মাতাদের যুক্ত করা। কর্তৃপক্ষের ভাষায়, এই উদ্যোগ সিঙ্গাপুরকে এমন এক প্ল্যাটফর্মে পরিণত করতে চায়, যেখান থেকে তৈরি গল্প একদিকে যেমন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে, অন্যদিকে বৈশ্বিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মেও জায়গা পাবে।

ঘোষিত প্যাকেজে দীর্ঘ ধারাবাহিক, হাই–এন্ড ডকুমেন্টারি ও বিভিন্ন জনরাভিত্তিক প্রজেক্টের জন্য আলাদা অনুদান থাকবে, যাতে স্থানীয় প্রযোজনা সংস্থাগুলো ঝুঁকি নিয়ে নতুন ফরম্যাট ও গল্প পরীক্ষা করতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় কোরিয়ানধাঁচের রিয়্যালিটি শো, স্থানীয় ভাষার ড্রামা ও নন–স্ক্রিপ্টেড ফরম্যাটে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে; সিঙ্গাপুরের নতুন তহবিল এসব প্রকল্পের সৃজনশীল নেতৃত্ব ও পোস্ট–প্রোডাকশন কাজ নিজের হাতে টেনে আনতে সাহায্য করতে পারে। একই সঙ্গে তরুণ নির্মাতা ও ক্রুদের জন্য কাঠামোবদ্ধ মেন্টরশিপ, সেট–ভিত্তিক প্লেসমেন্ট ও স্কিল–আপগ্রেড প্রোগ্রামের কথা বলা হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে “অভিজ্ঞতা না থাকলে বড় সেটে কাজের সুযোগ নেই” এই অভিযোগ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রতিযোগিতামূলক অঞ্চল, সুযোগ ও শঙ্কা
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় এখন ট্যাক্স রিবেট, লোকেশন সুবিধা ও কম খরচ নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে উৎপাদন আকর্ষণের প্রতিযোগিতা তীব্র। থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ভিন্ন ভিন্ন সময় বড় হলিউড বা আঞ্চলিক প্রজেক্ট হাতে পেয়েছে। তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল সিঙ্গাপুর এত দিন ভরসা করেছে স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো ও নিয়মকানুনের নিশ্চয়তার ওপর। নতুন এই প্যাকেজে সে বাজি ধরছে আরেক ধরণের শক্তির ওপর—উচ্চমানের গল্প–উন্নয়ন, শো–রানিং ও প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্টে স্থানীয় দক্ষতা গড়ে তোলা। প্রযোজকরা বলছেন, সিঙ্গাপুরে শক্তিশালী সৃজনশীল কেন্দ্র গড়ে উঠলে প্রাকৃতিকভাবেই বহু প্রজেক্টে প্রতিবেশী দেশগুলোর অভিনেতা, টেকনিক্যাল টিম ও লোকেশন যুক্ত হবে, যা পুরো অঞ্চলের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।

এ উদ্যোগকে বিশ্বব্যাপী প্ল্যাটফর্মগুলোর কনটেন্ট বৈচিত্র্য আনার চাহিদার সঙ্গেও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের পরিণত মার্কেটে বৃদ্ধির গতি কমে আসায় তারা এখন এশীয় দর্শকদের জন্য এমন কনটেন্ট খুঁজছে, যা আবার সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক বাজারেও বিক্রি করা যায়। ইংরেজিভাষী পরিবেশ, বহুভাষী স্কিল–বেস ও শক্তিশালী পোস্ট–প্রোডাকশন সুবিধার কারণে সিঙ্গাপুর এ পরীক্ষার জন্য স্বাভাবিক পছন্দ হয়ে উঠতে পারে। তবে তরুণ নির্মাতাদের উদ্বেগ, বড় তহবিলের একটা অংশ আগের মতোই প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেলে নতুন কণ্ঠ ও অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলোও লক্ষ্য রাখবে, প্রশিক্ষণ ও প্লেসমেন্ট প্রোগ্রাম যেন বাস্তবে ন্যায্য মজুরি ও দীর্ঘমেয়াদি কাজের সুযোগে রূপ নেয়। তারপরও ১৫৪ মিলিয়ন ডলারের সরকারি প্রতিশ্রুতি ইতিমধ্যেই প্রাইভেট বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ জাগিয়েছে; অনেকেই মনে করছেন, এতে সিঙ্গাপুরকে এশিয়ার কনটেন্ট মানচিত্রে উপেক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়বে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















