দিল্লি হাইকোর্ট বলেছে, প্রকাশিত তথ্য যদি সত্য ও যাচাইযোগ্য হয়, তবে সাংবাদিকের লেখার ভঙ্গি বা উপস্থাপনার ধরন যেমনই হোক, তাকে মানহানির দায়ে অভিযুক্ত করা যাবে না। রায়ে আদালত সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদনের গুরুত্ব আরও জোরালোভাবে উল্লেখ করেছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি নীনার বেঞ্চ গত ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করে। বিচারাধীন ছিল সাংবাদিক নীলাঞ্জনা ভৌমিকের দাখিল করা ২০২১ সালের আবেদন, যেখানে তিনি ২০১৪ সালে করা মানহানির মামলা এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জারিকৃত সমন বাতিলের আবেদন জানান। মামলাটি মূলত ২০১০ সালে টাইমস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তার একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়।

প্রতিবেদন নিয়ে অভিযোগ
২০১০ সালের ওই প্রতিবেদনে নীলাঞ্জনা ভৌমিক মানবাধিকারকর্মী রবি নাইর ও তার সংস্থার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের ইঙ্গিত দিয়েছেন—এমন অভিযোগ এনে নাইর ২০১৪ সালে মানহানির মামলা করেন। ২০১৮ সালে ট্রায়াল কোর্ট ভৌমিককে তলব করলেও অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এরপর ভৌমিক উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন।

সাংবাদিকের ব্যাখ্যা
ভৌমিক আদালতে জানান, তার প্রতিবেদনে কোনো মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করা হয়নি। সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়েছিল—এ তথ্য রবি নাইরও অস্বীকার করেননি। তাই প্রকাশিত বিষয়টি ছিল রেকর্ডভুক্ত এবং বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে।
নায়রের অবস্থান
রবি নাইর দাবি করেন, সাংবাদিক তাকে বা তার সংস্থাকে যোগাযোগ না করেই বিকৃত, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। তার অভিযোগ, প্রতিবেদনে এনজিওগুলোর জবাবদিহি না থাকা ও অনিয়মের প্রসঙ্গ তুলে তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

রায়ের ২৮ পৃষ্ঠার বিশদ অংশে হাইকোর্ট জানায়, প্রতিবেদনে তুলে ধরা তথ্যগুলো ছিল বাস্তবভিত্তিক, এবং কোথাও বলা হয়নি যে রবি নাইর ওই তদন্তে অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। আদালত বলে, তদন্ত বা অভিযোগজনিত অস্বস্তি মানহানির ভিত্তি হতে পারে না, যেহেতু প্রতিবেদনের কোনো অংশ ভুল ছিল না।
লেখনশৈলী নিয়ে আদালতের মন্তব্য
আদালত উল্লেখ করে, সাংবাদিক কোন ভঙ্গিতে তথ্য উপস্থাপন করবেন, তা লেখনশৈলীর অংশ—এটি মানহানির পর্যায়ে আসে না। বিচারপতি নীনার পর্যবেক্ষণ, কোনো মন্তব্য বা ইঙ্গিত কারও কাছে অস্বস্তিকর মনে হলেও তা অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা মানহানির মামলা করার মতো যথেষ্ট নয়।
রায়ের সারমর্ম
আদালত শেষ পর্যন্ত মানহানির মামলা বাতিল করে জানায়, প্রতিবেদনের তথ্য সঠিক হলে সাংবাদিককে দায়ী করা যায় না এবং লেখার টোন বা শৈলীকে মানহানির ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।
# আদালত #মানহানি# সাংবাদিকতা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















